অর্ঘ্য বিশ্বাস ■ লাটাগুড়ি
ঢুকলেই গা ছমছম করে। ক্রমশ আলো শুষে নিচ্ছে গাছপালা। বটের গা থেকে নেমে এসেছে ঝুরি। কোনও তীর্থ নয়। নেই কোনও রম্য মন্দির। কিন্তু এখানে কত মানুষ ছুটে আসেন উৎসব–পার্বণে। সেই মহাকালধামে হাতির ও মানুষের সংঘাত এড়াতে বন দপ্তর নজরদারি চালাবে। মহাকালধামে শিবরাত্রি উপলক্ষে ঢল নামবে মানুষের। তার আগে থেকেই নজরদারির ব্যবস্থা করা হয়েছে।
গোরুমারা ও লাটাগুড়িকে জুড়েছে যে জাতীয় সড়ক, তার মাঝামাঝি জায়গায় মহাকালধামের অবস্থান। এই পুরো এলাকা পর্যটকদের গন্তব্য। চারপাশে ঘন জঙ্গলে ঘেরা মহাকালধামের আশপাশ হাতির মুক্তাঞ্চল। গত কয়েক সপ্তাহে বিকেলের দিকে হাতি চলে আসছে মহাকালধামে। তার উপর সম্প্রতি ডুয়ার্সের বিভিন্ন জায়গায় হাতির সঙ্গে মানুষের সংঘাতের একের পর এক ঘটনা সামনে আসায় বিশেষ সতর্কতা নিচ্ছে। এমনিতে বিশেষ দিনগুলিতে বন দপ্তরের তরফে মহাকালধামে নজরদারির ব্যবস্থা থাকে। সশস্ত্র বনকর্মী মোতায়েন থাকেন। হাতি প্রায়শই এখান দিয়ে ঘোরাফেরা করে৷ গোরুমারা সাউথ রেঞ্জ এবং লাটাগুড়ি রেঞ্জের বনকর্মীদের পাশাপাশি ট্যুরিস্ট বন্ধু পুলিশ মোতায়েন থাকবে শিবরাত্রিতে। জলপাইগুড়ি বন বিভাগের ডিএফও বিকাশ ভি বলেন, 'মানুষ ও হাতির সংঘাত যাতে না ঘটে, সে জন্য বনকর্মীরা তৎপর থাকবেন।'
লাটাগুড়ির জঙ্গল ঘেরা মহাকালধামে পুজো দিতে গেলে টিকিট কাটতে হয় না। মন্দিরের সামনে লাইন দিয়ে গর্ভগৃহে প্রবেশের ঝক্কি নেই। নেই কোনও পুরোহিতের বালাই। নিজে হাতেই পুজো দেওয়ার সুযোগ রয়েছে মহাকালধামে। তাই এই মন্দিরের সফরের অভিজ্ঞতা একেবারেই আলাদা। তাই গোরুমারা ও লাটাগুড়ির মধ্যে যাতায়াতকারী পর্যটকরা মাঝেমধ্যেই ঢুঁ মারেন এখানে। এই দু'টি জায়গাকে সংযোগকারী জাতীয় সড়কের মাঝামাঝি জায়গায় মহাকালধামের অবস্থান। স্থানীয় বনবস্তিবাসীর পাশাপাশি দূরদূরান্ত থেকে আসা মানুষজনও পুজো সারেন এখানে।
যে কোনও দিন এখানে এসে পড়লে শোনা যাবে ঝিঁঝিঁ পোকার আওয়াজ, সঙ্গে নানা পাখির গুঞ্জন। কখনও আবার ভেসে আসে হাতির ডাক। এখানে কোনও সেবায়েত নেই, মানুষের পুজোর আদিম রূপ। পয়লা বৈশাখ হোক কিংবা শিবরাত্রি, শ্রাবণ মাসের সোমবার বা বিশেষ তিথিতে এখানে মানুষজন আসেন। হাতির হামলা থেকে অন্যান্য বিপদ–আপদ থেকে বাঁচতে বনবস্তির বাসিন্দাদের আশ্রয় এই মহাকালধাম। তাদের কয়েকজন দেখভাল করেন। এখন পুজোর থান ঘিরে চলছে শিবরাত্রির প্রস্তুতি।
কবে শুরু হলো এখানকার পুজো? স্থানীয় সূত্রের দাবি, ব্রিটিশ আমলে জঙ্গল কেটে রাস্তা তৈরি করছিলেন শ্রমিকরা। তাঁরা বামনী ঝোরার কাছে কয়েকটি পাথর একত্রিত করে মহাকাল অর্থাৎ শিবের পুজো করেন।
লাটাগুড়ির প্রবীণ বাসিন্দা ক্ষিতীশচন্দ্র সরকার বলেন, 'স্থানীয় মানুষজন ফসল রক্ষা, বন্যপ্রাণীর আক্রমণ থেকে রেহাই পেতে এখানে আসেন। দিনে দিনে এটা পর্যটকদের গন্তব্য হয়ে উঠেছে।' ডুয়ার্সের পর্যটন ব্যবসায়ী দিব্যেন্দু দেব বলেন, 'শুধু শিবরাত্রিই নয়, বছরভর মহাকালধামে কমবেশি মানুষের ভিড় থাকে। গোরুমারায় বেড়াতে এসে অনেকেই মহাকালধামে ঘুরে দেখতে চান।'