অরূপকুমার পাল, ঝাড়গ্রাম
মুরগির মাংসে মশলা ও তেল মাখিয়ে শালপাতায় মুড়ে পোড়ানো হচ্ছে কাঠের জ্বালে। আবার কচি বাঁশের ভিতর সর্ষের তেল, মশলা মাখিয়ে মাংস ভরে সেই বাঁশ পুড়িয়ে তার মুখ খুলে পর্যটকদের পাতে পরিবেশন করা হচ্ছে। যার নাম দেওয়া হয়েছে বাঁশ পোড়া মাংস।
ঝাড়গ্রাম জেলার বেলপাহাড়ি ব্লকের ঘাঘরা জলপ্রপাতের কাছে বেড়াতে গিয়ে পর্যটকরা সেই বাঁশ পোড়া মাংসের স্বাদ না নিয়ে ফিরতে চাইছেন না। শীতের মরশুমে আদিবাসীদের এমন সব রান্না খেয়ে মন মজেছিল পর্যটকদের। কিন্তু গরম পড়লেও সেই বাঁশ পোড়া মাংসের চাহিদা এতটুকু কমেনি। জঙ্গলে বসে কখনও শালপাতা পোড়া মুরগি আবার কখনও বাঁশ পোড়া মুরগি পাত পেড়ে খাচ্ছেন।
ঝাড়গ্রাম পর্যটকদের বেশ ভালো লাগার জায়গা। শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা সবসময়ে পর্যটকরা উইকেন্ডে এখানে বেড়াতে যান। তার সঙ্গে এই ধরনের খাবার মন জয় করেছে পর্যটকদের। এর জেরে রোজগার হচ্ছে এই জেলার প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষজনের। বিক্রেতারা জানান, জঙ্গলমহলের ট্র্যাডিশন্যাল খাবার হলো শাল চিকেন ও বাম্বু চিকেন। সেই খাবারের সঙ্গে এখন বিক্রি হচ্ছে ‘বাঁশ বিরিয়ানিও।’
এমন অনেক খাবারের পসরা সাজিয়ে বসেছেন সেখানকার আদিবাসী মানুষজন। তাঁদের হাতের এ সব রান্না ও জঙ্গল, ডাকছে পর্যটকদের। ঘাঘরা ঢোকার মুখে শুকলাল মাণ্ডি, আহ্লাদি মাণ্ডিরা তৈরি করছেন মুখরোচক এই সব খাবার।
শুকলাল বলেন, ‘দেশি মুরগিকে তেল মশলা মাখিয়ে কাঁচা শালপাতায় বেঁধে কাঠের জ্বালে পোড়ানো হয়। রান্না হয়ে গেলে তা ওই শালপাতা থেকে বের করে ফের পরিষ্কার শালপাতায় পরিবেশন করা হয়। এই খাবারটিই এখানে শাল চিকেন বলে বিখ্যাত। আবার একই ভাবে মশালা মাখিয়ে কচি বাঁশে চিকেন দিয়ে পোড়ালে তাকে বাম্বু চিকেন বলে। তবে দুই রান্নার স্বাদ ভিন্ন। খেতেও সুস্বাদু।’
আহ্লাদি বলেন, ‘এখন বাম্বু বিরিয়ানিও তৈরি করছি। তার চাহিদাও বেশ ভালো। তবে এই রান্না করতে একটু সতর্ক থাকতে হয়। কারণ আঁচের হেরফেরের জন্য রান্না খারাপ হয়ে যেতে পারে।’ এর সঙ্গে তৈরি করা হচ্ছে মাংস পিঠেও। তাও মানুষ আনন্দ করে খাচ্ছেন। পর্যটকরা জানান, বাড়িতে ভিন্ন রকমের রান্না করে খেলেও এই রান্নার স্বাদই আলাদা। শাল চিকেন ১০০ টাকা আর বাম্বু চিকেন ৫৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মাংস পিঠের দাম ৮০ থেকে ১০০ টাকার মধ্যে।
কলকাতার সোদপুর থেকে ঝাড়গ্রামে এসেছিলেন সুনীল ভট্টাচার্য, সোনারপুর থেকে সুভাষ মণ্ডল। সুনীল বলেন, ‘শাল চিকেন এখানে বিখ্যাত। বাম্বু চিকেনও খেলাম। এ স্বাদের তুলনা নেই। আগে কোনও দিন এমন রান্না খাইনি।’ একই বক্তব্য সুভাষেরও। আর এ সব খাবার বিক্রি করে মুখে হাসি ফুটেছে দোকানিদের। হাতে দুটো টাকা আসছে। আর পর্যটকদের কাছ থেকে প্রশংসা পেয়ে ভালোই লাগছে আহ্লাদিদের। পর্যটকদের আনন্দ দিতে এই সব রান্না বারো মাসই মিলছে এখন ঝাড়গ্রামে।