নিজস্ব প্রতিনিধি, বহরমপুর: বার বার বাংলাদেশি দুষ্কৃতীরা ভারতে অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালাচ্ছে! অনুপ্রবেশকারীদের রুখতে মুর্শিদাবাদের জলঙ্গিতে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে গুলি চলল। বুধবার গভীর রাতে জলঙ্গির চরভদ্রা এলাকায় বেশ কিছু বাংলাদেশি অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশের চেষ্টা করছিল। সেসময় বিএসএএফ তাদের রোখার জন্য গুলি চালায়। তবে এই ঘটনায় কেউ জখম হয়নি বলে জানিয়েছেন বিএসএফের এক আধিকারিক। শূন্যে গুলি ছোড়া হয়েছে বলেই জানা গিয়েছে। এই ঘটনায় রীতিমতো চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে সীমান্ত এলাকায়।
বাংলাদেশে অশান্ত পরিস্থিতিতে বারবার মুর্শিদাবাদ সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছে ওপারের বাসিন্দারা। তাই গত কয়েক মাস ধরে ভারতের সীমান্তে পাহারা বাড়িয়েছে সীমান্তরক্ষী বাহিনী। তাদেরই তৎপরতায় বারবার ধরা পড়ছে বাংলাদেশিরা। সীমান্ত লাগোয়া থানাগুলির পুলিসও নজরদারি বাড়িয়েছে। তবে এদিন গভীর রাতে যে দলটি ভারতে আসার চেষ্টা করছিল তারা বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ নয়। ওরা সকলেই দুষ্কৃতীদলের সদস্য ছিল বলেই গোয়েন্দা সূত্রে খবর।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার রাত একটা নাগাদ রাতের অন্ধকারে একদল বাংলাদেশি দুষ্কৃতীকে দেখে শূন্যে একটি রাউন্ড গুলি ছোড়ে বিএসএফ।
এক আধিকারিক বলেন, রাতের টহলদারির সময় আমাদের জওয়ানরা দেখতে পায়, আন্তর্জাতিক সীমানা পেরনোর চেষ্টা করছিল একদল বাংলাদেশি। তাই তাদের সতর্ক করার জন্য পাম্প অ্যাকশন গান থেকে এক রাউন্ড গুলি চালানো হয়েছে। তবে এই ঘটনায় কারও কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
স্থানীয় এক বৃদ্ধা অর্চনা হাজরা বলেন, রাত একটা নাগাদ গুলির আওয়াজ শুনেছি। কে বা কারা গুলি চালাল, সেটা আমরা ঘরের মধ্য থেকে বুঝতে পারিনি। তবে রাতের দিকে এমন আওয়াজ শুনলে খুব আতঙ্ক হয়। মাঝে মধ্যেই পাশের গ্রাম দিয়ে বাংলাদেশের লোকজন ভারতে ঢোকার চেষ্টা করে। ওরা এখানে এসে কখন কোথায় তাণ্ডব চালায়, সেই আতঙ্কেই থাকি। চোরাচালানকারীদের উপদ্রব আছে। বিএসএফ তাদের মাঝেমধ্যেই পাকড়াও করে। অনেক সময় এই পাচারকারীদের আটকানোর জন্য বিএসএফ গুলি ছোড়ে। বাংলাদেশিরাও সীমান্ত পেরনোর চেষ্টা করলে গুলি ছোড়া হয়।
চরভদ্রা গ্রামের অপর এক বাসিন্দা বলেন, আমাদের গ্রামে কোনও সমস্যাই ছিল না। বাংলাদেশ অশান্ত হওয়ার পর গত কয়েক মাসে মাঝেমধ্যেই অনুপ্রবেশের চেষ্টা হচ্ছে। বিএসএফ আমাদেরকে সতর্ক করেছে। গ্রামে যাতে শান্তি বজায় থাকে আমরা সেই চেষ্টা করছি। বাইরে থেকে কেউ এসে এখানে ঘাঁটি গাড়লে আমরা স্থানীয় বিএসএফকে তৎক্ষণাৎ জানিয়ে দেব।
এভাবে বারবার অনুপ্রবেশের চেষ্টার ঘটনায় রীতিমতো উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বহরমপুরের কংগ্রেসের প্রাক্তন সাংসদ অধীর চৌধুরী। তিনি বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের যে সীমান্ত, সেখানে সর্বত্র কাঁটাতার নেই। বছরের পর বছর ধরে এভাবেই যাতায়াত হয়ে এসেছে। বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতির কারণে ওপার বাংলা এবং এপার বাংলার মানুষের দুরবস্থা বাড়ছে। এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যের। এই ধরনের উত্তেজনা বন্ধ করার জন্য ওপারের সরকার এবং এপারের সরকার— দু’জনকেই দায়িত্ব নিতে হবে। যতদিন পর্যন্ত দু’টো দেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক না হবে, ততদিন দেশের সীমান্তে উত্তেজনা থাকবে।