কলকাতার ‘টুইন’ হোক বারাসত-বারুইপুর, দুই জেলার জন্মদিনে দাবি তুললেন বাসিন্দারা
বর্তমান | ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
সৌম্যজিৎ সাহা ও শ্যামলেন্দু গোস্বামী: দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও বারাসত: পরশু, শনিবার কলকাতার পড়শি জেলা উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার জন্মদিন। ৩৯ বছরে পা দিতে চলেছে রাজ্যের দুই যমজ জেলা।
১৯৮৬ সালের পয়লা মার্চ অবিভক্ত পরগনা ভেঙে বাংলার মানচিত্রে আবির্ভাব উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার। রাজ্যের অন্যতম বৃহৎ এই দু’টি জেলা আন্তর্জাতিক সীমান্ত থাকার কারণে সংবেদনশীল। বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ জঙ্গল সুন্দরবন থাকার কারণে জীববৈচিত্রে অসাধারণ। গোটা বিশ্বে পরিচিত। সবমিলিয়ে ভূগৌলিক-অর্থনৈতিক-প্রশাসনিক দিক দিয়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নগরায়নের ছোঁয়ায় উন্নয়নশীল হিসেবেও পরিচিতি লাভ করছে। যদিও অনেকের বক্তব্য, এত কিছু সত্ত্বেও উপযুক্ত কদর পায় না দুই ২৪ পরগনা। কলকাতা যতটা মর্যাদা পায় তার ছিটেফোঁটাও পায় না। ফলে উন্নয়ন হয় শহর ঘেঁষে। জেলার বাকি অংশ তার সুফল পায় না।
অন্যদিকে গঙ্গার ওপারে থাকা হাওড়াকে কলকাতার যমজ শহর বলা হয়। অথচ কলকাতা দুই বাহুর মতো ছড়িয়ে থাকা দুই ২৪ পরগনা মহানগরের ভাইয়ের পরিচিতি পায়নি। উত্তর ও দক্ষিণের দুই গা লাগোয়া শহর বারাসত-বারুইপুরকেও যমজ হিসেবে মানতে কিছুতেই রাজি নয় কলকাতা। এবার জন্মদিনের শুভ মুহূর্তে দাবি, দুই জেলার আরও উন্নয়ন হোক। বারাসত-বারুইপুর শহরের আরও বিস্তার ঘটুক। রনজিৎ গুহ অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। থাকেন সোনারপুরে। বললেন, ‘কলকাতা একপ্রকার অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। ওই শহরকে বাঁচাতে উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনাকে উন্নত করতে হবে।’
যদিও মেট্রো সম্প্রসারণের কিছু সুফল পাচ্ছে দুই পরগনা। কলকাতা ঘেঁষে থাকা দক্ষিণের ভাঙড়, সোনারপুর, মল্লিকপুর ইত্যাদি অঞ্চল উন্নয়নশীল হয়ে উঠছে। উত্তরের বারাসত এখন বৃহত্তর কলকাতারই অঙ্গ। তার আশপাশের এলাকাগুলি উন্নয়নের ছোঁয়ায় বিস্তৃতি লাভ করছে। তবে দুই জেলারই বিস্তীর্ণ অংশ অবহেলার শিকার বলে অভিযোগও আছে। হাওড়াকে কেন্দ্র করে ডানকুনি ইত্যাদি এলাকা নগরায়ণের কিছু সুফল পেয়েছিল। তবে যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে তা জনপ্রিয় তেমন হয়নি। অথচ কলকাতার সঙ্গে দুই ২৪ পরগনার যোগাযোগ ব্যবস্থা অপেক্ষাকৃত মসৃণ। মেট্রো রেল এবং ইএম বাইপাস রয়েছে। তা আরও উন্নত করার সম্ভাবনাও আছে। তা সত্ত্বেও দুই জেলা যমজ হিসেবে স্বীকৃতি পায় না। কলকাতা খাটো চোখেই দেখে উত্তর ও দক্ষিণকে। এবার এ দিকে নজর দেওয়ার দাবি দু’জায়গার নাগরিকদের। যমজ শহর হিসেবে পরিচিতি দেওয়ার দাবি জোরদার হিসেবে উঠছে জন্মদিনে।
ইতিহাসের দিকে চোখ ফেরালে দেখা যায়, ১৭৯৩ সালের প্রবিধানের ২, ৩ এবং ৯ নম্বর ধারার অধীনে রূপ নিতে শুরু করে অবিভক্ত ২৪ পরগনা। তখন জেলার দেওয়ানী ও ফৌজদারি আদালত এবং জেলা কালেক্টরের রাজস্ব এক্তিয়ারের প্রবিধান দ্বারা চিহ্নিত করা হয়েছিল। এই ব্যবস্থা ১৮০০ সাল পর্যন্ত কার্যকর ছিল। তার একশো বছর পর ২৪ পরগনা ভাগের প্রয়াস হয়। ১৯৮৩ সালে প্রশাসনিক সংস্কার কমিটি গঠন হয়েছিল। তারা ২৪ পরগনাকে দু’ভাগে বিভক্ত করার সুপারিশ করে। ১৯৮৬ সালে ১ মার্চ তা কার্যকর হয়ে দু’টি পৃথক জেলার মর্যাদা পায়। শিক্ষাবিদ সুদিন চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘শিল্প, কৃষি, অর্থনীতির ভারসাম্য রেখে জেলা ভাগ হয়েছিল। সমান উৎকর্ষতা লাভের উদ্দেশে আলাদা করা হয়েছিল দুই জেলাকে।’ ২৪ পরগনা জেলার গেজেটিয়ার প্রকাশ হয়েছিল ১৯১৪ সালে। তারপর কেটে গিয়েছে ১০০ বছরেরও বেশি সময়। জেলা বিভক্ত হওয়ার পরও আলাদা করে গেজেটিয়ার বা বিবরণী প্রকাশ হয়নি। -নিজস্ব চিত্র