• মদ্যপ চালক ও মারাত্মক গতি, কুম্ভের পথে ফের বাস দুর্ঘটনা
    এই সময় | ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • এই সময়, আসানসোল ও খড়্গপুর: প্রথমে স্কুলবাসে ধাক্কা, পরে একটি মোটরবাইক এবং শেষে পুলিশের ব্যারিকেড পরপর ভেঙে সজোরে ধাক্কা ট্রেলারের পিছনে। মহাকুম্ভে যাওয়ার পথে পশ্চিম বর্ধমানে ১৯ নম্বর জাতীয় সড়কের উপরে এমনই ভয়াবহ দুর্ঘটনার মুখে পড়ল ৭০ জন পুণ্যার্থী বোঝাই একটি বাস। তাঁদের প্রায় সকলেই দুই মেদিনীপুরের বাসিন্দা।

    মঙ্গলবার সকালে আসানসোলের কুলটি থানার বাংলা–ঝাড়খণ্ড সীমানা লাগোয়া ডুবুরডিহি চেকপোস্টের কাছে ঘটনাটি ঘটে। আহত হয়েছেন ২৫ জন বাসযাত্রী। তাঁদের মধ্যে রবিন কর এবং গীতারানি দাস নামে দু’জন গুরুতর আহত অবস্থায় আসানসোল জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আহত ছ’জন মহিলা–সহ ২৩ জনকে আসানসোল জেলা হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসার পর এ দিনই ছেড়ে দেওয়া হয়। এঁদের অনেকেরই হাত ভেঙেছে, মাথা ফেটেছে বা পায়ে আঘাত লেগেছে। তাঁদের অভিযোগ, বাসচালক ও খালাসি দু’জনেই মদ্যপ অবস্থায় ছিলেন। দ্রুত গতিতে বেপরোয়া ভাবে বাস চালানোর জেরেই দুর্ঘটনাটি ঘটে। পুলিশ বাসটি বাজেয়াপ্ত করেছে। চালক ও খালাসি দু’জনেই পলাতক।

    জানা গিয়েছে, বাসটি ছাড়ার কথা ছিল সোমবার দুপুর তিনটের সময়। কিন্তু আগের দিন বাসটি বিয়েবাড়িতে ভাড়া যাওয়ায় ফেরার সময়ে দেরি হয়ে যায়। শেষে রাত ১১টা নাগাদ পশ্চিম মেদিনীপুরের বেলদা থানার জাহালদা থেকে বাসটি ছাড়ে। সেখান থেকে জাহালদা ছাড়াও পূর্ব মেদিনীপুরের এগরার বেশ কিছু বাসিন্দা বাসে ওঠেন। কিছু যাত্রী বাসে ওঠেন বেলদা ও খড়্গপুর থেকে। এর পর বাসটি খড়্গপুরের পেট্রল পাম্পে আসে রাত ১২টা নাগাদ। তেল নেওয়া হলে কুম্ভের পথে যাত্রা শুরু হয়।

    কিছুটা যাওয়ার পরেই বাসের গতি অতিরিক্ত বাড়িয়ে দেন চালক। এ দিনের দুর্ঘটনায় বাঁ হাত ভেঙেছে পুরীর এইমসের চিকিৎসক শুভদীপ শতপথীর। তিনি বলেন, ‘বাঁকুড়া থেকে ওই বাসে উঠেছিলাম। বুঝতে পারছিলাম বাসের চালক মদ্যপ অবস্থায় দ্রুত গতিতে গাড়ি চালাচ্ছেন। তাঁকে বারণ করা হয়। বাংলা–ঝাড়খণ্ড সীমানায় ওই চালককে বাস থেকে নামিয়ে দ্বিতীয় চালককে বাস চালানোর দায়িত্ব দেওয়ার কথাও ভাবা হয়েছিল। কিন্তু তার আগেই দুর্ঘটনা ঘটে।’

    প্রধান চালকের কোনও অসুবিধা বা বিশ্রামের প্রয়োজন হলে যাতে গাড়ি না থামে, সে জন্য দূরপাল্লার গাড়িতে দু’জন চালক রাখা হয়। এ ক্ষেত্রেও তাই ছিল। দ্বিতীয় চালক হিসেবে দুর্ঘটনাগ্রস্ত বাসের চালকের বাঁ দিকে বসেছিলেন খড়্গপুর শহরের তালবাগিচার বাসিন্দা রবিন কর। তিনি বলেন, ‘যাত্রীরা বারবার বাসটি ধীরে চালানোর জন্য বলেছিলেন। কিন্তু কিছুই শোনেননি চালক। তখন আমি বাধ্য হয়ে বাস মালিককেও দু’বার ফোন করি। কিন্তু চালক এতটাই মদ্যপ ছিলেন যে, কারও কথায় কান দেননি।’

    এ দিন হাসপাতালের বেডে শুয়ে রবিন বলেন, ‘মঙ্গলবার সকালে আমাদের বাস প্রথমে রানিগঞ্জের আগে মেজিয়ার কাছে একটি স্কুলবাসকে ধাক্কা মারে। স্কুলবাসটি অবশ্য বেঁচে যায়। পরে ১৯ নম্বর জাতীয় সড়কে একটি মোটরবাইকে হালকা ধাক্কা দিয়ে বাস বেরিয়ে যায়। কুলটির বাংলা–ঝাড়খণ্ড সীমানা লাগোয়া ডুবুরডিহি চেকপোস্টে একাধিক ড্রাম দিয়ে ব্যারিকেড তৈরি করেছিল পুলিশ। আমাদের বাসটি সেই ড্রামের ব্যারিকেড ভেঙে দাঁড়িয়ে থাকা একটি ট্রেলারের পিছনে গিয়ে ধাক্কা মারে।’

    রবিন আরও বলেন, ‘গাড়ির সামনের অংশটি দুমড়ে যায়। আমার বাইরে বেরোনোর রাস্তা ছিল না। সংঘর্ষে গাড়ির সামনের কাচ অনেকটাই ভেঙে গিয়েছিল। সেই কাচ আরও কিছুটা ভেঙে স্থানীয় বাসিন্দারা আমাকে গাড়ি থেকে বের করেন।’ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে কুলটি থানার চৌরঙ্গি ফাঁড়ি ও কুলটি ট্র্যাফিক গার্ডের পুলিশ। এলাকার বাসিন্দাদের সহযোগিতায় পুলিশ আহতদের উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য আসানসোল জেলা হাসপাতালে পাঠায়। পুলিশ জানিয়েছে, কী কারণে এই ঘটনা ঘটেছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

  • Link to this news (এই সময়)