‘বাইরে থেকে ছেলেরা আসত, নিশিযাপন করত’, ফাল্গুনী–আরতির সম্পর্ক বলছেন কাউন্সিলর
হিন্দুস্তান টাইমস | ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
কলকাতা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছে দুই মহিলা। আর এখন তাদের চলছে দফায় দফায় জেরা। কিন্তু এই দুই মহিলার অপরাধ কী? কেন আটক করা হয়েছে? এইসব প্রশ্নের উত্তরে হাড়হিম হয়ে যাওয়ার অবস্থা তদন্তকারীদের। কারণ নীলরঙের ট্রলি ব্যাগে করে দেহ গঙ্গায় ভাসাতে নিয়ে এসেছিল তারা। যে ঘটনা নিয়ে সরগরম হয়ে ওঠে শহর কলকাতার কুমোরটুলি ঘাট চত্বর। এই দুই মহিলার চালচলন দেখে সন্দেহ হয় স্থানীয় বাসিন্দাদের। তাঁরা এই দু’জনকে চেপে ধরতেই ট্রলি ব্যাগ থেকে বেরিয়ে আসে দেহ। এই দুই মহিলার নাম ফাল্গুনী ঘোষ এবং আরতি ঘোষ। ফাল্গুনী সম্পর্কে আরতির মেয়ে। এদের বাড়ির ঠিকানা মধ্যমগ্রাম থানার অন্তর্গত মধ্যমগ্রাম পৌরসভার ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের বিরেশপল্লী। সেখানেই একটি বাড়িতে ভাড়া নিয়ে প্রায় আড়াই বছর ধরে থাকছিল ফাল্গুনী এবং আরতি।
স্থানীয় সূত্রে খবর, হামেশাই রাতের অন্ধকারে অচেনা পুরুষদের আসতে দেখা যেত ওই ঘরে। পাড়া–প্রতিবেশীর সঙ্গেও ফাল্গুনী–আরতির সম্পর্ক খুব একটা ছিল না। আর যেটুকু ছিল তাও খুব খারাপ। কারণ পাড়ার লোকজন এই বিষয়টি নজর করে প্রতিবাদ করেছিল। আর তাই তাদের সঙ্গে প্রতিবেশীদের সম্পর্ক ভাল ছিল না। এবার ধরা পড়ার পর ট্রলি ব্যাগে কুকুরের দেহ আছে বলে কুমোরটুলি ঘাটে চালাতে চেয়েছিল তারা। কিন্তু শেষমেশ ধরা পড়েই যায়। স্থানীয় বাসিন্দারা চাপ দিতেই মহিলার দেহ বেরিয়ে পড়ে। আর পুলিশ সূত্রে খবর, জিজ্ঞাসাবাদে ফাল্গুনী এবং আরতি স্বীকার করেছে যে, দেহটি এক মহিলার। আর ওই দেহটি আসলে সুমিতা ঘোষ নামের এক বৃদ্ধার। সম্পর্কে সুমিতা ফাল্গুনীর পিসিশাশুড়ি। এই বিষয়ে স্থানীয় কাউন্সিলর বলেন, ‘এখানে মা আর মেয়ে থাকত। বাইরে থেকে পুরুষ মানুষ আসত। তাদের সঙ্গে নিশিযাপন করত। বাকিটা আমি বলছি না। বাড়িওয়ালা এখানে থাকে না। কলকাতায় থাকে। আগে অ্যাকশন নেওয়া হয়েছিল। আর বাড়িওয়ালার সঙ্গে হট–টক হয়েছিল। এখন সংবাদমাধ্যমে দেখে অবাক হচ্ছি।’
এই গটনা সামনে আসতেই ফাল্গুনী–আরতির প্রতিবেশীদের দাবি, শেষ কয়েকদিন আগে এক মহিলাকে ওই বাড়িতে রাতে আসতে দেখা যায়। তাকে দেখে এলাকার কুকুর চেঁচালে আর এক প্রতিবেশী সেই বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দিতে সহায়তা করেন। তারপর থেকে কেউই জানেন না কেমন করে এই ঘটনা ঘটল। আজ মঙ্গলবার সকালে পুলিশ দেখে তাজ্জব হয়ে যান এলাকাবাসী। এটি খুনের ঘটনা কিনা সেটি খতিয়ে দেখছে পুলিশ। খুন কি মধ্যমগ্রামেই হয়েছিল? উত্তর খুঁজছে পুলিশ। তবে সূত্রের খবর, ওই দুই মহিলা এখনও ভেঙে পড়েনি। পুলিশের নানা প্রশ্নের উত্তর দিয়ে চলেছে। তবে সেসব কতটা সত্যি সেটা ক্রসচেক করা হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দা শঙ্করী সরকারের বক্তব্য, ‘বাইরে থেকে ছেলেরা আসত। আমরা প্রতিবাদ করেছিলাম। কেউ কর্ণপাত করেনি। পরশুদিন একজন বৃদ্ধা এসেছিলেন। তিনি যেতে পারছিলেন না বলে আমি সাহায্য করি। কুকুররা চেঁচাচ্ছিল। তাতে ভয় পেয়ে যান ওই বৃদ্ধা। তাঁকে মারা হয়েছে কিনা জানি না।’
এছাড়া ফাল্গুনী–আরতির কাছ থেকে শিয়ালদা–হাসনাবাদ লাইনের কাজীপাড়া স্টেশনের টিকিট পাওয়া গিয়েছে। মঙ্গলবার এই টিকিট কাটা হয়েছিল। ওখান থেকেই মা–মেয়ে কলকাতায় এসেছিল বলে মনে করা হচ্ছে। তার পর হলুদ ট্যাক্সি ধরে প্রথমে প্রিন্সেপ ঘাটে তারা যায়। সেখানে বিশেষ সুবিধা না হওয়ায় তারা চলে যায় কুমোরটুলি ঘাটে। আর সেখানে খুঁজতে থাকে ফাঁকা জায়গা। আর সেটা দেখেই স্থানীয় বাসিন্দাদের সন্দেহ হয়। ঘাটের কাছেই একটি ঝোপে মৃতদেহ ভরা ট্রলি ব্যাগটি ফেলার তোড়জোড় করতেই ঘিরে ফেলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। আর খবর দেয় পুলিশকে। পুলিশ দু’জনকে আটক করে নিয়ে যায়। প্রতিবেশী ঋতুপর্ণা ঘোষের কথায়, ‘এনারা দু’বছর ধরে থাকতেন। কারও সঙ্গে মিশতেন না। ২০২৩ সালের দুর্গাপুজোর রাতে বাইরে থেকে ছেলেরা আসে। তখন ওই বাড়ি থেকে হই–হুল্লোর শুনতে পাওয়া গিয়েছিল। আমরা কাউন্সিলরকে জানিয়েছিলাম। আমরা মেশার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু তাতে সাড়া মেলেনি। আমরা পাড়া থেকে জয়েন্ট পিটিশন দিয়েছিলাম। যাতে তুলে দেওয়া হয়। প্রায়ই বাইরে থেকে ছেলেরা আসত দেখেছি।’