প্রবীর চক্রবর্তী: বদলে ভয়? অন্তর্ঘাতের আশঙ্কা? ছাব্বিশে বিধানসভা ভোটে তৃণমূলের সাংগঠনিক রদবদলে রাজি নন বিধায়কদের একটি বড় অংশেরই! রদবদলের প্রস্তাব দিয়েছেন মাত্র ২০ থেকে ২৫ শতাংশ বিধায়ক। সূত্রের খবর তেমনই।
বছর ঘুরলেই রাজ্যে বিধানসভা ভোট। আগামী বৃহস্পতিবার তৃণমূলের রাজ্য় সম্মেলন। সেই সম্মেলন থেকেই কি সাংগঠনিক রদবদল হবে? জল্পনা তুঙ্গে রাদনৈতিক মহলে। গত ১০ ফেব্রুয়ারি তৃণমূল পরিষদীয় দলের সঙ্গে বৈঠক করেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সূত্রের খবর, বৈঠকে যাঁরা নিজেদের বিধানসভা এলাকায় রদবদল চান, সেইসব বিধায়কদের ৩ জনের নাম জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন তিনি। সময়সীমা ১৫ দিন।
সময়সীমা শেষ হচ্ছে আজ, মঙ্গলবার। তৃণমূল সূত্রের খবর, দলের একটি বড় অংশের বিধায়কই নাম জমা দেননি। অর্থাত্ রদবদলের প্রস্তাবে সায় নেই তাঁদের। তবে কেউ কেউ আবার রদবদল চান। তবে সংখ্যাটা নগণ্য, মাত্র ২০ থেকে ২৫ শতাংশ। উত্তর দিনাজপুরের ইটাহারের বিধায়ক মোশারফ হোসেন বলেন, 'যাঁদের পরিবর্তনের প্রয়োজন নেই। তাঁরা স্বভাবতই চিঠি জমা দেবেন না। এটা আমরা জানতে পেরেছি। যেমন, আমার এলাকায় মূল সংগঠন, শাখা সংগঠন, সহযোগী সংগঠন, ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন, যাঁরা পদে আছেন, তাঁরা ভালো কাজ করছেন, ফলে পরিবর্তনের দরকার নেই। জমাও দিইনি'।
আবার ভিন্নমত রয়েছে তৃণমূলের অন্দরেই। সূত্রের খবর, অন্তর্ঘাতের আশঙ্কা করছেন বিধায়কদের একাংশই। ঘনিষ্ঠমহলে তাঁদের বক্তব্য, ব্লক সভাপতিকে যদি সরিয়ে দেওয়ার সুপারিশ করেন, সেক্ষেত্রে ছাব্বিশের ভোটে দলে থেকেও অন্তর্ঘাত করতে পারেন তিনি। এ বিষয়ে অবশ্য মুখ খুলতে চাননি তৃণমূলের রাজ্য় সম্পাদক কুণাল ঘোষ। তাঁর সাফ কথা,'বিধায়করা জমা দিয়েছেন, নাকি জমা দেননি। দিলে কেন দিয়েছেন, না দিলে কেন দেননি? এটা একেবারেই সাংগঠনিক অভ্যন্তরীণ বিষয়। কোনও মন্তব্য় করব না'। সঙ্গে বার্তা, 'তৃণমূল কংগ্রেস একটা অসম্ভব গণতান্ত্রিক, খোলা হাওয়া নিয়ে চলা দল। মনে খুলে কাজ করা যায় না। ভয়ের কোনও পরিবেশই নেই। ভয়ের কথা আসছে কোথা থেকে'।
বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্যের কটাক্ষ, 'তৃণমূলের সরকার পরিচালনার পদ্ধতি দেখে কি কোনও সময়ে মনে হয়েছে, সেখানে ব্যতিক্রমী কেউ আছেন, যিনি প্রকাশ্যে চাকরি বিক্রির বিরোধিতা করেছেন? জাল স্যালাইনের বিরোধিতা করেছেন? সরকারি জীবনদায়ী ওষুধ বিভিন্ন জেলা হাসপাতালে না থাকা নিয়ে আলোচনা করেছেন? সীমাহীন দুর্নীতি, প্রাতিষ্ঠানিক লুঠের প্রতিবাদ করেছেন? তৃণমূল গোটা দলটাই এক। সেখানে ৭৫, ২৫শের ভাগ নিয়ে কোথাও হুজুতি, কোথাও সকলকে দিয়ে না খাওয়া নিয়ে সমস্য়া'। বলেন তাদের দলে কে আসবে? কে যাবে? তা নিয়ে মানুষের কোনও আগ্রহ নেই। আর সাধারণ মানুষের যেখানে আগ্রহ নেই, সেখানে বিরোধী দলেরও কোনও আগ্রহ নেই, আগ্রহ থাকতে পারে না। আমরা মনে করি, মৃতদেহটাই এক, মৃতদেহের মাথা চুল ছিঁড়ে নিলে মৃতদেহটা হালকা হয়ে যায় না'।