• ‘আমি ভীতু, ওদের শিরা কাটে ভাই’, ট্যাংরা কাণ্ডে বয়ান প্রণয়ের
    বর্তমান | ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: ‘আমি বরাবরই স্বভাবে নরম প্রকৃতির। ভাই আবার ঠিক উল্টো, ডাকাবুকো ও সাহসী। তাই প্রসূনকেই বলেছিলাম আমার স্ত্রী-ছেলে আর ওর বউয়ের হাতের শিরা কাটতে।’ হাসপাতালে  বসে পুলিসকে এমন চাঞ্চল্যকর বয়ান দিয়েছেন ট্যাংরার দে পরিবারের বড় ছেলে প্রণয়। প্রথম থেকেই অবশ্য তিনি বাড়িতে তিনজনকে খুনের দায় ভাইয়ের ঘাড়েই চাপিয়েছেন। কিন্তু তাঁর এই বক্তব্য আদৌ কতটা ঠিক? নিজেকে বাঁচাতেই কি এই সমস্ত কথা বলছেন তিনি? এব্যাপারে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে তদন্তকারীদের। সেই কারণে এখন অপেক্ষা দুই ভাইয়ের সুস্থ হওয়ার। তাঁদের মুখোমুখি বসিয়ে অফিসাররা বিষয়টি যাচাই করতে চান। ওই ব্যবসায়ী পরিবারের দুই গৃহবধূ ও এক নাবালিকার ময়নাতদন্তের পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট বুধবারই হাতে এসেছে পুলিসের। সেখানে প্রসূনের মেয়ে প্রিয়ংবদাকে শ্বাসরোধ করে খুনের কথা উল্লেখ রয়েছে বলে সূত্রের খবর।


    ঘটনার পর এক সপ্তাহ অতিক্রান্ত। দে পরিবারের তিনজনকে কে খুন করল, সেই রহস্যের জট অনেকটাই খুলে ফেলেছেন গোয়েন্দারা। যদিও সবটা প্রণয়য়ের বক্তব্যের উপর ভিত্তি করে। তাঁর দেওয়া বয়ানের সঙ্গে মিলে গিয়েছে অধিকাংশ পারিপার্শ্বিক তথ্যপ্রমাণ। ফলে প্রসূনই যে তিনজনকে খুন করেছে সেবিষয়টি তদন্তকারীদের কাছে এখন স্পষ্ট। তবু এব্যাপারে পুরোপুরি নিশ্চিত হতে দু’জনকে মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করা জরুরি। কিন্তু তাঁরা হাসপাতালে ভর্তি থাকায় তা সম্ভব হচ্ছে না। তবে প্রণয় কেন বারবার ভাইয়ের ঘাড়ে দোষ চাপাচ্ছে, তা খতিয়ে দেখতে চাইছেন গোয়েন্দারা। তাঁর বক্তব্যে কোনও ফাঁক আছে কি না, বুঝতে একাধিকবার জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়েছে।


    অফিসারদের ঠিক কী বলেছেন প্রণয়? দে পরিবারের বড় ছেলের ব্যাখ্যা, তিনি প্রথম থেকেই নরম প্রকৃতির। যে কোনও জিনিসে ভয় পান। কিন্তু তাঁরা চাইছিলেন নিষ্কৃতি, মুক্তি। কিন্তু ঘুমের ওষুধ খেয়েও যখন মুক্তি হল না, তখন ভাইকে স্ত্রী-ছেলের হাতের শিরা কেটে দেওয়ার বুদ্ধি দেন তিনি। প্রথমে একটু অস্বস্তি থাকলেও পরে তা কাটিয়ে ওঠে প্রসূন। প্রণয়ের দাবি, এরপর ভাই উপরতলা থেকে ছুরি নিয়ে এসে বউদির ঘরে ঢোকে। সুদেষ্ণা তখন আচ্ছন্ন ছিল। ওই অবস্থায় তাঁর হাতের শিরা কেটে দেয় প্রসূন। বিছানা রক্তে ভেসে যায়। প্রণয় তখন উপরতলায়। তবে খুনের বিষয়টি তাঁর অজানা ছিল না বলে নিশ্চিত অফিসাররা।


    প্রণয় পুলিসকে আরও জানিয়েছেন, প্রসূন এরপর নিজের স্ত্রী রোমির ঘরে ঢোকে। তাঁর হাতের শিরা কেটে দেয়। এরপর মেয়ের ঘরে গিয়ে দেখে আসে প্রিয়ংবদার নিথর দেহ। এরপর আবার সুদেষ্ণার ঘরে ফিরে এসে প্রণয়ের নাবালক ছেলের হাত কাটতে যায়। কিন্তু ঘুম ভেঙে সে চিৎকার করে ওঠে। চিৎকার শুনে প্রণয় নীচে নেমে এসে ভাইকে বলেন, ছেড়ে দে, ওর হাতের শিরা কাটিস না। এরপর ছাদে উঠে ঝাঁপ মারার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। কিন্তু ভয়ে সেখান থেকে ঝাঁপ দিতে পারেননি। তাঁর দাবি, নিজের মেয়েকেও মারধর করে জোর করে পায়েস খাইয়েছে ভাই। যদিও ময়নাতদন্তের পূর্ণাঙ্গ রিপোর্টে বলা হয়েছে, কিশোরী প্রিয়ংবদাকে শ্বাসরোধ করে খুনের প্রমাণ মিলেছে। ইতিমধ্যেই প্রসূন ও প্রণয়ের হাতের আঙুলের ছাপ সংগ্রহ করেছেন তদন্তকারীরা। এবার অপেক্ষা ফিঙ্গার প্রিন্ট বিশেষজ্ঞদের রিপোর্টের।
  • Link to this news (বর্তমান)