নেতাজি ইন্ডোরের সভা থেকে কার্যত আগামী বছরের বিধানসভা নির্বাচনের দামামা বাজিয়ে দিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বক্তব্যের ছত্রে ছত্রে বিজেপিকে বিঁধে ভোটার তালিকা নিয়ে তৃণমূল কর্মীদের সতর্ক করলেন দলনেত্রী। বৃহস্পতিবার নেতাজি ইন্ডোরের সভায় মমতার নিশানায় ছিল ভারতের নির্বাচন কমিশনও। বাংলায় ভোটে জেতার জন্য নির্বাচন কমিশন এবং আরও কিছু এজেন্সিকে কাজে লাগিয়ে এই রাজ্যের ভোটার তালিকায় ভিন রাজ্যের বাসিন্দাদের নাম ঢোকানো হচ্ছে বলে তাঁর অভিযোগ।
ভোটার তালিকায় গরমিল করেই দিল্লি ও মহারাষ্ট্রে বিজেপি জিতেছে বলেও ইঙ্গিত মমতার। তিনি এ দিন বলেন, ‘দিল্লি পারেনি, মহারাষ্ট্র পারেনি, বাংলায় আমরা ধরব, জবাব দেবো।’ মঞ্চ থেকেই বেশ কিছু নথি সামনে এনে ভোটার তালিকায় গরমিলের অভিযোগ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলার ভোটারদের এপিক নম্বরে গুজরাট বা হরিয়ানার বাসিন্দা কোনও ব্যক্তির নাম ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। সদ্য প্রধান নির্বাচন কমিশনার বেছে নেওয়া হয়েছে। সেই প্রসঙ্গ নিয়েও তোপ দেগেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘সদ্য ইলেকশন কমিশনার কে হয়েছে জানেন? মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর যিনি মাননীয় সচিব ছিলেন, তাঁকেই চিফ ইলেকশন কমিশনার করেছেন। সব বিজেপির লোক দিয়ে ভরা। এই নির্বাচন কমিশন যত দিন নিরপেক্ষ না হবে তত দিন বদনাম থেকে যাবে।’
দিল্লি, মহারাষ্ট্রের উদাহরণ টেনে এনে মমতার অভিযোগ, ভোটারদের কার্ডে রদবদল করে বাংলার ভোটে ভিন রাজ্য থেকে লোক নিয়ে এসে ভোট দেওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। বক্তব্য রাখার সময়ে, মুর্শিদাবাদের রানিনগরের এক বাসিন্দা সইদুল ইসলামের নাম তোলেন তিনি। তাঁর যে এপিক নম্বর রয়েছে, তার সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে হরিয়ানার কোনও এক সনিয়া দেবীর নাম। রানিনগরেরই আরও এক বাসিন্দা মহম্মদ আলি হোসেন, তাঁর এপিক নম্বরের সঙ্গেও একই কাণ্ড করা হয়েছে বলে উদাহরণ দেন মমতা। তাঁর অভিযোগ, স্যাম্পল সার্ভে করে যা নথি হাতে এসেছে, তা চমকে দেওয়ার মতো। একই এপিক নম্বরে বাংলার ভোটারের জায়গায় বহু ক্ষেত্রে হরিয়ানা, পাঞ্জাব ও বিহারের নাম ঢোকানো হয়েছে বলে অভিযোগ। আর এই কাজের পিছনে কিছু এআরও এবং ডেটা এন্ট্রি অপারেটরের দিকে আঙুল তুলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘ডেটা অপারেটরদের উপর লক্ষ্য রাখুন। অনেক জায়গায় কিছু মিষ্টির প্যাকেট গিয়েছে। সবাই খারাপ এ কথা বলব না। যাঁরা এই কাজ করেছেন তাঁদের হাতেনাতে ধরব। কিন্তু তার জন্য আমার নথি-প্রমাণ চাই।’
এই সূত্র টেনেই দলের কর্মীদের ভোটার তালিকা যাচাই করার উপর জোর দিয়েছেন তিনি। জেলাস্তরে এই ভোটার তালিকা যাচাই করার জন্য ডেডলাইনও বেঁধে দিয়েছেন। শুধু নির্দেশ দিয়েই ক্ষান্ত থাকেননি। তার সঙ্গেই কমিটিও গড়ে দিয়েছেন। গোটা রাজ্যে ভোটার তালিকা নিয়ে সমস্যা হলে তা যদি জেলাস্তরে সমাধান না করা যায়, তা হলে বলতে হবে রাজ্যস্তরের ওই কমিটিকে। কমিটির মাথায় রাখা হয়েছে সুব্রত বক্সিকে। এ ছাড়াও কমিটিতে রয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, সুজিত বসু, মলয় ঘটক, পার্থ ভৌমিক, ডেরেক ও’ব্রায়েন, অরূপ বিশ্বাস, ফিরহাদ হাকিম, দেবাংশু ভট্টাচার্য, ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ তৃণমূলের একঝাঁক প্রবীণ ও নবীন নেতা।