সঞ্জয় চক্রবর্তী, শিলিগুড়ি
ফ্রোজেন মোমোর ব্যবসায় নেমে গোটা উত্তর পূর্বাঞ্চল কাঁপাচ্ছেন শিলিগুড়ির এক যুবক। এখন তাঁর ব্যবসা দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই, বিদেশেও ছড়িয়ে পড়েছে। মোমো সাধারণত বানানোর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে খেয়ে নিতে হয়। না-হলে সেই খাবারের স্বাদ নষ্ট হওয়ার চেয়ে বড় কথা হচ্ছে, ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ হয়ে যেতে পারে।
কিন্তু সেই মোমো যদি ফ্রোজেন হয় তাহলে দীর্ঘদিন ঘরে রেখে খাওয়া যেতে পারে। শিলিগুড়ির যুবক দেবায়ন বিশ্বাস ওই ফ্রোজেন মোমো তৈরি করে বাজার ধরেছেন। তার কারখানায় প্রতিদিন গড়ে আট টন মোমো তৈরি হচ্ছে। তৈরির পরেই সেই মোমো ব্লাস্ট ফ্রিজিং টেকনোলজি়র সাহায্যে ফ্রোজেন করা হচ্ছে।
তার পরে ছড়িয়ে পড়ছে উত্তর পূর্বাঞ্চল জুড়ে। মোট ৪৫ জন কর্মী মোমো তৈরি, ফ্রোজেন করা এবং উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলিতে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। ২০২৩-২৪ সালে তিনি ব্যবসা করছেন ৩ কোটি টাকা। এ বছরের হিসাব এখনও চূড়ান্ত হয়নি। তবে ব্যবসা যে বেড়েছে সেটা নিশ্চিত। কেননা, উত্তর পূর্বাঞ্চল ছেড়ে মোমো যাচ্ছে এখন ভুটানেও। আলোচনা চলছে দুবাইয়ের একটি নামী সংস্থার সঙ্গে।
মোমোও যে কত রকমের হতে পারে সেটা দেবায়নের কারখানা না-দেখলে মালুম করা কঠিন। ভেজ, চিকেন, পনির মোমো তো রয়েইছে, তার সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হয়েছে সিঙারা মোমো, রোল মোমো। সবই ময়দা দিয়ে তৈরি। ভিতরে চিকেন, পনির, সব্জির পুর। কিন্তু আজিনা মোটো নেই। নেই কোনও কেমিক্যাল। নেই প্রিজ়ারভেটিভ।
আবার তিব্বতি মোমোর মতো ইস্টও মেশানো নেই। নেপালের নেওয়ারি মোমোর মতো মশলা মেশানো নেই। ফলে দেবায়নের সংস্থার মোমোর জনপ্রিয়তা দিন দিন যেমন বেড়েছে তেমনই বিশুদ্ধতার প্রশ্নে আইএসও শংসাপত্র পেতেও সময় লাগেনি। তবে এখানেই থামতে চান না দেবায়ন।
তাঁর মোমো এ বার যাতে অনলাইন শপিংয়েও মেলে তার জন্যও প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কোনও জনপ্রিয় অনলাইন শপিং প্ল্যাটফর্মে যাতে সার্চ করলেই ফ্রোজেন মোমো মেলে সেই প্রস্তুতি চলছে। শহরের বাইরে ভক্তিনগর থানার ফাঁপড়ি এলাকায় কারখানা, কর্মচারীদের থাকার জায়গা করেছেন তিনি।
দেবায়নের ব্যবসার শুরুটাও কিন্তু ছিল চমৎকার। শিলিগুড়িতে দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে ‘মোমো অন হুইলস’। ছেলেমেয়েরা ভ্যানে চাপিয়ে মোমো বিক্রি করত শহরের নানা প্রান্তে। ফ্রোজ়েন মোমো শুরুর পরে মোমোর ব্যবসা ছড়িয়ে পড়ে ব্যাঙ্কক থেকে হংকং। মাঝে বাধা হয়ে দাঁড়ায় করোনা।
এখন আবার নতুন করে সব শুরু করতে হয়েছে। তবে দেবায়নের সমস্যা অন্য জায়গায়। তাঁর মতে, ‘চাকরি কিংবা ট্রেডিংয়ের জন্য সরকারি স্তরে যতটা পরামর্শ এবং সাহায্য মেলে, উৎপাদন নির্ভর ব্যবসায় উদ্যোগীদের ক্ষেত্রে সেটা এখনও তৈরি হয়নি। অথচ একজন উদ্যোগীকে উৎপাদন থেকে মার্কেটিং, প্যাকেজিং, কর্মী প্রশিক্ষণ, সবেতেই দক্ষ হতে হয়।’