• রাজ আমলের স্মৃতি বিজরিত হাতিন্দার শিবমন্দিরে হাজার হাজার ভক্তের সমাগম
    বর্তমান | ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • সংবাদদাতা, চাঁচল: কথিত রয়েছে, শিবরাত্রি তিথিতেই নাকি হরপার্বতীর পরিণয়। আর সেই পার্বতীকে পাশে নিয়ে চাঁচলের হাতিন্দায় যুগ যুগ ধরে পুজিত হয়ে আসছেন দেবাদিদেব মহাদেব। সময়টা বহু পুরোনো। দুর্গম দুর্ভেদ্য ঘন জঙ্গলের মাঝে মাটির বুক চিরে বেরিয়ে এসেছিল শিবলিঙ্গ। আর সেই ভক্তিতে ভর করে আজও হাজার হাজার ভক্তের সমাগম রয়েছে মালদহের চাঁচলের হাতিন্দার শিবমন্দিরে।


    প্রতিবছর মহা শিবরাত্রি তিথি ও শ্রাবণ মাসের প্রতি সোমবারে এখানে ভক্তদের সমাগম ঘটে। বুধবার মহাশিবরাত্রি তিথিতেও দেখা গেল একই ছবি। সারাদিন কাতারে কাতারে মানুষ সেখানে ভিড় জমান। শিবলিঙ্গে জল ঢালতে উপচে পড়া লাইন লক্ষ্য করা যায়। হরিশ্চন্দ্রপুর থেকে আসা এক ভক্ত সুনীতা সাহা বলেন, এখানে মহাদেব জাগ্রত। প্রতিবছর এখানে পরিবার নিয়ে আসি। এবারও সেটা ভুলিনি। কমিটি সূত্রে জানা গিয়েছে, সারাদিনের পাশাপাশি রাতেও ভক্তদের ভিড় ছিল। তাদের নিরাপত্তার জন্য একাধিক জায়গায় সিসিক্যামেরা লাগানো হয়েছে। পুলিসের তরফেও নিরাপত্তার তোড়জোর ছিল। মহা শিবরাত্রি উপলক্ষ্যে হাতিন্দায় মেলা বসে। এই পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে চাঁচলের রাজার ইতিহাস। কথিত আছে, প্রায় তিন’শো বছর আগে হাতিন্দায় ঝোঁপে জঙ্গলের মধ্য পাথরের শিবলিঙ্গ দেখতে পান এলাকার সমাচরণ দাস। তিনি চাঁচলের রাজা ইশ্বরচন্দ্র রায়চৌধুরীর রাজ দরবারে প্রহরীর কাজে নিযুক্ত ছিলেন। তিনিই প্রতি সোমবার শিবঠাকুরের পুজো দিতেন সেখানে। ফলে রাজ দরবারে হাজির হতে দেরি হত। একদিন রাজা দেরি হওয়ার কারণ জানতে চাইলে সমাচরণ ঘটনাটা তাঁকে জানিয়ে দেন। তারপরেই রাজা হাতিতে চাপিয়ে সেই শিবলিঙ্গ রাজবাড়িতে নিয়ে যান। পরে স্বপ্নাদেশ পেয়ে হাতিন্দাতেই বহাল রেখে আসেন শিবলিঙ্গকে। সমাচরণকে প্রতি সোমবার ছুটি দিতেন রাজা। এই কাহিনী আজও লোকমুখে প্রচলিত। মন্দির কমিটি সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৩৪৩ সনে মকদমপুরের চন্দ্রমোহন সাহা, ননীগোপাল সাহা এবং গিরিশগোপাল সাহা উদ্যোগী হয়ে হাতিন্দার শিবমন্দির নির্মাণ করেন। পরে পাশেই নির্মিত হয় পার্বতী ও বজরংবলি মন্দির। বর্তমানে মা মনসা মন্দির নির্মাণের কাজ শুরু হয়। মন্দির কমিটির কোষাধ্যক্ষ প্রভাত দাস এদিন বলেন, রাজার ইতিহাস জড়িয়ে থাকায় এখানে ভক্তদের ঢল নামে। অসম, বিহার এবং ঝাড়খন্ড সহ মালদহ জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এখানে ভক্তরা আসেন। শিবরাত্রি তিথিতে ভোগেরও আয়োজন করা হয়। নিরাপত্তার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রয়েছে।
  • Link to this news (বর্তমান)