• সিপিএম ৪.৫, প্রাক্তনী ১২! ‘ভিআইপি’ তালিকায় আলিমুদ্দিনকে হারাতে দলছুটেরাই যথেষ্ট!
    আনন্দবাজার | ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • রাজ্য সম্মেলনের দলিল-দস্তাবেজে নানা ‘ওজনদার’ রাজনৈতিক প্রস্তাব। তাতে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ধরাশায়ী করার দিশানির্দেশ। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে প্রশাসনিক গুরুত্বের মাপকাঠিতে সিপিএম আপাতত নিজের দলের প্রাক্তনীদের চেয়েও পিছিয়ে। রাজ্য সম্মেলনের পার্কিং লটে কোনও ‘লালবাতি’ নেই। নীলবাতির গাড়ি মাত্র একটি। আর পুলিশ-প্রশাসনের চোখে ভিআইপি মোট ‘সাড়ে চার’। দল ছেড়ে যাঁরা বেরিয়ে গিয়েছিলেন, শুধু তাঁদের সংখ্যা যোগ করলেই এখন সিপিএমের ভিআইপি-তালিকার প্রায় তিনগুণ!

    ক্ষমতাসীন সিপিএমের সম্মেলন ছিল এলাহি কাণ্ড। জেলা সম্মেলনেও চারিদিকে লালবাতির ছড়াছড়ি। সে হেন সিপিএমের রাজ্য সম্মেলনে এ বার ভিআইপি ‘সাড়ে চার’ জন। তাঁদের মধ্যেও তিন জনই ভিন্‌রাজ্যের।

    ডানকুনিতে সিপিএমের রাজ্য সম্মেলন শুরু হয়েছিল গত শনিবার শেষ হল মঙ্গলবার। চার দিনের সম্মেলনে পুলিশ-প্রশাসন চার জনকে ‘ভিআইপি’ হিসাবে দেখেছে। এক জনকে ধরা হচ্ছে ‘অর্ধেক’ ভিআইপি। ত্রিপুরার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার, বিমান বসু, প্রকাশ কারাট এবং বৃন্দা কারাটের নিরাপত্তাকে পুলিশ নির্দিষ্ট ভাবে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। আর ‘হাফ ভিআইপি’ সিপিএমের যুবনেত্রী মিনাক্ষী মুখোপাধ্যায়।

    ঘটনাচক্রে, সিপিএমের যে সব নেতা দল ছেড়ে তৃণমূল বা বিজেপিতে নাম লিখিয়েছেন, তাঁদের মিলিত ‘ভিআইপি মর্যাদা অন্তত তিন গুণ।

    বাম জমানায় ‘উত্তরবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী’ বলে খ্যাত অশোক ভট্টাচার্যের ‘রাজনৈতিক শিষ্য’ শঙ্কর ঘোষ এখন বিধানসভায় বিরোধী দলের মুখ্য সচেতক। তাঁর কথায়, ‘‘লালবাতি-নীলবাতির গাড়ি থাকল কি না, তা নিয়ে আনন্দিত হওয়া বা না-হওয়ার কিছু নেই। কিন্তু যে কথা বলে সিপিএম ছেড়েছিলাম, সেই কথাটা প্রমাণিত হওয়ায় নিশ্চয়ই আনন্দ পেয়েছি।’’ শঙ্করের বক্তব্য, ফেজ টুপি পরা ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ আর গেরুয়া বসন ‘সাম্প্রদায়িক’, সিপিএমের সেই নীতির বিরুদ্ধে তাঁর প্রতিবাদ ছিল। আইএসএফের মতো একটি ‘আইডেন্টিটি পলিটিক্স’ করা দলের সঙ্গে সিপিএম কী ভাবে জোট গড়তে পারে, তা নিয়ে প্রশ্ন ছিল। অধুনা বিজেপি বিধায়কের কথায়, ‘‘সিপিএমকে মানুষ যে ছুড়ে ফেলেছে, তার প্রমাণ হল এই সাড়ে চার জন ভিআইপি।’’ বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সরকারের পঞ্চায়েত প্রতিমন্ত্রী বঙ্কিম ঘোষ এখন চাকদহের বিজেপি বিধায়ক। তাঁর কথায়, ‘‘শুধু তো আমরা কয়েকজন নেতা দল ছাড়িনি। পশ্চিমবঙ্গের লক্ষ লক্ষ মানুষ সিপিএম ছেড়ে দিয়েছেন। তাঁরা সিপিএমের সঙ্গে আর নেই বলেই রাজ্য সম্মেলনের এই দৈন্যদশা। ওই দলের সঙ্গে থাকলে আমাদেরও এই হাল হত। মানুষ আমাদের দিক থেকেও মুখ ফিরিয়ে নিতেন।’’ শঙ্কর-বঙ্কিমদের মতো সিপিএম-ছুট এবং প্রশাসনের চোখে ‘ভিআইপি’ মর্যাদা পান উত্তর মালদহের সাংসদ খগেন মুর্মু, হলদিয়ার বিধায়ক তাপসী মণ্ডল, কেন্দ্রীয় হজ কমিটির ভাইস চেয়ারপার্সন মাফুজা খাতুনেরা।

    তৃণমূলেও সিপিএমের প্রাক্তনীদের ‘ভিআইপি মর্যাদা’ রয়েছে। সুজিত বসু মন্ত্রী। ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় সাংসদ। তাপস চট্টোপাধ্যায় রাজারহাট নিউটাউনের বিধায়ক। শওকত মোল্লা ক্যানিং পূর্বের বিধায়ক। রফিকুল ইসলাম মণ্ডল বসিরহাট উত্তরের বিধায়ক। আবদুস সাত্তার এবং মইনুল হাসানও গুরুত্বপূর্ণ সরকারি পদে থাকায় সরকারি নিরাপত্তা পান। ‘বাতি’ না থাকলেও নিরাপত্তার প্রশ্নে এঁরা প্রত্যেকেই পুলিশ-প্রশাসনের খাতায় ‘ভিআইপি’। বিধায়ক তাপসের কথায়, ‘‘সিপিএম বাস্তবকে অস্বীকার করে বরাবরই একটা কাল্পনিক রাজনীতি চাপিয়ে দিত। সেটা সুভাষ চক্রবর্তীও পছন্দ করতেন না। আমরাও পছন্দ করতাম না। ঠিক পদক্ষেপ করেছিলাম বলেই এখনও মানুষের মধ্যে থাকতে পারছি।’’ শওকতের বক্তব্য, ‘‘এখন তা-ও একটা নীলবাতি কোনওক্রমে জ্বলছে। আগামী দিনে ওটাও থাকবে না। লাল, নীল কেন, সাদাবাতিও ওখানে জ্বলবে না! রাজ্য সম্মেলনে এই ছবি। পরে সর্বভারতীয় সম্মেলনেও একই অবস্থা হবে।’’

  • Link to this news (আনন্দবাজার)