• ৪৮ ঘণ্টা পরেও অপরাধী অধরা কেন, প্রশ্ন মৃতার মায়ের
    দৈনিক স্টেটসম্যান | ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • মেয়ের মৃত্যুর পর প্রায় ৪৮ ঘণ্টা কেটে গিয়েছে। পুলিশ জারি করেছে জামিন অযোগ্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা। রবিবার গভীর রাতে পশ্চিম বর্ধমানের পানাগড়ে ১৯ নম্বর জাতীয় সড়কে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সংস্থার কর্ণধার ও নৃত্যশিল্পী সুতন্দ্রা চট্টোপাধ্যায়ের অকালমৃত্যুর পর এখনও অধরা অভিযুক্তরা। গাড়িতে থাকা সুতন্দ্রার সঙ্গীদের অভিযোগ ছিল, একটি গাড়ি তাঁদের পিছু ধাওয়া করছিল। সুতন্দ্রা ছিলেন ওই গাড়ির আরোহীদের টার্গেট।

    অভিযোগ, যুবতীকে অশালীন ইঙ্গিত এবং উত্ত্যক্ত করার চেষ্টা করছিলেন কয়েক জন যুবক। এরপর গাড়ি নিয়ে পালাতে গেলে দুর্ঘটনা ঘটে ও মৃত্যু হয় তরুণীর। এই অভিযোগের ২৪ ঘন্টার মধ্যেই পুলিশ তরুণীকে কটূক্তির অভিযোগ কার্যত নস্যাৎ করে জানিয়েছিল, দুটো গাড়ির ওভারটেকের ফলেই এই ঘটনা ঘটেছে। স্বাভাবিকভাবেই পুলিশের এই দাবি মানতে নারাজ মৃত তরুণী সুতন্দ্রা চট্টোপাধ্যায়ের পরিবার। তাঁদের প্রশ্ন, গোটা বিষয় খতিয়ে না দেখে পুলিশ এত তাড়াতাড়ি রেষারেষির ঘটনা বলে দিচ্ছে কী করে? সুতন্দ্রার মা তনুশ্রী চট্টোপাধ্যায় অভিযোগ করেছেন, ‘ইভটিজিংই হয়েছে। মেয়ের গাড়ির চালক রেষারেষি করেন না। হাইওয়েতে কেন কোনও পুলিশ থাকবে না? ওদের গাড়ি ধরা পড়ল, আর অভিযুক্তরা ধরা পড়েনি। পুলিশ ঘটনা ধামাচাপা দিতে চাইলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

    দুর্ঘটনার পর দুটি গাড়িকেই বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ। যুবকদের গাড়ি থেকে মদের গ্লাস পাওয়া গিয়েছে। দুর্ঘটনার এলাকার রাস্তার সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখছে পুলিশ। বিষয়টি নিয়েও ক্ষুব্ধ মৃত তরুণীর পরিবার। এক আত্মীয়ের কথায়, যে গ্লাসগুলি পাওয়া গেছে তার পরীক্ষা এখনও হয়নি। এদিকে দুর্ঘটনার জায়গাটিকেও ঘিরে রাখা হয়নি। অথচ পুলিশ আগেভাগে বলে দিচ্ছে, এটি রেষারেষির ঘটনা। এ দিন মৃতার চন্দননগরের বাড়িতে গিয়েছিলেন মহিলা কমিশনের সদস্যরা। কথা বলেন সুতন্দ্রার মায়ের সঙ্গে। তাঁদের তনুশ্রী চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ‘রাস্তা দিয়ে গাড়ি নিয়ে মদ খেতে খেতে যাবে? কোথায় বাস করছি আমরা? আমার মেয়ে তো ফিরে আসবে না। কিন্তু আরও মেয়েরা রয়েছে। তাদেরও তো বাইরে কাজ করতে হচ্ছে। কেউ তো ঘরে বসে থাকবে না। মেয়ে মানেই এখন হয়ে গেছে ভোগ্য বস্তু।’

    এর সঙ্গে সুতন্দ্রার মা সন্দেহ প্রকাশ করে জানিয়েছেন, এই ঘটনার পিছনে নিশ্চয় কোনও প্রভাবশালী ব্যক্তি আছেন। সাধারণ কেউ এই ধরনের কাজ করতে সাহস পাবে না। এমন কেউ যাঁর পিছনে রাজনৈতিক প্রভাব রয়েছে, এই কাজটা তাঁর পক্ষেই করা সম্ভব।

    মেয়ের মৃত্যুর শোকের পাশাপাশি একটি বিষয় নিয়ে ভেবে কুলকিনারা পাচ্ছেন না সুতন্দ্রার পরিবার। প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা দেনা রয়েছে তাঁদের। সুতন্দ্রার বাবা সুকান্ত চট্টোপাধ্যায় রেলের ঠিকাদার ছিলেন। চন্দননগরের নাড়ুয়ায় তাঁদের বাড়ি এবং চন্দননগরের পালপাড়া এলাকায় একটি দোকান ছিল তাঁদের। হঠাৎই সুতন্দ্রার বাবার শরীরে ক্যান্সার ধরা পড়ে। বাড়ি ও দোকানঘর দুটোই বন্ধক রেখে ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়েছিলেন তিনি। চিকিৎসার জন্য জলের মতো টাকা খরচ হয়েছে। তবু তাঁকে বাঁচানো যায়নি। নিঃস্ব হওয়ার মতো অবস্থায় দাঁড়িয়েছিল চট্টোপাধ্যায় পরিবার। সেখান থেকে একটু একটু করে পরিবারকে ঘুরে দাঁড় করাচ্ছিলেন সুতন্দ্রা। কিন্তু এই দুর্ঘটনা সব ওলটপালট করে দিল।
    মঙ্গলবার সকালে চন্দননগরের মেয়র রাম চক্রবর্তী গিয়েছিলেন শোকসন্তপ্ত পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে। তাঁর কাছে সুতন্দ্রার ঠাকুরমা কল্পনা চট্টোপাধ্যায়ের আবেদন, তনুশ্রীর যেন একটা কাজের ব্যবস্থা করে দেন। নাহলে পরিবারটাই শেষ হয়ে যাবে। কাঁদতে কাঁদতে তিনি জানিয়েছেন ‘বাড়িতে দু’জন বৃদ্ধা। দেখাশোনা, ওষুধপত্রের ব্যবস্থা আর কে করবে?’
  • Link to this news (দৈনিক স্টেটসম্যান)