• সেজে উঠবে ঐতিহ্যবাহী জটিলেশ্বর–বটেশ্বর
    এই সময় | ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • বাসুদেব ভট্টাচার্য, ময়নাগুড়ি

    সময় বয়ে চলে তার নিজের খেয়ালে। সৃষ্টি–ধ্বংসের মধ্যে অনেক কিছুই অটল থাকে। তেমনই দুই পুরাকীর্তি জটিলেশ্বর ও বটেশ্বর শিবের মন্দির। এই দুই মন্দিরের সৌন্দর্যায়নের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে মহকুমা প্রশাসন।

    জলপাইগুড়ি জেলার একাধিক শৈবতীর্থে সাধারণ মানুষ ভিড় করেন বিভিন্ন পার্বণে। শিবরাত্রির আগে সর্বত্র প্রস্তুতি চূড়ান্ত পর্যায়ে। এরই মধ্যে সুখবর। ময়নাগুড়ি ব্লকের চূড়াভাণ্ডার গ্রামের জটিলেশ্বর মন্দির এবং মাধবডাঙা গ্রামের বটেশ্বর মন্দির দু’টিকে সাজিয়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে জেলা প্রশাসন। এই বিষয়ে ডিপিআর তৈরির জন্য ময়নাগুড়ির বিডিওকে নির্দেশ দিয়েছেন জলপাইগুড়ির মহকুমাশাসক তমোজিৎ চক্রবর্তী।

    শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, পূর্ব ভারতের অন্যতম প্রাচীন ময়নাগুড়ির তিনটি মন্দির। জল্পেশ, জটিলেশ্বর ও বটেশ্বর। প্রায় ১২০০ বছর আগে তৈরি হয়েছে দু’টি মন্দির। সেই সময়ের শিল্প ও নির্মাণশৈলীর ছাপ রয়েছে এই পুরাকীর্তিগুলিতে। এই মন্দিরের দেওয়ালের গায়ে গণেশ, সরস্বতী, মা লক্ষ্মীর মূর্তি রয়েছে। সেই সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে ইতিহাস। অনেক ওঠাপড়ার সাক্ষী এই মন্দির। সম্পূর্ণ বেলেপাথর দিয়ে তৈরি জটিলেশ্বর ও বটেশ্বর মন্দিরগুলির টানে শুধু ভক্তরা নন, ছুটে আসেন গবেষকরাও।

    মন্দির এবং মন্দিরের সব মূর্তি–সহ অন্যান্য সামগ্রী সংরক্ষণের জন্য প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগ থেকে সেখানে একটি সাইনবোর্ডও লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। কয়েক বছর আগে এই মন্দিরগুলি সংস্কার করার জন্য যখন মাটি খোঁড়া হচ্ছিল, তখন মাটির নীচ থেকে বেশ কিছু পাথর উঠে আসে। পুরোনো আমলের নিদর্শনও পাওয়া গিয়েছে— এর মধ্যে ছিল পাল আমলের শিলালিপি, বিভিন্ন ধরনের দেবদেবীর ছবি। সেই সময়ে খবর পেয়ে পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের আধিকারিকরা এই দু’টি মন্দির সরেজমিনে দেখতে আসেন। জটিলেশ্বর মন্দিরকে হেরিটেজ মন্দির ঘোষণা করেন তাঁরা। এ বার মন্দির দু’টিকে সাজিয়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে প্রশাসন।

    ইতিহাস গবেষক আনন্দগোপাল ঘোষ বলেন, ‘পুরোনো শৈলী বজায় রেখে মন্দির দুটির সৌন্দর্যায়ন হলে খুব ভালো হয়। আগামী ১৭ এপ্রিল বিশ্ব হেরিটেজ় দিবসে কোচবিহারে একটি অনুষ্ঠান রয়েছে। সেখানে ইতিহাস গবেষকদের পক্ষ থেকে আমরা এই প্রস্তাব দেবো। মহকুমাশাসক বলেন, ‘পর্যটন দপ্তরের কাছ থেকে সম্মতি মিলেছে। প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগের সঙ্গেও কথা হয়েছে। খুব তাড়াতাড়ি এ সব বিভাগের আধিকারিকরা এসে পরামর্শ দেবেন। তাঁদের পরামর্শ মতো মন্দিরগুলির সৌন্দর্যায়ন করা হবে। এই দু’টি মন্দিরকে পর্যটন মানচিত্রে জায়গা করে দিতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’

    লাটাগুড়ি রিসর্ট ওনার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক দিব্যেন্দু দেব জানিয়েছেন, পর্যটকরা জল্পেশ মন্দির দেখার সময়ে জটিলেশ্বর ও বটেশ্বর মন্দির ঘুরে দেখেন। তবে বটেশ্বর মন্দিরে গেলে পর্যটকরা শুধু একটা ধ্বংসাবশেষ দেখতে পান। সেই কারণে তাঁরা এই মন্দির সম্পর্কে বেশি কিছু জানতে পারেন না। সৌন্দর্যায়নেরর পাশাপাশি মন্দির সম্পর্কে যদি কিছু তথ্য তুলে ধরা হয় তাহলে ভালো হয়।’

  • Link to this news (এই সময়)