• ডিকিতে পিসিশাশুড়ির দেহ, ‘দুপুরে ভাত-ডাল-আলুভাজা খাব’, ট্যাক্সিতে খোশগল্প মধ্যমগ্রামের মা-মেয়ের!
    প্রতিদিন | ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • অর্ণব দাস, বারাসত: ট্যাক্সির ডিকিতে রাখা নীল ট্রলি ব্যাগে পিসিশাশুড়ির দেহ। পিছনের আসনে মাস্ক পরে বসে মা-মেয়ে। তারাই সুমিতা ঘোষকে খুন করে দেহ টুকরো টুকরো করে ট্রলি ব্যাগে ভরে আহিরীটোলা ঘাটে ফেলতে যাচ্ছে। গায়ে কাঁটা দেওয়ার মতো এই মুহূর্তেও নাকি মা, মেয়ে ট্যাক্সিতে বসে আলোচনা করছিল, ‘দুপুরে বাড়ি ফিরে ডাল, ভাত আর আলুভাজা করে খেয়ে নেব।’ হাড়হিম করা এই খুন ও তারই টেক্সিতে লাশ নিয়ে লোপাটের আগে ধরা পড়ার ঘটনা জানার পর কীভাবে মা-মেয়ে ঠান্ডা মাথায় খাওয়ার আলোচনা করতে পারল, ভেবেই উঠতে পারছেন না শ্যামসুন্দর দাস।

    সোমবার খুব ভোরে থেকেই দোলতলা ট্যাক্সিস্ট্যান্ডে ভাড়ার অপেক্ষা করছিলেন তিনি। তখনই ভ্যানে ট্রালি ব্যাগ নিয়ে এসে শ্যামসুন্দরের সঙ্গে কুমোরটুলি যাওয়ার জন্য রীতিমতো দরদাম করেছিল ফাল্গুনী ঘোষ। ট্যাক্সি চালক ৭০০ টাকা ভাড়ার কথা বললেও সে প্রথমে ৫০০ টাকা দেবে বলে জানিয়েছিল। শেষে ৬০০ টাকা ভাড়া ঠিক হলে ট্রলি ব্যাগ ডিকিতে তুলতে সাহায্য করেন শ্যামসুন্দর। তখনই ট্রালি ব্যাগ ‘অতিরিক্ত ভারী’ বুঝতে পেরে সন্দেহ হয়েছিল তাঁর। এয়ারপোর্ট পেরিয়ে গাড়িতে তেল ভরার জন্য একটা পেট্রল পাম্পে দাঁড়িয়েছিল তাঁরা। যাত্রীর থেকেই ৫০০ টাকা নিয়ে তেল ভরে ছিলেন চালক। এরপর সোজা কুমোরটুলি। এই যাত্রাপথে পিছনের সিটে বসা মা আরতি সঙ্গে মেয়ের খুব একটা কথাবার্তা হয়নি। তবে, ট্যাক্সির পিছনের আসনে বসে মা-মেয়ের দুপুরে বাড়ি ফিরে খাওয়ার আলোচনা শুনে ভারী ট্রলি নিয়ে শ্যামসুন্দরের সন্দেহ কেটেছিল। ডিকিতে ভরার পর ট্রলি ব্যাগের এত ওজন! কি আছে? জিজ্ঞাসায় ফাল্গুনী বলেছিল, ‘কাঁসার বাসন, জামাকাপড় ও খাবার রয়েছে’– একথা বিশ্বাস করে নিয়েই কুমোরটুলিতে পৌঁছে ডিকি খুলে ট্রলি নামাতে তাদের সাহায্য করেছিল সে। কিন্তু বেলা বাড়তেই পিসিশাশুড়ি খুনের ঘটনা নিয়ে তোলপাড় পড়তেই সে বুঝতে পারে সন্দেহ সঠিক ছিল।

    বুধবার দোলতোলা ট্যাক্সি স্ট্যান্ডে দাড়িয়েই মধ্যমগ্রাম বিধানপল্লির বাসিন্দা শ্যামসুন্দর বলেন, “ট্রলিটা যে ভারী সেটা বুঝতে পেরেছিলাম। কিন্তু ডিকিতে ট্রলি ওঠানো বা নামানোর সময় কোন রক্ত বা গন্ধ কিছু পাইনি। আমি ৩০বছর ধরে ট্যাক্সি চালাচ্ছি। এমন ঘটনা শোনার পর থেকে স্ত্রী, ছেলে খুব আতঙ্কে রয়েছে।” তাকে ইতিমধ্যেই মধ্যমগ্রাম থানায় ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন তদন্তকারীরা। ভ্যানচালক হারাধন হালদারকেও থানায় তলব করা হয়েছিল। তিনিও ট্রলি ব্যাগে খণ্ডবিখণ্ড দেহ উদ্ধারের ঘটনা জেনে তাজ্জব হয়ে গিয়েছেন। ঠিক করেছেন, আর কখনও ভারী ব্যাগ বা ট্রলি ব্যাগ থাকা যাত্রী ভ্যানে তুলবেন না। প্রতিদিনের মতো সোমবার ভোরেও ভ্যান নিয়ে দক্ষিণ বীরেশপল্লীর গীতশ্রী মোড়ে যাত্রীর অপেক্ষায় ছিলেন হারাধন। ওই সময় প্রাতঃভ্রমণকারী একজন যাওয়ায় সময় বাড়ির গলিতে দাঁড়িয়ে ফাল্গুনী তাকে একটি ভ্যান চালককে পাঠিয়ে দেওয়ার কথা বলেছিলেন। সেই প্রাতঃভ্রমণকারীর থেকে ভাড়ায় যাওয়ার কথা শুনে হারাধন ভ্যান নিয়ে গলিতে আসেন। হারাধনের বয়ান অনুযায়ী ফাল্গুনী তাকে বলেছিল, ‘বাড়িতে একটা ট্রলি আছে। সেটা নিয়ে দোলতলায় যেতে হবে।’ ভাড়া ঠিক হয় ১৩০ টাকা। সেইমত চালক ভ্যান নিয়ে তাদের বাড়ির সামনে আসার পর ফাল্গুনী এবং আরতি ঘর থেকে ট্রলি নিয়ে ভ্যানে তোলে। ভ্যানের সামনের এদিকে বসেছিলেন ফাল্গুনী, মাঝখানে রাখা ছিল নীল রঙের ট্রলি ব্যাগ আর পিছনে বসেছিল আরতি। বটতলা কালীবাড়ি হয়ে পাইকপাড়ার রাস্তা দিয়ে তাঁর ভ্যানে যশোর রোড উঠে দোলতলায় পৌঁছয় মা ও মেয়ে। হারাধন বলেন, “যে ভদ্রলোক আমাকে ভাড়া যাওয়ার কথা বলেছিলেন, তাঁকে আমি চিনি না। ওই ট্রলি থেকে কোন গন্ধ পাইনি, রক্তের কোন দাগও দেখিনি। পড়ে খবর শুনে শিউরে উঠি। আর কখনও ভারী ব্যাগ বা ট্রলি ব্যাগ থাকা যাত্রীদের ভ্যানে তুলব না।”
  • Link to this news (প্রতিদিন)