• 'নিজেকে সমাজের যোগ্য করে তুলবই', জীবনযুদ্ধে জিততে ট্রাই-সাইকেলকে সঙ্গী করে লড়াই কুশলের...
    আজকাল | ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: সমাজের লাঞ্ছনা, অবহেলা সয়ে নিয়ে দিনচলা। শারীরিক বাধা অতিক্রম করেও কিছু করে দেখানোর তাগিদ। উত্তর ২৪ পরগনার গোবরডাঙা থানার পেয়ারাতলার বাসিন্দা কুশল মণ্ডলের সমাজের প্রতি বার্তা, 'নিজেকে তোমার যোগ্য প্রমাণ করেই ফিরব'। 

    মাত্র ২৪ বছর বয়সী কুশলের জীবনের আট বছর কেটেছে বন্দি দশাতেই। ১৫ বছর বয়স থেকে তিলে তিলে নিজেকে শেষ হতে দেখেছেন। সুস্থ স্বাভাবিক যুবকের সঙ্গী হয়েছে ট্রাই-সাইকেল। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ছোট থেকে আর পাঁচটি তরুণের মতো স্বাভাবিক ছিলেন কুশল। ১৫ বছর বয়সে বন্ধুদের সঙ্গে ফুটবল খেলতে গিয়ে কোমরে চোট পান। পরিবারে সদস্যরা বিভিন্ন জায়গায় তাঁর চিকিৎসা করালেও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। টানা আট বছর চিকিৎসার জন্য কখনও হাসপাতালে বা কখনও ঘরবন্দি অবস্থায় তাঁর দিন কেটেছে। একাধিক বার পায়ে অস্ত্রপ্রচার হয়েছে। তারপরেও খুব একটা লাভ হয়নি। কুশল এখন ১০০ শতাংশ বিশেষভাবে সক্ষম। ট্রাই-সাইকেল নিয়ে চলাফেরা করতে হয়। বন্দিজীবন থেকে মুক্তি পেতে এবং মানুষের সঙ্গে মিশতে অনলাইন ডেলিভারি সংস্থায় কাজ নিয়েছেন কুশল। 

    তিনি জানিয়েছেন, মাধ্যমিক পরীক্ষার পর খেলতে গিয়ে দুর্ঘটনায় চোট লাগে। বেশ কয়েক বছর হাসপাতালে ভর্তি থাকতে হয়েছে তাঁকে। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় যখন পাশ করেন, তখনও চিকিৎসা চলছে। আর্থিক অনটনের জন্য উচ্চমাধ্যমিকের পর আর পড়াশোনা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেননি। নিজের হাতখরচ চালাতে কয়েকটি ছাত্রছাত্রীকে পড়াতে শুরু করেন। তিনি বলেন, ''টিউশন পড়ানোর সারাক্ষণ ঘরে বন্দি থাকার ফলে দিন দিন মানসিকভাবে ভেঙে পড়ছিলাম। ওষুধ কেনার টাকাও হচ্ছিল না। নিজেকে মানসিকভাবে সুস্থ রাখতে এবং বাড়তি টাকার আয়ের জন্য বাইরে ঘুরে কাজ করার মত একটি কাজ খুঁজছিলাম।"

    কুশল বাড়ির বড় ছেলে। বাবা দিনমজুরের কাজ করেন, মা গৃহবধূ। সংসারে হাল ধরতে ছোট ভাই একটি অনলাইন ডেলিভারি সংস্থায় কাজ শুরু করেন। তাঁর হাত ধরেই নয় মাস আগে টিউশন পড়ানো ছেড়ে অনলাইন ডেলিভারি সংস্থায় কাজ শুরু করেছিলেন কুশল। 

    তিনি বলেন, ''প্রথম দিকে কাজ করতে কিছুটা অসুবিধা হচ্ছিল। পরিবার ও সহকর্মীরা সব সময় তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছে।'' কুশল আরও জানিয়েছেন, কর্মক্ষেত্রের অসুবিধা তিনি দ্রুত কাটিয়ে উঠেছেন। প্রথমে ১০টি করে পার্সেল ডেলিভারি করতেন। এখন ৫০-৬০টি পার্সেল ডেলিভারি করেন। সেখান থেকে যে টাকা তাঁর উপার্জন হয় সেই টাকায় তাঁর নিজের খরচ ও ওষুধ কেনার টাকা হয়ে যায়। তাঁর ইচ্ছে এই কাজ করেই টাকা জমিয়ে ট্রাই-সাইকেল নিয়ে গোটা ভারত ঘুরে দেখবেন।  

    কুশলের বাবা কর্ণধার মণ্ডল বলেন, "কাজের জন্য পরিবারের তরফ থেকে ছেলেকে কোনও চাপ দেওয়া হয়নি। কিন্তু ও বিশেষভাবে সক্ষম হয়ে ঘরে বসে থাকতে চায় না। নিজে কিছু করে দেখাতে চায়, সেই কারণে কাজে ঢুকেছে। সেখান থেকে যে টাকা আয় করে সেই টাকা ও নিজের কাছে রেখে দেয়। নিজের ওষুধ কেনার পাশাপাশি যারা বিশেষভাবে সক্ষম তাঁদেরও সাহায্য করে।"

    জীবন যুদ্ধে হেরে যাননি কুশল। প্রতি মুহূর্তে কঠিন লড়াইকে চ্যালেঞ্জ করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছেন। নিজেকে সমাজের যোগ্য গড়ে তুলতে ১০০ শতাংশ বিশেষভাবে সক্ষম হয়েও ট্রাই-সাইকেলে করে অনলাইন ডেলিভারি সংস্থার হয়ে কাজ করছেন। তাঁর এই অদম্য ইচ্ছেশক্তিকে কুর্নিশ জানাচ্ছেন সকলে। 
  • Link to this news (আজকাল)