সংবাদদাতা, কান্দি: ঘাট বৈধ হলেও বালি তোলা হচ্ছে অবৈধভাবে। তোয়াক্কা করা হচ্ছে না সরকারি নিয়মের। বিশাল মেশিন বসিয়ে নদী থেকে দেদার বালি তুলে তা বিক্রি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। ফলে নদীগর্ভে তৈরি হচ্ছে শূন্যস্থান। যাতে নদীর পাড়ে ধস নামার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এমনকী, বাঁধ ভেঙে বন্যার আশঙ্কাও রয়েছে। কান্দি মহকুমার বিভিন্ন বালি খাদানের এমন ঘটনা নিয়ে উদ্বিগ্ন পরিবেশবিদরা।
জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, নির্দিষ্ট বালি খাদানে সরকারিভাবে সীমানা নির্ধারণ করা হয়। সেই এলাকায় নদীর উপরের স্তর থেকেই বালি তোলার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু কান্দি মহকুমার বিভিন্ন বালি খাদানগুলিতে এই নিয়মের তোয়াক্কা করা হচ্ছে না। বড় মেশিন বসিয়ে নদীর গভীর থেকে বালি তোলা হচ্ছে। এর ফলে নদীর গভীরে তৈরি হয়েছে শূন্যস্থান। যার ফলে আগামী বর্ষাতে নদীর ধারে ধস নামার আশঙ্কা করছেন বাসিন্দারা। প্রসঙ্গত, কান্দি মহকুমার উপর দিয়ে বয়ে গিয়েছে কুয়ে, ময়ূরাক্ষী, কানা ময়ূরাক্ষী, দ্বারকা, ব্রাহ্মণী, বাবলা নদী। প্রায় সব নদীগুলি থেকেই বালি তোলা হয়ে থাকে। কোথাও সরকারি লিজ দেওয়া হয়। আবার কোথাও অবৈধভাবে বালি তোলে মাফিয়ারা।
বাসিন্দাদের অভিযোগ, সম্প্রতি ভরতপুর-১ ব্লকের কুয়ে নদীর ধোপঘাট ও তালগ্রাম বালি খাদানে মেশিন ব্যবহার করে বালি তোলা হয়েছে। এছাডাও বড়ঞা ব্লকের দুর্গি, পেটারি, তালবোনা, রাজহাট বালি খাদানগুলিতেও বিশেষ মেশিন ব্যবহার করা হয়েছে। এই বিশেষ মেশিনে একটি পাইপ নদীর ভূগর্ভে প্রবেশ করে। এরপর সেখান থেকে জল সহ বালি তুলে দেয় মেশিন। জল শুকিয়ে বালি বিক্রি করা হয়। নদীগর্ভ থেকে বালি তোলার জন্য সাধারণত একটি পাম্প মেশিন বসানো হয়। যেটি নৌকার উপর বসানো থাকে। কিন্তু কান্দির বালিখাদানগুলিতে ঝাড়খণ্ড থেকে ভাড়া করে এই বিশেষ মেশিন আনা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
পেটারি গ্রামের চাষি সুব্রত মণ্ডল বলেন, নদীতে প্রায় দেড় মাস ধরে মেশিন চলেছে। এখন আমাদের নদীর উপর দিয়ে হাঁটতেও ভয় করে। কারণ যেখানে ওই মেশিনে বালি তোলা হয়, সেই জায়গায় চোরাবালির স্তর হয়ে যেতে পারে। আগামী বর্ষায় ওই সকল জায়গায় ধস নামবে। এমনকী, নদীর বাঁধও ভেঙে গিয়ে এলাকা প্লাবিত হতে পারে। যা নিয়ে উদ্বিগ্ন পরিবেশবিদরাও। খড়গ্রামের পরিবেশবিদ মিহিরকুমার মণ্ডল বলেন, এই ঘটনাকে নদীর সঙ্গে বিমাতৃসুলভ আচরণ করা বলা চলে। এতে নদীর অভিমুখের পরিবর্তন হতে পারে। এমন ঘটনায় নদী তার চরিত্রও হারাবে। কান্দির বিধায়ক অপূর্ব সরকার বলেন, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর পরিষ্কার নির্দেশ রয়েছে সরকারি নিয়ম না মেনে বালি তুললেই এফআইআর করতে হবে। এই বিষয়টি নবান্নে জানানো হবে।
যদিও বড়ঞার বিএলএলআরও সৌভিক সাহা বলেন, আমি সম্প্রতি কাজে যোগ দিয়েছি। এমন ঘটনা এখনও আমার চোখে পড়েনি। কান্দির মহকুমা শাসক উৎকর্ষ সিং বলেন, খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।