ঘোলায় বিয়ের রাতেই নববধূর কোলে মাথা রেখে মৃত্যু স্বামীর
বর্তমান | ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, বরানগর: ‘ফুলশয্যা’র রেশ তখনও কাটেনি। ভোরের আলো ফোটার আগেই নববধূর কোলে মাথা রেখে চিরনিদ্রায় গেলেন স্বামী। নতুন সংসার পাতা নিয়ে রাতভর নানা কথা নিমেষে বদলে গেল শোকে। সকাল পর্যন্ত ওই দেহ ধরেই বসে ছিলেন সিঁদুররাঙা বউ। পরে অচেতন স্বামীকে পুলিস ও তাঁর বন্ধু পানিহাটি স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তাররা মৃত বলে ঘোষণা করেন। পুলিস জানিয়েছে, মৃতের নাম অভিজিৎ ভক্ত (৪০)। বাড়ি ঘোলা থানার বিলকান্দা ১ নম্বর পঞ্চায়েতের অপূর্বনগর চড়কতলায়। এই ঘটনায় ঘোলা এলাকায় শোকের আবহ তৈরি হয়েছে।
পুলিস ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিজিৎ পেশায় রংয়ের মিস্ত্রি। বাড়িতে বিবাহ বিচ্ছিন্না দিদি ও শয্যাশায়ী মা। এক দাদা রয়েছেন বটে, তবে তিনি দীর্ঘদিন হল মহারাষ্ট্রের পুনে শহরে থাকেন। সেখানে শ্রমিকের কাজ করেন তিনি। অভিজিতের সঙ্গে ঘোলা এলাকার জমিদারপাড়ার যুবতী মৌমিতা বাছারের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। মৌমিতাও বিবাহ বিচ্ছিন্না। সোমবার দুপুরে তাঁরা ঘোলা এলাকার একটি মন্দিরে গিয়ে বিয়ে করেন। তবে বিয়ের পর নতুন স্ত্রীকে নিয়ে নিজের বাড়িতে ওঠেননি। উঠেছিলেন ঘোলার ১৬ ফুট এলাকায় বন্ধু কৃষ্ণ সেনের বাড়িতে। বন্ধুকে না জানিয়ে যাওয়ায় তিনিও খানিক অস্বস্তিতে পড়েছিলেন প্রথমে। পরে স্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে অভিজিৎ ও মৌমিতার জন্য পাশের ঘরটি খুলে দেন। অভিজিৎ বলেছিলেন, রাতটুকু কাটিয়েই বাড়ি ফিরে যাব। মেঝেতেই বিছানা পেতে তাঁদের থাকার বন্দোবস্ত করেন কৃষ্ণ। এরপর দুই দম্পতি অনেক রাত পর্যন্ত গল্প করে। হাসি, ঠাট্টা, মশকরায় ভালোই কেটেছিল রাত। সকাল হতেই কান্নার আওয়াজে ঘুম ভাঙে কৃষ্ণদের। তড়িঘড়ি পাশের ঘরে গিয়ে দেখেন, সেখানে নিথর অবস্থায় শুয়ে রয়েছে বন্ধু। পাশে বসে অঝোরে কেঁদে চলেছেন মৌমিতা। হতবাক কৃষ্ণবাবু দ্রুত ফোন করেন ঘোলা থানায়। পুলিস এসে তাঁকে উদ্ধার করে পানিহাটি স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। কিন্তু হৃদস্পন্দন ফেরেনি তাঁর। পুলিস মৃত্যু রহস্যের কিনারা করতে নববধূকে থানায় নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর তাঁকে ছেড়ে দেয়।
মৌমিতা বলেন, আমরা অনেক রাত পর্যন্ত গল্প করেছি। ও বলেছিল, সকাল হলে আমরা বাড়ি যাব। পক্ষাঘাতগ্রস্ত মাকে দেখভাল করতে হবে। দিদি খুব ভালো। আমাদের সাদরে গ্রহণ করবে। কিন্তু ঘর তৈরির আগেই আমার ঘর ভেঙে গেল। হঠাৎই গোঙানির শব্দ, তারপর থেমে গেল সব।
এদিন থানায় বসেই অভিজিতের দিদি শান্তি ভক্ত বলেন, ভাইয়ের হৃদরোগ ও ব্লাড প্রেসারের সমস্যা ছিল। ও যে সোমবার বিয়ে করেছে, তাও আমরা জনতাম না। সকালে থানায় এসে জেনেছি। ঘোলা থানার পুলিস জানিয়েছে, কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি। অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা দায়ের করে তদন্ত শুরু করা হয়েছে। শরীরে আঘাতের চিহ্ন নেই। মৃতের স্ত্রী ও বন্ধুর পরিবারের সঙ্গে কথা বলে পুলিসের প্রাথমিক অনুমান, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েই তাঁর মৃত্যু হয়েছে।