মহানন্দায় স্নানের পর ২০ কিমি হেঁটে সরাইদিঘি মন্দিরে পুজো শিবভক্তদের
বর্তমান | ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
সংবাদদাতা, ইটাহার ও হবিবপুর: শিবচতুর্দশীতে মহানন্দা নদীতে স্নান সেরে প্রায় ২০ কিমি হেঁটে ইটাহারের সরাইদিঘি শিবমন্দিরে জল ঢাললেন পুণ্যার্থীরা। বুধবার সকাল থেকেই ইটাহারের চূড়ামণে মহানন্দা নদীর ঘাটে কাতারে কাতারে মানুষ আসেন। পুণ্যস্নান সেরে ও নদীর জল নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে মন্দিরের অভিমুখে যান শিবভক্তরা। দিনভর লক্ষাধিক ভক্তের সমাগম হয় মহানন্দার ঘাটে। নদীর পাড়ে বসেছে মেলাও। এদিন ভক্তদের সঙ্গে সৌজন্য বিনিময় এবং সামগ্রিক পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে চূড়ামণে যান ইটাহারের বিধায়ক মোশারফ হুসেনও। মালদহের বামনগোলা ব্লকের নালাগোলার প্রাচীন শৈবতীর্থ তিলভাণ্ডেশ্বর মন্দিরেও ঢল নামে।
এদিন সকালের পর থেকেই ভিড়ে থিকথিক করছিল মহানন্দার ঘাট চত্বর। স্থানীয়রা বলছেন, আগে এখানে ভক্তের সমাগম কম থাকত। কিন্তু কুড়ি বছর ধরে চূড়ামণের মহানন্দার এই ঘাটে ভক্ত সমাগম কয়েক গুণ বেড়েছে। এখন লক্ষাধিক ভক্ত নদীতে স্নান সেরে মন্দিরের উদ্দেশে যাত্রা করে। শুধু ইটাহার ব্লক থেকেই যে পুণ্যার্থীরা ভিড় করেন তা কিন্তু নয়। পার্শ্ববর্তী দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার হরিরামপুর, কুশমণ্ডি থেকেও মানুষজন আসেন। উত্তর দিনাজপুর জেলার কালিয়াগঞ্জ ও রায়গঞ্জ থেকেও শিবভক্তরা আসেন ইটাহারে। নদীঘাটে কেউ যান হেঁটে, আবার কেউ গাড়িতে। তারপর আবার যাত্রা।
নদীতে পুণ্যস্নানের পর ঘাটে পুজো দেন ভক্তরা। তারপর প্রায় ২৫ কিমি হেঁটে
ইটাহারের সরাইদিঘি শিবমন্দিরে আসেন ভক্তরা। মন্দিরে ঢোকার আগেই দীর্ঘলাইন পড়ে। এদিন কয়েকঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে পুজো দেন অয়ন দাস, মিনতি রায়ের মতো বহু ভক্ত। শিবের মাথায় জল ঢেলে মন্দির থেকে বেরিয়ে অয়ন বলেন, প্রতিবছরের মতো এবারও হেঁটে মহানন্দায় এসে জল নিয়ে মন্দিরে এসেছি।
পুণ্যার্থীদের শিবরাত্রির শুভেচ্ছা জানাতে মহানন্দার পাড়ে দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে উপস্থিত হন ইটাহারের বিধায়ক। শুভেচ্ছা বিনিময়ের পাশাপাশি ভক্তদের সুবিধা-অসুবিধার খোঁজ নেন। মহানন্দার পাড়ে জলসত্রের আয়োজন করে ইটাহার ব্লক তৃণমূল কংগ্রেস। সেখানে ভক্তদের হাতে পানীয় তুলে দেন বিধায়ক সহ তৃণমূল নেতারা। ভক্তদের ভিড় সামলাতে ইটাহার-চাঁচল রাজ্য সড়ক ও মহানন্দা নদীর পাড়ে নিরাপত্তায় মোতায়েন করা হয় বিশাল পুলিস বাহিনী। পাশাপাশি রাখা হয় সিভিল ডিফেন্সের ভলান্টিয়ারদের।
মালদহ জেলার বামনগোলা ব্লকের নালাগোলার প্রাচীন শৈবতীর্থ তিলভাণ্ডেশ্বর মন্দিরেও পুণ্যার্থীদের ঢল নামে। এদিন সকাল থেকেই মহিলাদের পাশাপাশি পুরুষরা পালরাজাদের আমলে গড়ে ওঠা এই মন্দিরে পুজো দেন। প্রাচীন বটগাছের মাঝে শিবলিঙ্গে জল ঢেলে প্রার্থনা জানান শিবভক্তরা। পুজো দেওয়ার আগে ভক্তরা ব্রাহ্মণী নদীতে স্নান সারেন। তারপর সেখান থেকে জল নিয়ে এক কিমি হেঁটে মন্দিরে আসেন।
এদিন শিবরাত্রি উপলক্ষ্যে সেখানে মেলাও বসে। পুণ্যার্থীদের নিরাপত্তা ও নজরদারিতে ছিল পুলিস বাহিনী। মন্দিরে পুজো দেওয়ার পর অলোক বিশ্বাস নামে এক ভক্ত বলেন, প্রতিবছর শিবরাত্রিতে আসি। পুজো দিই। শ্রাবণ মাসেও এই মন্দিরে আসি। শুধু মালদহ জেলার পুণ্যার্থীরাই নয়, পাশের জেলা থেকেও হাজার হাজার মানুষ শতাব্দী প্রাচীন এই তিল ভাণ্ডেশ্বর মন্দিরে আসেন। স্থানীয়রা জানান, এই মন্দির বহু পুরনো। পাল আমলে তৈরি। বটগাছের নীচেই শিবলিঙ্গ।