বছর শুরুর পর দু’মাস কেটে গেছে। রাজ্যের অনেক স্কুলেই বছর শুরু থেকেই চক, ডাস্টার, হাজিরা খাতা কেনার টাকা বাড়ন্ত। শুধু তাই নয় বিদ্যুতের মিল না মেটাতে পারায় বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে যাওয়ারও আশঙ্কায় রয়েছেন অনেক প্রধান শিক্ষক। শিক্ষকদের একাংশের মতে, চলতি বছর রাজ্য বাজেটে তাঁরা আশা করেছিলেন স্কুলের পরিকাঠামো উন্নতির জন্য বিশেষ বরাদ্দ হবে। কিন্তু এই রাজ্য বাজেট হতাশ করেছে তাঁদের। বিশেষ করে প্রাথমিক স্কুলগুলি গত বছরের কম্পোজ়িট গ্রান্ট এখনও না পাওয়ায় স্কুলের দৈনন্দিন খরচ বহন করাই কঠিন হয়ে পড়ছে বলে প্রাথমিক শিক্ষকদের অভিযোগ।
স্কুল শিক্ষকদের একাংশের মতে মাধ্যমিক স্তরের স্কুলের পরিকাঠামোও যে ঠিক নেই তা এবার মাধ্যমিক পরীক্ষায় বোঝা গেছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার মহেশতলা এলাকার একটি স্কুলে মাধ্যমিক পরীক্ষা চলাকালীন সিলিং ফ্যান পড়ে যায়। মাধ্যমিকের শেষ পরীক্ষা ভৌত বিজ্ঞান চলার সময় ঝড়-বৃষ্টিতে একটি স্কুলের জানলার পাল্লা খুলে যায় বলেও অভিযোগ। শিক্ষকদের একাংশ অভিযোগ এইসব ছোটখাটো মেরামতি অনেক সময় কম্পোজ়িট গ্রান্ট থেকে করা হয়। মাধ্যমিক স্তরের স্কুলগুলি গত বছর তাদের কম্পোজ়িট গ্রান্টের আংশিক পেলেও তা পর্যাপ্ত নয়। স্কুলের পর্যাপ্ত তহবিল না থাকাতেই এই অবস্থা তৈরি হচ্ছে।
অ্যাডভান্সড সোসাইটি ফর হেডমাস্টার্স অ্যান্ড হেডমিস্ট্রেসেসের রাজ্য সম্পাদক চন্দন মাইতি বলেন, ‘‘মূলত আর্থিক সহায়তা না পাওয়ার জন্যই রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ফ্যান পড়ে গিয়ে পরীক্ষার্থী আহত হয়েছে। বছর খানেক আগে মালদহ জেলায় স্কুলের দেওয়াল চাপা পড়ে একাদশ শ্রেণির এক ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। এবার বাজেটে আশা করেছিলাম কম্পোজ়িট গ্র্যান্ড বাবদ আরও বেশি টাকা মঞ্জুর করা হবে। কিন্তু বাজেটের শিক্ষার বরাদ্দ দেখে আমরা হতাশ।’’
প্রাথমিক স্কুলগুলির শিক্ষকদের একাংশের মতে, আকাশছোঁয়া মূল্যবৃদ্ধির মধ্যেও গত বছর প্রাথমিকে কম্পোজ়িট গ্রান্ট দেওয়া হয়নি প্রাথমিকে। এর ফলে বছরের শুরুতেই চক, ডাস্টার, এমনকি হাজিরা খাতা কেনার টাকাও নেই অনেক স্কুলে। অনেক স্কুলের বিদ্যুতের বিল বকেয়া।
বঙ্গীয় প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আনন্দ হান্ডা বলেন, ‘‘এই পরিস্থিতির মধ্যেও বছরের শুরুতে প্রাথমিক স্কুলগুলোতে টানা ৮ দিন নবীন বরণ, গ্র্যাজুয়েশন উৎসব পালন, মুখ্যমন্ত্রীর শুভেচ্ছা বার্তা বিলি, সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা, ফুড ফেস্টিভ্যাল ইত্যাদি করতে হয়েছে। শিক্ষা দফতর এরকম নানা কাজ করার জন্য স্কুলগুলোকে বিজ্ঞপ্তি দিচ্ছে, কিন্তু কোথা থেকে অর্থ আসবে তার কোনও উল্লেখ থাকে না। অনেক সময়ে শিক্ষকরা নিজেদের টাকায় চালাতে এই নবীন বরণ থেকে গ্র্যাজুয়েশন উৎসব চালাতে বাধ্য হচ্ছেন।’’ শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু অবশ্য বলেন, ‘‘এক দুই দিনের মধ্যে প্রাথমিকের কম্পোজ়িট গ্রান্টের টাকা ছাড়া হবে। অর্থ দফতর টাকা মঞ্জুর করে দিয়েছে।’’