চিকিৎসায় গাফিলতি, বধূর মৃত্যু নার্সের বিরুদ্ধে অত্যাচারের অভিযোগ
বর্তমান | ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
সংবাদদাতা, বোলপুর: আমার গায়ে পা ছুড়ছিস! তোর এত সাহস, দাঁড়া, দেখাচ্ছি মজা! প্রসব যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে হাত-পা ছুঁড়েছিলেন সদ্য মা হওয়া ফেন্সি ঘোষ (২৩)। সেই পা গিয়ে লাগে নার্সের গায়ে। তারপরেই এমন মন্তব্য করেছিলেন কর্তব্যরত নার্স। এরপর থেকে বিনা চিকিৎসায় ফেন্সিদেবীকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফেলে রাখা হয় বলে অভিযোগ পরিবারের। আর সেই অবহেলার কারণেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন সদ্য মা হওয়া ফেন্সি। যা নিয়ে চিকিৎসায় গাফিলতিতে মৃত্যুর অভিযোগ তুলে ক্ষোভে ফেটে পড়েন পরিবারের লোকজন। উত্তাল হয়ে ওঠে বোলপুর মহকুমা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল চত্বর। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ঘটনাস্থলে যান বোলপুরের এসডিপিও রিকি আগরওয়াল ও শান্তিনিকেতন থানার ওসি কস্তুরী মুখোপাধ্যায়। এই ঘটনায় দুর্ব্যবহারকারী ওই দুই নার্সকে কড়া শাস্তি দেওয়ার দাবি করে মৃতার পরিবার। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এই ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করে দোষীদের শাস্তির আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
এই ঘটনায় হাসপাতালের সুপার দিবাকর সর্দার বলেন, মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের নির্দেশে জেলাস্তরে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেখানে ডেপুটি সিএমওএইচ, ডিস্ট্রিক্ট পাবলিক হেল্থ আধিকারিক, স্বাস্থ্যদপ্তরের প্রশাসনিক স্তরের আধিকারিক ও অন্য হাসপাতালের স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞকে নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাঁদের রিপোর্টের ভিত্তিতেই পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
পুলিস ও পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, বোলপুরের মুলুক আদর্শপল্লিতে বাড়ি ফেন্সিদেবীর। ২০২১ সালে লাভপুরের চৌহাট্টার ঘোষপাড়ার পুষ্পেন্দু ঘোষের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। পুষ্পেন্দুবাবু বর্তমানে সুদূর পাঞ্জাবে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কর্মরত রয়েছেন। স্ত্রীর সন্তান প্রসবের আগাম খবর পেয়ে তিনি বোলপুরে এসেছিলেন। রবিবার ফেন্সিদেবীকে বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সোমবার ফেন্সির ‘নরমাল ডেলিভারি’ হয়। তিনি পুত্রসন্তানের জন্ম দেন। এপর্যন্ত কোনও গোলযোগ ছিল না। কিন্তু প্রসবের কারণে ফেন্সির সেলাইয়ের প্রয়োজন হয়। সেই সময়ে নার্সদের ডাক পড়ে। নার্সরা সেই কাজ শুরু করলে যন্ত্রণায় হাত-পা ছোড়া শুরু করেন ফেন্সি, সেই পা লাগে এক নার্সের গায়ে। সেইসময় ফেন্সির পাশে তাঁর শাশুড়ি ছিলেন। তাঁর অভিযোগ, গায়ে পা লাগার ঘটনায় নার্সদের এতটাই ‘ইগো হার্ট’ হয়, যে সঙ্গে সঙ্গে তারা সেলাই বন্ধ করে দেন। তারপরেই ওই মন্তব্য করেন। বারবার অনুরোধ করেও কোনও কাজ করা হয়নি।
ফেন্সিদেবীর পিসি বেলি ঘোষ বলেন, সন্তান প্রসবের কারণে ফেন্সির সেলাইয়ের প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু ওই ঘটনায় নার্সদের বারবার বললেও তারা গ্রাহ্য করেননি। বরং তাকে হাত পা বেঁধে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফেলে রাখা হয়। আর তাতে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের জন্য পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। এরপর তাকে আর বাঁচানো যায়নি। নার্সরা যদি একটু মানবিক আচরণ করতো, তাহলে অকালে ফেন্সির প্রাণ যেত না।
মৃতার স্বামী পুষ্পেন্দুবাবু বলেন, নার্সদের প্রবল দুর্ব্যবহারের কারণে আমার স্ত্রী অকালে প্রাণ হারাল। আগামী দিনে কাউকে যাতে এভাবে প্রাণ হারাতে না হয়, সেজন্য ওই নার্সদের কড়া শাস্তির দাবি জানাই। -নিজস্ব চিত্র