অর্ণব আইচ: “কোনও পাপ করিনি। ভাই প্রসূনকে বলেছি ওর মেয়ে ও বাড়ির দুই বউকে মুক্তি দিতে। প্রসূন যা করেছে, তাকে খুন বলা যায় না। সে তিনজনকে মুক্তি দিয়ে পুণ্যের কাজই করেছে।”, এনআরএস হাসপাতালের বেডে শুয়ে অকপট স্বীকারোক্তি ট্যাংরার অভিজাত দে পরিবারের বড় ছেলে প্রণয়ের। তিনি আরও বললেন, “আমি মানসিকভাবে দুর্বল, তাই নিজের হাতে এই কাজ না করে প্রসূনকে দিয়ে করিয়েছি।”
গত কয়েকদিন ধরে চর্চায় ট্যাংরা কাণ্ড। যত সময় এগোচ্ছে তত প্রকাশ্যে আসছে একের পর চাঞ্চল্যকর তথ্য। পুলিশের জেরায় নাকি হাসপাতালের বেডে শুয়ে খুনের কথা স্বীকার করে নিয়েছেন দে পরিবার বড়ছেলে প্রণয়। পুলিশের দাবি, প্রণয় জানিয়েছেন, তিনিই ভাই প্রসূন দে-কে বলেছিলেন, তাঁদের দুই স্ত্রী ও ভাইঝিকে খুন করে মুক্তি দিতে। যদিও জেরার মধ্যে প্রসূন কেঁদে চলেছেন। পুলিশের এক আধিকারিক জানান, প্রসূনের ভেঙে পড়ে স্বীকারোক্তি শুধু সময়ের অপেক্ষা। এনআরএস হাসপাতালে ভর্তি প্রণয়ের নাবালক ছেলে প্রতীপের সঙ্গেও পুলিশ কথা বলেছে। সুস্থ হওয়ার পর তাকে হোমে রাখার জন্যও পুলিশ প্রস্তুতি নিচ্ছে। বৃহস্পতিবার এনআরএসে নাবালককে দেখতে যেতে পারে শিশু কমিশন।
এদিকে মঙ্গলবারই কলকাতা পুলিশের হাতে এসে পৌঁছেছে মৃতদের চূড়ান্ত ময়নাতদন্তের রিপোর্ট। পুলিশে দাবি, রিপোর্টে স্পষ্ট জানানো হয়েছে যে, বাড়ির কিশোরী প্রিয়ংবদা দে-র মৃত্যু হয়েছে ‘মেকানিক্যাল অ্যাসফিক্সিয়া’বা শ্বাসরোধের কারণে। এই ক্ষেত্রে মেয়েটির নাক ও মুখে সম্ভবত বালিশ চাপা দিয়েই তাকে হত্যা করা হয়। বালিশটি ইতিমধ্যেই ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা উদ্ধার করেছেন। রিপোর্টের ভিত্তিতে প্রণয় ও প্রসূন দে-কে জেরা করে পুলিশ জেনেছে যে, গত ১৭ ফেব্রুয়ারি বাড়ির কিশোরী মেয়ে প্রিয়ংবদাকে ওযুধ মেশানো পায়েস খাওয়ানো হলেও বাড়ির অন্যদের মতো তারও মৃত্যু হয়নি। প্রসূন দাদা প্রণয়ের কাছে গিয়ে জানান যে, তাঁর মেয়ে ও বাড়ির দুই স্ত্রীর শরীরে প্রাণ রয়েছে।
প্রণয়ের দাবি, তিনি আধ্যাত্মিক জগতের মানুষ। যেহেতু তাঁরা সবাই ‘পবিত্র পায়েস’ খেয়ে আত্মহত্যার ছক কষেছেন, তাই বাড়িতে যারা ঘুমন্ত অবস্থায় রয়েছে, তাদের সবাইকে মুক্তি দিতে হবে। অথচ তিনি মানসিকভাবে দুর্বল বলে মুক্তির নামে হত্যা করতে পারবেন না। প্রসূনকে বোঝান যে, এই হত্যায় কোনও পাপ নেই। বরং কাউকে মুক্তি দিলে পুণ্য অর্জন হয়। তাই প্রণয়ের ভাই প্রসূন প্রথমে নিজের মেয়ে প্রিয়ংবদার মুখে বালিশচাপা দিয়ে তাকে খুন করে। এর পর সে কাগজ কাটার ধারালো ছুরি নিয়ে এসে ঘুমন্ত অবস্থায় প্রথমে হাতের শিরা ও গলা কেটে খুন করে প্রণয়ের স্ত্রী সুদেষ্ণাকে। তার পর নিজের স্ত্রী রোমির হাতের শিরা ও গলা কেটেও খুন করে প্রসূন। তার পর সে প্রতীপের হাত কাটে। তখন প্রতীপ ঘুম থেকে উঠে কাঁদতে থাকে। সে বেঁচে যাওয়ার ফলে প্রণয় তার ভাই প্রসূনকে বারণ করে প্রতীপকে খুন করতে। এই ব্যাপারে আরও তথ্য পেতে প্রণয় ও প্রসূনকে জেরা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।