পানাগড়ে দুর্ঘটনার রাতে বাবলু যাদবই ছিলেন বিতর্কিত সাদা গাড়িটির চালকের আসনে। মঙ্গলবার এমনটাই জানালেন আসানসোল-দুর্গাপুর কমিশনারেটের এসিপি (কাঁকসা) সুমন জয়সওয়াল। এ দিন বাবলু যাদবের বাড়িতে গিয়েও তাঁর খোঁজ পায়নি পুলিশ। বয়ান রেকর্ড করা হয় পরিবারের লোকজনের। দুর্ঘটনার পর বাবলু বাড়ি এসেছিলেন কি না, কখন বাড়ি থেকে বেরোন, জবাব খুঁজতে যায় পুলিশ।
বাবলুর বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসিপি (কাঁকসা) সুমন জয়সওয়াল বলেন, ‘বাবলু গাড়ি চালাচ্ছিল। আমরা খুব শিগগিরি বাবলুকে ধরতে পারব। তবে যে ভাবে আপনারা (সংবাদমাধ্যম) দেখাচ্ছেন, তাতে আমরা কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছি না।’
যদিও এ দিন বাবলু যাদবের ‘যাদব ট্রেডার্স’-এর কর্মচারি জিয়া লাল দাবি করেন, বাবলু যাদব তিন দিন ধরে বাড়িতে নেই। যদিও ওই সাদা গাড়ি নিয়ে ৪-৫ জন কর্মচারি গিয়েছিলেন। সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ বেরিয়েছিলেন তাঁরা।
পানাগড় বাজারে বাবলু যাদবের যাদব ট্রেডার্স। এখানেই তাঁর বাস, এখানেই ব্যবসা। স্থানীয় সূত্রে খবর, উত্তরপ্রদেশের ছেলে বাবলু বছর দশেক আগে পানাগড়ে আসেন। লোহার যন্ত্রাংশ কেনাবেচা দিয়ে শুরু, পরে ধীরে ধীরে তাঁর ব্যবসার বহর বাড়তে থাকে। কাবারি মার্কেটে এখন তাঁর রমরমা ব্যবসা। এখন সেই বাবলুকে খুঁজছে পুলিশ।
প্রসঙ্গত, গত রবিবার গভীর রাতে হুগলির চন্দননগর থেকে গয়ায় যাচ্ছিলেন ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কর্মী সুতন্দ্রা চট্টোপাধ্যায়। তাঁর সঙ্গে গাড়িতে চালক-সহ আরও তিন জন ছিলেন। বুদবুদের আগে জাতীয় সড়কের ধারে একটি পেট্রোল পাম্পে তাঁরা গাড়িতে তেল ভরার পর জাতীয় সড়ক ধরে আসানসোলের দিকে যাওয়ার সময় রাইস মিল রোডে গাড়িটি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। সেই দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় সুতন্দ্রার।
এই ঘটনার নেপথ্যে প্রথমে সুতন্দ্রার সহযাত্রীরা ইভটিজ়িংয়ের কথা বলেছিলেন। যদিও সোমবার বিকালে আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশের কমিশনার সুনীলকুমার চৌধুরী ইভটিজ়িং তত্ত্ব উড়িয়ে গাড়ির রেষারেষির কারণে এই ঘটনা বলে জানান। এমনকী সংবাদমাধ্যমে সুতন্দ্রার গাড়ির চালক, সহযাত্রীরা প্রথমে সাংঘাতিক অভিজ্ঞতার কথা বললেও, অভিযোগপত্রে গাড়ির ধাওয়া করার বিষয়টিই উল্লেখ করেন।
অন্যদিকে সুতন্দ্রার মা মঙ্গলবার সকালেও বলেছিলেন, পুলিশ কী বলছে, তা পুলিশের ব্যাপার। তাঁর মেয়ে ইভটিজ়িংয়ের শিকার হয়েছিলেন। রাজ্যে নারী-নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন। কিন্তু বিকাল থেকে সুতন্দ্রার মা তনুশ্রী চট্টোপাধ্যায়ের গলার সুর অনেকটাই নরম।
যিনি দুর্ঘটনার রাতে সুতন্দ্রার গাড়ি চালাচ্ছিলেন, সেই রাজদেও এবং এক সহযাত্রী এ দিন তনুশ্রীর সঙ্গে দেখা করেন। যদিও চন্দননগরের বাড়ি থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের কোনও প্রশ্নের জবাব দিতে চাননি। বলেন, যা বলার পুলিশকেই বলেছেন। অন্যদিকে সুতন্দ্রার মা-ও বিকালে সুর নরম করে জানান, ‘এখনও পর্যন্ত পুলিশের উপর আস্থা রেখে চলছি। তারপর দেখা যাক।’
এ দিন সন্ধ্যায় সুতন্দ্রাদের বাড়িতে যান চন্দননগর পুলিশের ডিসিপি অলকানন্দা ভাওয়াল, এসিপি সুমন বন্দ্যোপাধ্যায়, চন্দননগর থানার আইসি শুভেন্দু মুখোপাধ্যায়। পরিবারের সঙ্গে বেশ কিছুক্ষণ কথাও বলেন।