• বহু ইতিহাসের সাক্ষী কাঁথির বাহিরীর কয়েকশো বছরের তেঁতুল গাছ
    বর্তমান | ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • সংবাদদাতা, কাঁথি: যুগ পাল্টেছে। সমাজ থেকে রাজনীতি বদলে গিয়েছে সবই। কয়েকশো বছর ধরে একাই সেই সমস্ত স্মৃতির সাক্ষী হয়ে রয়েছে কাঁথির-৩ ব্লকের বাহিরীর ‘জাহাজবাঁধা তেঁতুল গাছ’। এই তেঁতুল গাছেই একসময় নোঙর করা জাহাজ, নৌকা লোহার শিকল দিয়ে বাঁধা থাকত। আজও গাছে শিকলের সেই ছাপ বিদ্যমান। বহু প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সঙ্গে লড়াই করে গাছটি আজও ইতিহাসের জীবন্ত সাক্ষী হিসেবে মাথা উঁচু দাঁড়িয়ে রয়েছে। শুধু স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে নয়, ইতিহাসবিদ ও গবেষকদের কাছেও এই তেঁতুল গাছটির যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। কেউ বলেন গাছটির বয়স পাঁচশোর কাছাকাছি, কেউ বলেন তারও বেশি। বাহিরীতে ঘুরতে আসা অনেকে এই তেঁতুল গাছটি দর্শন করে যান। প্রাচীন এই তেঁতুল গাছটির উপযুক্ত সংরক্ষণ হচ্ছে না বলে অভিযোগ এলাকার বাসিন্দাদের। বয়সের ভারে বর্তমানে গাছের নীচের দিকে বেশকিছুটা অংশ ফোঁপড়া হয়ে গিয়েছে। তেঁতুল গাছটির উপযুক্ত সংরক্ষণ এবং তার চারদিকে সৌন্দর্যায়নের দাবি তুলেছেন তাঁরা। 


    কাঁথি প্রভাতকুমার কলেজের প্রাক্তন অধ্যাপক প্রেমানন্দ প্রধানের ‘হিজলিনামা’ গ্রন্থ সহ অন্যান্য ইতিহাসবিদদের লেখা থেকে জানা যায়, সেই সময়ে বাহিরী সহ আশপাশ এলাকাগুলি একটি সমৃদ্ধ জনপদ ও বাণিজ্যকেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠেছিল। নদীমাতৃক এই অঞ্চলটিকে বাণিজ্যের উপযোগী ছিল। নানাবিধ সুযোগ-সুবিধা থাকায় তৎকালীন শাসকরা এই এলাকাটিকে রাজ্য শাসনের কেন্দ্রস্থল হিসেবে বেছে নেয়। সমুদ্র ও নদী পরিবেষ্টিত হয়ে বর্ধিষ্ণু বাহিরী জনপদ গড়ে উঠেছিল। বাহিরীর পাশ দিয়েই তাম্রলিপ্ত বন্দরগামী জাহাজ চলাচলের পথ ছিল। যদিও সেই নদীর চিহ্ন আজ নেই। কালের করাল গ্রাসে কবেই বিলীন হয়ে গিয়েছে। সমুদ্রও বহুদূরে সরে গিয়েছে। তবে বাহিরীতে প্রাচীন জনপদের নানা স্মৃতি এখনও বিদ্যমান। তেঁতুল গাছটিও নিঃসন্দেহে সেই স্মৃতি বহণ করে চলেছে। তেঁতুল গাছটি একদা কোনও এক নদীর পাশে অবস্থিত ছিল। গাছ সংলগ্ন বিরাট এলাকা পোতাশ্রয় হিসেবে ব্যবহৃত হতো। বহু পালতোলা নৌকা ও জাহাজ এখানে নোঙর ফেলত এবং তেঁতুল গাছেই লোহার শিকল দিয়ে বাঁধা থাকত। বর্তমানে সমুদ্র বহু দূরে সরে গেলেও পোতাশ্রয়ে চেন বাঁধার দাগ স্পষ্ট লক্ষ্য করা যায় বলে দাবি করেন এলাকার বাসিন্দারা। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে এটি জাহাজবাঁধা তেঁতুল গাছ বলে পরিচিত হয়ে রয়েছে। আশ্চর্যের বিষয় হল, গাছটির নীচের অংশ ফোঁপড়া হয়ে গেলেও উপরের দিকে সবুজ-সতেজ রয়েছে। প্রতিবছর ফল দেয় গাছটি। কিন্তু সংরক্ষণের অভাবে গাছটি অনাদরে পড়ে রয়েছে। তার চারদিক সবসময় অপরিষ্কার থাকে। বাহিরীর বাসিন্দা রাজদুলাল নন্দ বলেন, এই তেঁতুল গাছটির ঐতিহাসিক গুরুত্ব অনেক। গাছটি প্রাচীন জনপদ বাহিরীর সমৃদ্ধি ও ঐতিহ্যের নিদর্শন হয়ে রয়েছে। সেই কারণে সুপ্রাচীন এই তেঁতুল গাছটি সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণ জরুরি। এবিষয়ে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি বিকাশচন্দ্র বেজ বলেন, প্রাচীন এই গাছটি সংরক্ষণ করা জরুরি। তবে এই মুহূর্তে কোনও পরিকল্পনা নেই। আগামী দিনে এলাকাবাসীর সঙ্গে আলোচনা করে আমরা এবিষয়ে উদ্যোগ নেব।-নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)