• ভাইরাল ভিডিওতেই ‘ফিনিশ’ সুশান্ত ঘোষ
    বর্তমান | ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • রাজদীপ গোস্বামী, চন্দ্রকোনা রোড: বর্তমান যুগে সোশ্যাল মিডিয়ার প্ল্যাটফর্ম যেন সাপ-লুডো খেলা! আজ যিনি সিঁড়ি দিয়ে উপরে, কাল তিনি সাপের মুখে! যা এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন গড়বেতার একদা ‘মুকুটহীন সম্রাট’ সুশান্ত ঘোষ। 


    পঞ্চায়েত থেকে লোকসভা নির্বাচনে মিটিং-মিছিলে প্রথম সারিতে থাকতেন দোর্দণ্ডপ্রতাপ এই সিপিএম নেতা। সংগঠনের একাধিক কাজকর্মেও তাঁকে দেখা গিয়েছে স্বমহিমায়। সেইসব কর্মসূচি সোশ্যাল মিডিয়ার একাধিক প্ল্যাটফর্মে পোস্ট করতেন পার্টি কর্মীরা। ঝড়ের গতিতে ভাইরাল হতেন সুশান্তবাবু। সেই প্ল্যাটফর্মই ‘ফিনিশ’ করে দিল তাঁকে। সম্প্রতি এক মহিলার সঙ্গে তাঁর অবৈধ সম্পর্কের ভিডিও ভাইরাল হয়। সেই অভিঘাতেই রাজ্য কমিটি থেকে তিনি বাদ পড়েছেন বলে গড়বেতার একটা বড় অংশের মানুষের মত। জেলা সিপিএমের এক নেতাও বলছেন, ‘পার্টির সিদ্ধান্ত একেবারে সঠিক।’ এদিকে, সুযোগ বুঝে সুশান্তবাবুর বিরুদ্ধে আক্রমণ শানিয়েছেন শাসক দল তৃণমূল থেকে বিজেপিও। তবে, যাঁকে নিয়ে বুধবার দিনভর জেলা-রাজনীতি তোলপাড়, সেই সুশান্তবাবুর ফোনের সুইচ অফ। তাঁকে মেসেজ করা হলেও কোনও জবাব মেলেনি গভীর রাত পর্যন্ত। 


    তখন আশির দশক। রাজ্যের বাম শাসন মধ্যগগনে। দক্ষ সংগঠক ছিলেন সুশান্তবাবু। সেই সূত্রে পার্টিতে উত্থান। তারপর ১৯৮৭ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত টানা ২৯ বছর গড়বেতা পূর্ব বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক। এই সময়ের মধ্যে তাঁর দাপট ছিল প্রশ্নাতীত। জনশ্রুতি, সুশান্তবাবুর কথা ছাড়া গড়বেতার একটা গাছেরও পাতা নড়ত না। তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক সন্ত্রাসের অভিযোগও ওঠে। ছোটআঙারিয়া তার অন্যতম দৃষ্টান্ত। পরে সুশান্তবাবুর নাম জড়ায় গড়বেতা কঙ্কালকাণ্ডেও। রাজ্যে  পালাবদল হতেই তাঁকে জেলও খাটতে হয় বেশ কয়েকবছর। সেই সঙ্কট সামলে জেলা-রাজনীতিতে ক্রমেই ঘুরে দাঁড়াচ্ছিলেন তিনি। হয়েছিলেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সিপিএমের সম্পাদকও। ভেঙেচুরে যাওয়া সংগঠন ধীরে ধীরে গোছাচ্ছিলেন। এর মধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়ে পড়ে। সেখানে দেখা যায়, এক মহিলার সঙ্গে সুশান্তবাবুর ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের দৃশ্য (যদিও ভিডিওর সত্যতা যাচাই করেনি ‘বর্তমান’)। 


    বস্তুত, এই ঘটনার পর থেকে সুশান্তবাবুর ঘুরে দাঁড়ানোর কেরিয়ারে অবনমন শুরু হয়। ঘরে-বাইরে তীব্রভাবে সমালোচিত হতে থাকেন। বিষয়টি কানেও যায় সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্বের। পার্টির তরফে অভ্যন্তরীণ তদন্তও শুরু হয়। তখনই রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন ছড়িয়েছিল, রাজ্য কমিটি থেকে এবার বোধহয় ছেঁটেই ফেলা হবে তাঁকে। সেটাই সত্যি হল সিপিএমের রাজ্য সম্মেলনে। বাদ পড়লেন সুশান্তবাবু। নেপথ্যে ওই ভিডিও-কাণ্ডের দিকে আঙুল তুলেছেন বিরোধী দল থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষও।  


    জেলা তৃণমূলের সভাপতি সুজয় হাজরা বলেন, ‘যে দল রাজ্যের মহিলা সুরক্ষা নিয়ে প্রশ্ন তোলে, সেই দলের নেতা মহিলাদের সম্মান নিয়ে খেলা করে।  সুশান্তবাবুর গায়ে এখনও রক্তের দাগ লেগে রয়েছে। ওঁর অত্যাচার মানুষ ভুলবে না।’ ঘটনাচক্রে এদিন সুশান্তবাবুর চন্দ্রকোণা রোডের বাড়ির পাশে এসেছিলেন বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ। তিনি বলেন,  ‘সুশান্তবাবুকে অনেক আগেই বাদ দেওয়া উচিত ছিল।’ 


    এদিকে, সুশান্তবাবুকে রাজ্য কমিটি থেকে সরিয়ে দেওয়া নিয়ে জেলা সিপিএমের কোনও শীর্ষ নেতা মুখ খোলেননি। জেলার এক নেতা কীর্তি দে বক্সি শুধু বলেছেন, ‘দলের সিদ্ধান্ত সঠিক।’ সুশান্তবাবুর একসময়ের ডান ও বাম হাত বলে পরিচিত ছিলেন তপন ঘোষ ও সুকুর আলি। সুকুর সাহেব দীর্ঘদিন ধরেই সংগঠনের কাজকর্ম থেকে বিচ্ছিন্ন। এ বিষয়ে তাঁর প্রতিক্রিয়া মেলেনি। তপনবাবু অসুস্থ। তিনি কলকাতায় গিয়েছে। ফোনে বলছিলেন, ‘সুশান্তবাবুর সম্পর্কে দল আমার কাছ থেকে কিছু জানতে চায়নি। ফলে, আমি বিষয়টি নিয়ে সেরকম কিছু জানি না।’   


    এদিন চন্দ্রকোণা রোডের এক বাসিন্দা বলছিলেন, ‘সুশান্তবাবুকে অনেক আগেই পার্টি থেকে বহিঃষ্কার করা উচিত ছিল। ওঁর অনেক আত্নীয়-স্বজনও নানা কু-কাজের সঙ্গে যুক্ত।’ আর এক বাসিন্দা চন্দন ঘোষের কথায়, ‘একটা ভিডিও ওঁর রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিল।’ ফাইল চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)