সংবাদদাতা, রামপুরহাট: মূক ও বধির গৃহবধূকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠল পঞ্চায়েতের সদস্যার স্বামী তথা এলাকার তৃণমূল কংগ্রেস নেতার বিরুদ্ধে। নির্যাতিতার স্বামী থানায় অভিযোগ করায় তাঁর বাড়ির পানীয় জলের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার পাশাপাশি জল নিকাশির রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। মুরারই থানার একটি গ্রামে এই ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। রামপুরহাট মহকুমা পুলিস আধিকারিক গোবিন্দ সিকদার বলেন, অভিযুক্ত নেতা পলাতক। তার খোঁজ চলছে। বুধবার পুলিসের পক্ষ থেকে নির্যাতিতার ডাক্তারি পরীক্ষার পাশাপাশি রামপুরহাট আদালতে পাঠানো হয়।
মঙ্গলবার বছর পঁয়ত্রিশের ওই গৃহবধূ বাড়িতে একাই ছিলেন। তাঁর স্বামী গ্রামে ঘুরে ঘুরে সব্জি বিক্রি করেন। এক মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। নাবালক ছেলে সেই সময় টিউশন পড়তে গিয়েছিল। গৃহবধূর স্বামী বলেন, সকাল ৮টার সময় বাড়ি থেকে কাজে বেরিয়ে যায়। শরীর খারাপ করায় দু’ঘণ্টা পর বাড়ি ফিরে এসে দেখি, ঘরের দরজা ভিতর থেকে বন্ধ। অনেক ডাকাডাকির পর স্ত্রী দরজা খোলে। দেখি খাটের তলায় পঞ্চায়েত সদস্যার স্বামী তাপস মণ্ডল লুকিয়ে আছে। আমাকে দেখে পালানোর চেষ্টা করে। তার সঙ্গে আমার ধস্তাধস্তি হয়। আমার চিৎকারে স্থানীয়রা এলে সে পালিয়ে যায়।
এরপর স্ত্রীর কাছ থেকে সব জেনে গৃহবধূর স্বামী বিকেলের দিকে ওই তৃণমূল নেতার নামে থানায় ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করেন। তাঁর অভিযোগ, বাড়িতে মূক ও বধির স্ত্রীকে একা পেয়ে ধর্ষণ করা হয়েছে। কাউকে জানালে আমাদের প্রাণে ফেলার হুমকিও দিয়েছে। এদিকে থানায় অভিযোগ জানানোয় নির্যাতিতার বাড়ির পানীয় সংযোগ ভেঙে দেয় অভিযুক্ত ও তার বাড়ির লোকজন। তাঁর বাথরুমের জল নিকাশির পথও বন্ধ করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ।
নির্যাতিতার মেয়ে বলেন, ভাঙচুরে বাধা দেওয়ায় বৃদ্ধ ঠাকুমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় অভিযুক্ত। সেই সঙ্গে বলতে থাকে গ্রামে বসবাস করতে পারবি না। হাত, পা ভেঙে দেব। শুধু তাই নয়, মুর্শিদাবাদে আমার শ্বশুরবাড়ির গ্রামের তৃণমূল নেতাদের ফোন করে বলেছে, আমার স্বামী বাবাকে উসকে থানায় অভিযোগ দায়ের করিয়েছে। যাতে সেখানকার নেতারা আমাদের বেকায়দায় ফেলে। আমরা খুব আতঙ্কে রয়েছি। দুঃস্থ নির্যাতিতার পরিবারের উপর অত্যাচারের ঘটনা ছড়িয়ে পড়তেই এলাকায় উত্তেজনা তৈরি হয়। যদিও পরে তৃণমূল নেতাদের নির্দেশে আবার পানীয় জলের সংযোগ ও নিকাশির পথ খুলে দেওয়া হয়।
ঘটনার পর এদিন সকাল থেকে বেপাত্তা অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা। তবে তাঁর স্ত্রী সাথী মণ্ডল বলেন, ওই মহিলা পুরোপুরি মূক ও বধির তা নয়। স্বামী মাঠ থেকে ফিরে বাড়ি ঢুকতে যাবে এমন সময় ওদের শট সার্কিট হয়ে যাওয়ায় আমার স্বামীকে ডাকে ওই মহিলা। আমার স্বামী মেন সুইচ নামিয়ে বেরিয়ে আসার সময় ওই মহিলার স্বামী ঘরে ঢোকে। তাঁর অবর্তমানে বাড়িতে ঢোকা আমার স্বামীর অপরাধ হয়েছে। চক্রান্ত করেই এই ঘটনা সাজানো হয়েছে। কারণ কিছুদিন আগে সরকারি বাড়ি নিয়ে গ্রামে ঝামেলা হয়েছিল। তখন ওই পরিবারকে আমল দেয়নি আমার স্বামী। তাতেই মিথ্যা অভিযোগ করেছে।
এবিষয়ে তৃণমূলের ব্লক সভাপতি বিনয় ঘোষ বলেন, অভিযোগকারী পরিবার বিজেপি করে। ফলে এর মধ্যে চক্রান্ত থাকতে পারে। আর অভিযোগ সঠিক হলে আইন আইনের পথে চলবে।