• কুল চাষ করেই পপুলার পিএইচডি পড়ুয়া পপি
    এই সময় | ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • প্রবীর কুণ্ডু, তুফানগঞ্জ

    পিএইচডি পড়ার মাঝে চাষ করার কথা শুনে জোর ধমক দিয়েছিলেন মা–বাবা। আত্মীয়রাও বাড়িতে এসে দু’কথা শুনিয়ে গিয়েছিলেন কোচবিহারের শীতলখুচির পপি বর্মনকে। ধান, তামাক, আলু চাষ ছেড়ে কুলের চাষ? প্রশ্ন তুলেছিলেন তাঁরা। নিজের জেদে অনড় থেকে বাপ–ঠাকুরদার জমিতে কুল চাষ করে আজ সফল তিনি৷ তাঁর কুল চাষের চার বিঘে জমি এখন হয়ে উঠেছে গ্রামবাসীদের বেড়ানোর জায়গা।

    প্রতিদিন কুল বাগানে বেড়াতে এসে সেলফি তুলছেন অনেকে। চাষের ব্যাপারেও পপির কাছে পরামর্শ নিচ্ছেন গ্রামের মহিলারা। শীতলখুচির ছোট শালবাড়িতেই থাকেন পপি। রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ে আদিবাসী জনজাতির উপরে পিএইচডি করছেন তিনি। পড়ার ফাঁকে গত বছরের শুরুতে এই জমিতে কী কী ফল চাষ করা সম্ভব, কৃষিকাজে অভিজ্ঞদের থেকে পরামর্শ নেওয়া শুরু করেন তিনি। অনলাইনেও চাষ সংক্রান্ত পড়াশোনা শুরু করেন। এরপরেই ধান চাষ বন্ধ করে বাড়ির পাশে কৃষিজমিতে শুরু করেন কুল চাষ। লাল হলদে আপেলের মতো দেখতে মিষ্টি স্বাদের ‘সুন্দরী কুল’। আর একটা টক–মিষ্টি ‘ভারত সুন্দরী’।

    পপি বলেন, ‘চাষ করতে দিতে প্রথমে বাবা–মা রাজি হয়নি। এমনকী আমি চাষ করব বলে অনড় থাকায় মা ও মামা বাড়ির বকুনিও খেয়েছিলাম। আজ কুল চাষে সফল হয়ে লাভের মুখ দেখায় পরিবার আমাকে আর কিছু বলে না। আমি চাই, গ্রামের আরও মহিলারা কৃষিকাজে এগিয়ে আসুক।’ তাঁর বাবা হীরেন্দ্রনাথ বর্মনের কথায়, ‘জমিতে মেয়ে কৃষিকাজ করবে তা মেনে নিতে পারিনি। লোকে কী বলবে সেটা সবসময় ভাবতাম। পাশাপাশি ধান–সব্জির বদলে ফল চাষে লোকসান হবে ভেবে দুশ্চিন্তায় ছিলাম। কিন্তু মেয়ে কুল চাষ করে সফল হয়ে নিজেকে প্রমাণ করেছে৷ এখন থেকে এই ফল চাষেই জোর দেবো।’

    জানা গিয়েছে, পাইকারি বাজারে এই কুলের দাম কেজি প্রতি সত্তর থেকে আশি টাকা৷ পপি বলেন, ‘আসলে অন্য ফসলের তুলনায় ফল চাষে কম পরিশ্রমে অনেক বেশি আয় হয়। তবে গ্রামের সাধারণ মানুষ ঝুঁকি নিতে কম চায় বলে বিকল্প ফল চাষে আগ্রহ কম দেখায়। বাড়ির মহিলারাও খুব অনায়াসে এই ফলের চাষ করতে পারেন৷’

    এ বছর ফের নিজের জমিতে দুই প্রজাতির কুলের পাশাপাশি রামবুটান, সবেদা, কমলা–সহ নানা ধরনের চাষ শুরু করেছেন তিনি৷ তবে মহিলা চাষির পক্ষে ফল বাগান দেখভাল করা, গাছেদের যত্ন নেওয়া কম ঝক্কির নয়৷ তবে সবটাই নিজেই সামাল দেন পপি। প্রতিদিন দিনে তিন থেকে চার ঘণ্টা সময় দেন গাছ পরিচর্যায়। গ্রামের মহিলারাও তাঁকে দেখে কৃষিকাজে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন৷ তাঁরাও পপির প্রশংসায় পঞ্চমুখ। সন্ধ্যা দাস, সুখবালা বর্মনদের কথায়, ‘পপির বাগানের কুলের স্বাদই আলাদা। গ্রামের সাধারণ মেয়ে ব্যবসায় সফল হয়েছেন, আমরা সত্যিই গর্বিত।’

  • Link to this news (এই সময়)