নিজস্ব প্রতিনিধি, শিলিগুড়ি: সোনা পাচারের আন্তর্জাতিক করিডর হিসেবে শিলিগুড়িকে বেছে নিয়েছে আন্তঃরাজ্য এবং আন্তর্জাতিক পাচারকারীরা। একের পর এক সোনা উদ্ধারের পর এমনই মনে করছেন পুলিস এবং কেন্দ্রীয় রাজস্বগোয়েন্দা বিভাগের আধিকারিকদের একাংশ। ওয়াকিবহাল মহলের দাবি, কার্যত সোনা পাচারের ঘাঁটি হয়ে দাঁড়িয়েছে শিলিগুড়ি। কখনও এনজেপি স্টেশন থেকে চোরাই সোনা উদ্ধার হচ্ছে, কখনও শিলিগুড়ি জংশন থেকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে পাচারকারীদের। গত একবছরে পাচারের আগে শিলিগুড়ি থেকে প্রচুর পরিমাণ সোনা উদ্ধার হয়েছে। পুলিস ও গোয়ান্দাদের দাবি, অন্ততপক্ষে ১০কোটি টাকার সোনা এই সময়ের মাঝে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। ১০ জন পাচারকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে মূল পান্ডারা এখনও অধরা বলে দাবি। শিলিগুড়ি মেট্রোপলিটন পুলিসের ডিসিপি (পশ্চিম) বিশ্বচাঁদ ঠাকুর বলেন, আমরা সোনা পাচারের করিডরগুলোতে বাড়তি নজরদারি রাখছি। পুলিসের সজাগ দৃষ্টির কারণেই পাচারকারীদের ধরা সম্ভব হচ্ছে।
কোনপথে শিলিগুড়িতে আসছে চোরাই সোনা? গোয়েন্দাদের একাংশের দাবি, একেবারে মায়ানমার সীমান্ত টপকে অসম হয়ে সোজা শিলিগুড়ি আসছে এই সোনা। তারপর শিলিগুড়ি থেকে কলকাতা, দিল্লি সহ অন্য রাজ্যে পাচার হয়ে যাচ্ছে। উত্তর-পূর্ব ভারতের চোরাই সোনার প্রবেশদ্বার এখন শিলিগুড়ি। গোয়েন্দাদের একাংশের দাবি, শিলিগুড়ির উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থাকে কাজে লাগাতে মরিয়া পাচারকারীরা। আর একেই হাতিয়ার করে আন্তঃরাজ্য তো বটেই, আন্তর্জাতিক পাচারকারীরাও সক্রিয় হয়ে উঠছে। কোনও উৎসব বা বিয়ের মরশুমের আগে এই চক্র আরও সক্রিয় হয়ে উঠছে।
২৪ ফেব্রুয়ারি শিলিগুড়ির ফুলবাড়িতে ৪০লক্ষ টাকার সোনার বিস্কুট সহ গ্রেপ্তার করা হয় বিহারের এক বাসিন্দাকে। এর আগে চলতি বছরের ছ›টি সোনার বিস্কুট সহ এক পাচারকারীকে গ্রেপ্তার করেছিলেন কেন্দ্রীয় রাজস্ব গোয়েন্দা বিভাগের আধিকারিকরা। যার আনুমানিক বাজারমূল্য প্রায় ৫৭লক্ষ টাকা। এরআগে গতবছরের অক্টোবরে দু’কোটি টাকার সোনা সহ এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছিল কেন্দ্রীয় রাজস্ব গোয়েন্দা বিভাগের আধিকারিকরা। একই বছরের পাঁচ সেপ্টেম্বর জংশন এলাকায় ২৯পিস সোনার বিস্কুট সহ দুই পাচারকারীকে গ্রেপ্তার করেন কেন্দ্রীয় রাজস্ব গোয়েন্দা বিভাগের আধিকারিকরা। উদ্ধার হওয়া সোনার মোট ওজন ৪ কেজি ৮১৪ গ্রাম। যার আনুমানিক বাজার মূল্য ২ কোটি ৪২ লক্ষ ৯৯ হাজার ৬২৮ টাকা। এর আগে ২ আগস্ট শিলিগুড়ি জংশন এলাকা থেকে দু’টি সোনার বাট সহ এক পাচারকারীকে গ্রেপ্তার করেন গোয়েন্দারা। যার আনুমানিক বাজার মূল্য প্রায় ৬১ লক্ষ টাকা। এর আগে ২৬ জুলাই ৩৫ লক্ষ টাকার বেআইনিভাবে সোনা সহ এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেন আধিকারিকরা। ৩জুলাই ৪৮ লক্ষ ৭০ হাজার ৪৪৭ টাকার সোনা সহ দুই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছিলেন কেন্দ্রীয় রাজস্ব গোয়েন্দা বিভাগের গোয়েন্দারা।
পুলিস ও কেন্দ্রীয় রাজস্ব গোয়েন্দা বিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত একবছরের উদ্ধার হওয়া সোনার আনুমানিক বাজারমূল্য প্রায় ১০ কোটি টাকা।