• বমি-মাথা ঘোরার উপসর্গ, ক্লাসরুমে অসুস্থ ১১ পড়ুয়া
    এই সময় | ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • এই সময়, কোলাঘাট: স্কুলে যাওয়ার পথে হাতে নাকি চকোলেট ধরিয়ে দিয়েছিল অজ্ঞাতপরিচয় দুই কিশোর। তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রটি তা সহপাঠীদের সঙ্গে ভাগ করে খায়। এর পরেই অসুস্থ হয়ে পড়ে ১১ জন স্কুলপড়ুয়া। অসুস্থ অবস্থায় তাদের নিয়ে যাওয়া হয় পাঁশকুড়া সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে। কোলাঘাটের উত্তর নারায়ণপাকুড়িয়া মহেন্দ্র প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ঘটনা। খবর পেয়ে এলাকায় পৌঁছয় পুলিশ ও মেডিক্যাল টিম। জেলার বাকি সমস্ত স্কুলকে সচেতন করেছে শিক্ষা দপ্তর।

    কোলাঘাট ১ চক্রের ওই স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা ১০২। শিক্ষক রয়েছেন পাঁচ জন। মঙ্গলবার তৃতীয় শ্রেণির এক পড়ুয়া স্কুলে যাওয়ার সময়ে তার পথ আগলে দাঁড়ায় সাইকেল আরোহী দুই অজ্ঞাতপরিচয় কিশোর। ওই ছাত্রের দাবি, দুই কিশোরের মধ্যে একজন তাকে জানায়, জন্মদিন উপলক্ষে সে তাকে কিছু চকোলেট দিতে চায়। এর পর ওই কিশোর তার হাতে চারটি চকোলেট ধরিয়ে দিয়ে সেগুলি বন্ধুদের সঙ্গে ভাগ করে খেতে বলে। ছাত্রটি জানিয়েছে, সে স্কুলে গিয়ে সবচেয়ে বড় প্যাকেটটি খুলে বন্ধুদের সঙ্গে ভাগ করে খেয়ে ফেলে।

    সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ প্রথম পিরিয়ড চলাকালীন স্কুলের তিন জন পড়ুয়া বমি করতে শুরু করে। এর পরে ধীরে ধীরে আরও কয়েক জন পড়ুয়ার মধ্যে বমি-মাথা ঘোরার মতো উপসর্গ দেখা যায়। স্কুলের শিক্ষকেরা সঙ্গে সঙ্গেই ১১ জন অসুস্থ পড়ুয়াকে পাঁশকুড়া সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।

    ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে রীতিমতো তোলপাড় পড়ে যায় এলাকায়। স্কুলে চলে আসেন অভিভাবকেরা। খবর পেয়ে আসে পুলিশও। স্কুলে মেডিক্যাল টিম পাঠায় স্বাস্থ্য দপ্তর। মেডিক্যাল টিমের সদস্যরা চকোলেটের প্যাকেটগুলি নমুনা হিসেবে সংগ্রহ করেন। দেখা যায়, প্রতিটি চকোলেটই মেয়াদ উত্তীর্ণ। স্কুলের প্রধান শিক্ষক মিলন রাউৎ বলেন, ‘আজ স্কুল চলাকালীন তৃতীয় শ্রেণির ১০ জন এবং দ্বিতীয় শ্রেণির একজন পড়ুয়া হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে। জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে পেরেছি, ওরা অচেনা দুই কিশোরের দেওয়া চকোলেট খেয়েছিল। হাসপাতালে চিকিৎসার পর সকলে সুস্থ রয়েছে। ওই দুই কিশোর কারা, সে ব্যাপারে সকলেই খোঁজখবর করছেন। পুলিশও তদন্ত শুরু করেছে।’

    কোলাঘাটের ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক শাম্ব ভৌমিক বলেন, ‘চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিয়ে এলাকায় গিয়েছিলাম। সমস্ত শিশুই ভালো আছে। আমরা ওদের স্বাস্থ্যের দিকে নজর রেখেছি। মেয়াদ উত্তীর্ণ চকোলেটের নমুনা সংগ্রহ করে এনেছি পরীক্ষা করে দেখার জন্য।’

    কোলাঘাটের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ প্রবীর ভৌমিক বলেন, ‘মেয়াদ উত্তীর্ণ চকোলেট খেলে বমি-মাথাধরার মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে। তবে কয়েক জনকে অসুস্থ হতে দেখে বাকিরাও আতঙ্কে অসুস্থ হয়ে থাকতে পারে। ল্যাবে পরীক্ষা করে দেখতে হবে, চকোলেটের সঙ্গে ক্ষতিকর কিছু মেশানো হয়েছিল কি না।’

    এই ঘটনার পরে জেলার একাধিক চক্রে বিজ্ঞপ্তি জারি করে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সতর্ক করা হয়েছে, যাতে স্কুলে যাতায়াতের পথে কোনও পড়ুয়া অপরিচিতের দেওয়া খাবার না খায়। কোলাঘাট ১ চক্রের ভারপ্রাপ্ত অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক সুপ্রতিম গায়েন বলেন, ‘পুলিশকে পুরো বিষয়টি জানানো হয়েছে। যারা চকোলেট দিয়েছিল, তাদের খোঁজ শুরু হয়েছে। চকোলেটগুলি কোন দোকান থেকে কেনা হয়েছিল, সে ব্যাপারেও পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। পড়ুয়াদের সচেতন করতে শিক্ষকদের উদ্দেশে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে।’

    প্রশ্ন উঠছে, ওই দুই কিশোর কারা? কী উদ্দেশ্যে তারা এলাকায় এসেছিল? নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অভিভাবক বলেন, ‘বাচ্চাদের ক্ষতির উদ্দেশ্যে মেয়াদ উত্তীর্ণ চকোলেট দেওয়া হয়েছিল বলে আশঙ্কা করছি। পুলিশ যেন বিষয়টি কড়া ভাবে দেখে।’

    কোলাঘাট থানার এক আধিকারিক বলেন, ‘তদন্ত শুরু হয়েছে। কারা চকোলেট দিয়েছিল, তা জানার জন্য এলাকার বিভিন্ন সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ চেক করা হচ্ছে।’

  • Link to this news (এই সময়)