• নদী আটকে বালি লুট রানিগঞ্জে জেলাশাসকের কাছে অভিযোগ
    বর্তমান | ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, আসানসোল: বাংলার দুঃখের নদী নামেই পরিচিত ছিল দামোদর। তার ভয়ঙ্কর বন্যায় গৃহহীন হতেন হাজার হাজার মানুষ। পরবর্তীকালে ডিভিসির একাধিক বাঁধে সেই সমস্যা অনেকটা কমায়। যদিও কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রাধীন এই সংস্থা প্লাবনে অতিরিক্ত জল ছেড়ে দিচ্ছে। গ্রীষ্মে জল না ছাড়ার অভিযোগ ওঠছে। দামোদর দিয়ে কেন্দ্র রাজ্য টানাপোড়েনের মধ্যে ভয়ঙ্কর দৃশ্য সামনে এসেছে রানিগঞ্জ এলাকায়। সেখানে বালি কারবারিরা রানিগঞ্জ মেজিয়ার মধ্যে এক অস্থায়ী সেতুই বেঁধে দিয়েছেন। অভিযোগ, শুধুমাত্র বালি লুট করার জন্যই এই ব্যবস্থা। জলের গতিপথ জোর করে পাল্টে দিয়ে মেশিন দিয়ে বেপরোয়া বালি লুটের জন্যই এই উদ্যোগ বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। 


    রানিগঞ্জ মেজিয়ার মধ্যে বালি উত্তোলনের বরাত পাওয়ার সংস্থার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগে সরব হয়েছেন রানিগঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতির ভূমি কর্মাধ্যাক্ষ তরুণ মণ্ডল। তিনি লিখিত ভাবে জেলাশাসককে অভিযোগ করেছেন। লিখিত ভাবে জেলাশাসককে করা অভিযোগে, তাঁর আক্রমণের তীর স্থানীয় বিডিও, বিএলএলআরওদের প্রতিও। তিনি বলেন, স্থানীয় প্রশাসনকে বার বার অভিযোগ করেও কোন কাজ হয়নি। জেলাশাসকে করা অভিযোগে তিনি বলেছেন, সম্পূর্ণ অবৈধ ভাবে অনেক বেশি পরিমাণ বালি তুলে সরকারকে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে। ওভারলোডিং লরি যাতায়াত করার জন্য বল্লভপুর শ্মশান কালী মন্দির থেকে মথুরাচণ্ডি যাতায়াতের রাস্তা ব্যবহারের অযোগ্য। মেশিন দিয়ে বালি তোলা হচ্ছে। 


    তরুণ মণ্ডল বলেন, জেলাশাসককে অভিযোগ করার পর গভীর নদীতে নৌকা নিয়ে গিয়ে সেখানে মেশিনের মাধ্যমে অবৈধ উপায়ে বালি তোলা বন্ধ হয়েছে। বালি মাফিয়ারা নতুন পন্থা নিয়েছে। সম্পূর্ণ নদীর উপরই অবৈধ সেতু গড়ে তুলেছে। সেখানে একাংশ দিয়ে জল পারাপারের রাস্তা করে বাকি অংশ নিয়ে বালি তোলা হচ্ছে। মেজিয়া ঘাটের দিক থেকে এই কাজ হচ্ছে। আমি বাঁকুড়ার জেলাশাসককেও চিঠি লিখব। 


    পশ্চিম বর্ধমানের জেলাশাসক পোন্নমবলম এস বলেন, নির্দিষ্ট অভিযোগ পেলেই পদক্ষেপ নেওয়া হয়। নদীর উপর বিনা অনুমতিতে সেতু নির্মাণ করা যায় না। বিষয়টি খতিয়ে দেখব। 


    বালি কারবার নিয়ে কয়েকদিন ধরেই সরগরম পশ্চিম বর্ধমান জেলা। জামুড়িয়ার চুরুলিয়া এলাকায় বীরভূমের চালানে চুরুলিয়া পঞ্চায়েতের বিভিন্ন মৌজা থেকে বালি তোলার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এমনকী জল প্রকল্পের পাশ দিয়ে বালি তুলে দেওয়ার জন্য পানীয় জলের সংকট হওয়ার আশঙ্কা করছে স্থানীয় পঞ্চায়েতও। এই অবস্থায় ঘটনাস্থলে গেলে বিজেপি নেতা  জিতেন্দ্র তেওয়ারি ঘিরে বিক্ষোভ হয়। পাল্টা তাঁর লোকজনের বিরুদ্ধে মারধর করার অভিযোগে মামলা রুজু হয়েছে। একই কাণ্ড পাণ্ডবেশ্বর থানা এলাকাতেও ঘটছে বলে অভিযোগ। সেখানেও বীরভূমের চালানে বালি লুট করার অভিযোগ রয়েছে। রানিগঞ্জে আবার বাঁকুড়ার চালানে এই এলাকা থেকে বালি তুলে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। শুধু তাই নয় বল্লভপুর এলাকায় প্রকৃতিক ভাবে নদী যে বালির বাঁধ তৈরি করেছে তাও কেটে নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ। বিদ্যুতের হাইটেনশন খুটির পাশ থেকে বালি তুলে দেওয়ার জেরে বড়সড় বিপদের আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়াও সন্ধ্যা নামলেই ঩শিল্পাঞ্চলের বালি ঘাটগুলি থেকে বেপরোয়া ভাবে ট্রাক্টরে বালি লুট হচ্ছে।  রানিগঞ্জ মেজিয়ার মধ্যে সেই অস্থায়ী সেতু। -নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)