• পিসিশাশুড়ি খুনের অভিযোগ প্রথম নয়, পুলিশের খাতায় ফাল্গুনীর নাম উঠেছিল আগেই
    এই সময় | ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • পিসিশাশুড়িকে খুন করে দেহ কেটে সুটকেসে ভরে লোপাটের চেষ্টার অভিযোগ কুমোরটুলি কাণ্ডে ধৃত ফাল্গুনী ঘোষের বিরুদ্ধে। কিন্তু, অভিযুক্ত তরুণীর অপরাধের খাতায় নাম এই প্রথম নয়। বছর চার আগে পুলিশের হাতে গ্রেফতারও হয়েছিলেন তিনি। অভিযুক্ত তরুণী সম্পর্কে সামনে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। ঘটনাস্থল শিলিগুড়ি।

    জানা গিয়েছে, এর আগে শিলিগুড়ি থানার পুলিশ ফাল্গুনী ঘোষকে চুরির অভিযোগে গ্রেপ্তার করেছিল। ওই মামলায় চার দিন জেলও খেটেছিল অভিযুক্ত। এরপর জামিনে মুক্ত হয়ে অসমে শ্বশুরবাড়িতে ফিরে যায় সে। মনে করা হচ্ছে অপরাধে হাতেখড়ি সেখানেই।

    ঘটনাটি ২০২১ সালের জুলাই মাসের। পুলিশ সূত্রে খবর, মামাশ্বশুরের বাড়িতে ঘুরতে এসে মামীশাশুড়ির সোনার চেন গয়না সমেত নগদ ২৫ হাজার টাকা চুরি করে পালিয়ে গিয়েছিলেন ফাল্গুনী ঘোষ। সেই ঘটনাটি তদন্ত নেমে ফাল্গুনীকে গ্রেপ্তার করেছিল শিলিগুড়ি থানার পুলিশ।

    ঘটনার তদন্তকারী আধিকারিক উদয় চক্রবর্তী জানিয়েছেন, গ্রেপ্তারির পর সমস্ত সোনার গয়না উদ্ধার করা হয়েছিল অভিযুক্তের কাছ থেকেই। এই ঘটনা শুনে মনস্তত্ত্ববিদ বলছেন, অভিযুক্ত ফাল্গুনীর মধ্যে একটা অপরাধের প্রবণতা আগে থেকেই ছিল বলেই মনে হচ্ছে।

    বুধবার ফাল্গুনীর ভাসুর অর্থাৎ সুমিতা ঘোষের ভাইপো সপ্তক ঘোষ শিলিগুড়িতে মামার বাড়িতে এসেছিলেন। ফাল্গুনী প্রসঙ্গে প্রশ্ন করায় তাঁর বক্তব্য, ‘ভাইয়ের সঙ্গে দেখাশোনা করে বিয়ে হয়েছিল। আমরা একই বাড়িতে থাকতাম। কিন্তু, ফাল্গুনীর মধ্যে অপরাধে প্রবণতা ছিল সেটা বুঝেছিলাম। কারণ প্রায় বাড়িতে ঝামেলা করত। ভয় দেখাতো। আমার পিসিকে সম্পত্তির লোভে খুন করেছে ও। আমি ফাল্গুনীর ফাঁসি চাই।’

    অসমের জোরপাকড়ির বাসিন্দা ফাল্গুনী ঘোষ। ওই এলাকারই এক যুবকের সঙ্গে দেখাশোনা করে বিয়ে হয় তাঁর। বিয়ের পর ২০২১ সালের ৩ জুলাই শিলিগুড়ি সুভাষপল্লীতে মামাশ্বশুর সুব্রত ঘোষের বাড়িতে স্বামীর সঙ্গে বেড়াতে আসেন ফাল্গুনী। প্রায় এক মাস কাটিয়ে ৮ অগস্ট অসমে ফিরে যান ফাল্গুনী ও তাঁর স্বামী। ফাল্গুনী ফিরে যাওয়ার পর সুব্রতর স্ত্রী দেখতে পান বাড়িতে রাখা সোনার গয়না এবং নগদ পঁচিশ হাজার টাকা খোয়া গিয়েছে। এরপরই তাঁরা ১৩ অগস্ট শিলিগুড়ি থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে ঘটনার তদন্ত শুরু করে পুলিশ।

    ওই সময়ে যারা যারা সুব্রতর বাড়িতে গিয়েছিল তাদের সকলকে জিজ্ঞাসাবাদ করে শিলিগুড়ি পুলিশ। সেই মতো ফাল্গুনীকেও অসম থেকে ডেকে পাঠানো হয়। প্রথমে আসতে টালবাহানা করলেও পরবর্তীতে শিলিগুড়িতে এসে সঙ্গে দেখা করে ফাল্গুনী। এরপরে টানা পুলিশের জেরার মুখে পড়ে চুরির কথা স্বীকার করে সে। এরপরই পুলিশ অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠায়। ওই সময় আদালতে অভিযুক্তের জামিনের আবেদন খারিজ হয়ে যায়। পরে উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে অসম ফিরে যায় ফাল্গুনী।

    অসমে ফিরে স্বামী এবং পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঝামেলা করে মধ্যমগ্রামে চলে আসে অভিযুক্ত। সেখানে এসে স্বামী এবং পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে পাল্টা বধূ নির্যাতনের মামলা দায়ের করে ফাল্গুনী বলে জানা গিয়েছে। বারাসাত আদালতে এখনও চলছে সেই মামলা বলে জানিয়েছেন ফাল্গুনীর ভাসুর সপ্তক ঘোষ। । ওই মামলায় ফাল্গুনীর স্বামী-সহ পরিবারের লোকজনকে জামিনও নিতে হয়েছে। তবে এই বিষয়ে মামাশ্বশুর সুব্রত ঘোষ সংবাদমাধ্যমের সামনে কোনও মন্তব্য করেননি।

  • Link to this news (এই সময়)