নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: ট্যাংরায় দে পরিবারের সকলেই ঘুমের ওষুধ মেশানো পায়েস একই পরিমাণ খেয়েছিলেন, নাকি তারতম্য ছিল, এই প্রশ্নের উত্তর প্রথম থেকে খুঁজছেন তদন্তকারীরা। ‘বডি মেটাবলিজিম’এর কারণে সবার শরীরে সমান প্রতিক্রিয়া হয়নি বলে প্রাথমিকভাবে অনুমান করেন তাঁরা। প্রসুন ও প্রণয়কে জিজ্ঞাসাবাদ করে এই রহস্যের জট অনেকটাই তদন্তকারীরা খুলে ফেলেছেন বলে সূত্রের খবর। সেখানে ওই পায়েস খাওয়ার ক্ষেত্রে পরিমাণে তারতম্য হয়েছিল, তা জেনেছেন। যদিও দুই ভাইয়ের বক্তব্য তাঁরা পুরোপুরি বিশ্বাস করছেন না। পুরোপুরি সুস্থ হলে তাঁদের পাল্টা প্রশ্ন করে বক্তব্যে কোথায় ফাঁক রয়েছে, সেটি খতিয়ে দেখবেন তদন্তকারীরা।
ট্যাংরাকাণ্ডের তদন্তে নেমে অফিসাররা বুঝেছিলেন, পূর্ব পরিকল্পনা করে গোটা ঘটনা ঘটানো হয়েছে। কিন্তু কবে তা করা হল, তা নিয়ে একের পর এক তথ্য হাতে আসে তাঁদের। পারিপার্শ্বিক তথ্যপ্রমাণ, দুই ভাইয়ের বয়ান ও মোবাইলে কল ডিটেইলস ঘেঁটে তদন্তকারীরা জানতে পারছেন, ১০ ফেব্রুয়ারি প্রসুন ও প্রণয় দরজা বন্ধ করে তিনতলায় দীর্ঘক্ষণ বৈঠক করেন। পাওনাদারদের নিয়ে আলোচনা চলে। সেটি ম্যানেজ করার জন্য একাধিক রাস্তা খোঁজেন। বেশ কয়েকটি বেসরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ফোনও করেন। কিন্তু সেখানে যে সমস্ত নথি চাওয়া হয়, তা আগে থেকেই অন্য ব্যাঙ্ক এবং এনবিএফসিতে জমা থাকায়, তা তাঁরা দিতে পারেননি। দুই ভাই এরপর ঠিক করেন, কঠিন সিদ্ধান্ত নেবেন। যাতে পাওনাদারের চাপ থেকে পুরোপুরি মুক্তি পাওয়া যায়। চার ঘণ্টা ধরে চলা এই বৈঠকে প্রাথমিকভাবে তাঁরা ঠিক করে ফেলেন, আত্মহত্যাই করবেন। কিন্তু কীভাবে তা ঠিক হয়নি। এরপর ১২ তারিখ আবার বৈঠক করেন। সেখানে ঠিক করে ফেলেন, ঘুমের ওষুধ খেয়ে দুই ভাই আত্মহত্যা করবেন। ১৩ তারিখ দুজনের স্ত্রী এই প্ল্যান জেনে ফেলায় এবার সিদ্ধান্ত হয়, ছেলেমেয়েদের না জানিয়ে পায়েসে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে সকলেই আত্মঘাতী হবেন। সেইমতো ১৭ তারিখ রাতে সকলে তা খেয়েও নেন।
কিন্তু পায়েস খাওয়ার পরেও কিশোরীর কেন মৃত্যু হল? আর নাবালক সহ দুই গৃহবধু, প্রসুন- প্রণয় বেঁচে রইলেন কীভাবে, তাই নিয়ে সংশয় ছিল তদন্তকারীদের মনে। দুই ভাই জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, কিশোরীকে জোর করে এবং কার্যত মারধর করে পাঁচ চামচ পায়েস খাওয়ানো হয়। প্রসূন-প্রণয় ও তাঁদের স্ত্রীরা ও নাবালক দু’চামচ করে খেয়েছিলেন। এখান থেকে তদন্তকারীদের অনুমান, পায়েসের পরিমাণ বেশি হওয়ায় কিশোরীর শরীরে বিষক্রিয়া হয়েছে বেশি। যে কারণে তাঁর মৃত্যু হয়। কিন্তু বাকিরা অল্প খাওয়ায় আচ্ছন্ন ছিলেন। পাশাপাশি মেটাবলিজিম ভালো হওয়ার কারণে দুই ভাইয়ের শরীরে কিছুই প্রভাব পড়েনি। দুই গৃহবধু আচ্ছন্ন হলেও, বিষের কারণে মারা যাননি। নাবালকের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে। -ফাইল চিত্র