থানার মধ্যেই ‘বিধবা বিবাহ’-এর ব্যবস্থা করলেন স্বয়ং ‘বড়বাবু’
দৈনিক স্টেটসম্যান | ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
একসময় বিদ্যাসাগর বিধবা বিবাহের আয়োজন করে সমাজের রক্ষণশীলদের চক্ষুশূল হয়েছিলেন। একুশ শতকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অনেক এগিয়ে গিয়েছে। উন্নত হয়েছে সভ্যতা। মানুষ অনেক আধুনিক হয়েছেন। কিন্তু এই যুগে দাঁড়িয়েও সমাজে বিধবাদের এখনও কোণঠাসা করা হয়। সেই উপেক্ষাকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়ে থানার মধ্যেই বিধবা বিবাহের আয়োজন করলেন স্বয়ং ‘বড়বাবু’। বিধবা মামনিকে বিয়ে করলেন এক সিভিক ভলান্টিয়ার। বড়বাবুর উদ্যোগে বসল এই বিয়ের আসর। সানাইয়ের সুরে চার হাত এক হল মামনি ও রথীনের। ঘটনাটি ঘটেছে নদিয়ার চাপড়া থানায়। মহতি এই বিবাহ অনুষ্ঠানের সহযোগিতায় ছিলেন থানার অন্যান্য সিভিক ও পুলিশ কর্মীরাও।
জানা গিয়েছে, চাপড়ার রাজিবপুরের মেয়ে মামনি। ১৬ বছর আগে অর্জুন ঘোষের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। অর্জুনও পেশায় ছিলেন একজন সিভিক ভলান্টিয়ার। তাঁদের একটি পুত্র সন্তানও রয়েছে। কিন্তু তাঁর সুখের সংসারে হঠাৎ নেমে আসে অমাবস্যার অন্ধকার। স্বামী দুরারোগ্য ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর মুখে কোলে ঢলে পড়েন। এভাবে মামনির জীবনে নেমে আসে দুর্দিন। স্বামীর মৃত্যুর পর শিশু পুত্রকে নিয়ে বাপের বাড়ি চলে আসেন।
কিন্তু এখন তাঁর সেই দুঃখের জীবনেও এসেছে পরিবর্তন। ঘটনার ছয় মাস পর তাঁকে সিভিক ভলান্টিয়ার হিসেবে নিয়োগ করেছে চাপড়া থানা। তবে সংসারে অর্থনৈতিক সঙ্কট কাটলেও স্বামীহারা মামনির জীবনে একাকীত্ব গ্রাস করে। বিষয়টি নজরে আসে থানার আইসি অনিন্দ্য মুখোপাধ্যায়ের। তিনিই উদ্যোগ নিয়ে মামনিকে ফের পাত্রস্থ করার ব্যবস্থা করেন। বিবাহ দেওয়া হয় এই থানারই আর এক সিভিক রথীন হালদারের সঙ্গে।
অনিন্দ্য বাবু নিজের উদ্যোগেই থানার মধ্যে এই ‘বিধবা বিবাহ’-এর আয়োজন করেন। বিয়ের অনুষ্ঠানে সানাই থেকে শুরু করে ভূরিভোজের ব্যবস্থা করা হয়। বিয়ে উপলক্ষে ফুল, মালা ও আলোকসজ্জায় সাজানো হয়েছিল থানা চত্বর! চারিদিকে সানাইয়ের সুর বেজে ওঠে। ধীরে ধীরে হাজির হন নিমন্ত্রিতরা। তাঁদের ভূরিভোজের ব্যবস্থাও ছিল। কবজি ডুবিয়ে ভূরিভোজ সারেন আপ্যায়িত অতিথিরা।
চাপড়া থানা সূত্রে জানা গিয়েছে, রথীনের বাড়ি কড়ুইগাছি গ্রামে। এই বিয়ের ফলে রথীন যেমন পেলেন তাঁর জীবনসাথী, তেমনি মামনিও পেলেন তাঁর নতুন সংসার। আগত অতিথিদের সকলেরই আশা, আগামী দিনে এই পরিবারটি সুখে শান্তিতে থাকবে। সেই আশাতেই চাপড়া থানার আইসি অনিন্দ্য মুখোপাধ্যায় নবদম্পতিকে প্রাণ ভরে আশীর্বাদ করেছেন। তাঁদের বক্তব্য, থানার লোকজন পাশে না থাকলে তাঁদের পক্ষে হয়তো এত সহজে এই নতুন সংসার গড়ে তোলা সম্ভব হত না।