এই সময়, বসিরহাট ও ডায়মন্ড হারবার: ডায়মন্ড হারবার মেডিক্যাল কলেজে ভুয়ো এসটি সার্টিফিকেটের মাধ্যমে এক ছাত্রের এমবিবিএসে ভর্তি হওয়ার অভিযোগ ঘিরে তৈরি হয়েছিল বিতর্ক। পশ্চিমবঙ্গ আদিবাসী কল্যাণ সমিতির পক্ষ থেকে মেডিক্যাল কলেজের প্রিন্সিপালের কাছে গত জানুয়ারি মাসের শেষের দিকে ডেপুটেশন দিয়ে অভিযুক্ত ডাক্তারি পড়ুয়ার ভর্তি বাতিল করার দাবি জানানো হয়েছিল।
সেই আন্দোলনের জেরে এ বার অভিযুক্ত ছাত্রের নথি খতিয়ে দেখতে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করলেন বসিরহাটের মহকুমা শাসক।
বিষয়টি নিয়ে পুলিশ ইতিমধ্যে তদন্ত শুরু করেছে। ওই ছাত্রের নাম পরমব্রত রায়। তাঁর ব্যবহৃত এসটি সার্টিফিকেটের ঠিকানা বসিরহাট থানা সংলগ্ন তপারচর এলাকার। বাবার নাম প্রবীর রায়। তবে তপারচরের স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, পরমব্রত রায় বলে কেউ ওই এলাকায় বাস করে না। ওই নামে কোন তরুণকে চেনেনও না এলাকার বাসিন্দারা। স্থানীয় সূত্রের খবর, প্রবীর রায় নামে এক ব্যক্তি ছিলেন এলাকায়। বছর ১২ আগে তাঁর মৃত্যুর পর পরিবারের সদস্যরা এখান থেকে কলকাতায় চলে যান। তাঁদের বক্তব্য, প্রবীর রায় এসসি বা এসটি ছিলেন না।
বিষয়টি নিয়ে বসিরহাট পুলিশ জেলার পুলিশ সুপার হোসেন মেহেদি রহমান বলেন, ‘বসিরহাটের মহকুমা শাসকের কাছ থেকে একটা অভিযোগ পেয়েছি। পরমব্রত রায় বলে একজন ভুয়ো এসটি সার্টিফিকেট বের করে ডায়মন্ড হারবার মেডিক্যাল কলেজে অ্যাডমিশন নিয়েছিল। আমরা এ বিষয়ে একটা এফআইআর করে তদন্ত শুরু করেছি।’
সূত্রের খবর, ডায়মন্ড হারবার মেডিকেল কলেজের এমবিবিএস পড়ুয়া পরমব্রত রায় এনইইটি পরীক্ষার মাধ্যমে ২০২৩ সালে ডায়মন্ড হারবার মেডিক্যাল কলেজে এমবিবিএস প্রথম বর্ষে ভর্তি হন। পশ্চিমবঙ্গ আদিবাসী কল্যাণ সমিতির অভিযোগ, পরমব্রত প্রথমে দক্ষিণ ২৪ পরগনার বারুইপুর মহকুমা শাসকের অফিস থেকে ২০২৩ সালের ৫ই জুন তারিখে এসসি (তফসিলি জাতি) শংসাপত্র সংগ্রহ করেন। পরে মাত্র দু’মাসের ব্যবধানে, সেই বছরের অগস্ট মাসের ১১ তারিখে উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাট মহকুমা শাসকের অফিস থেকে এসটি (তফসিলি জনজাতি) শংসাপত্র সংগ্রহ করেন। সেই শংসাপত্রের ভিত্তিতেই মেডিক্যাল কলেজে তিনি ভর্তি হন বলে অভিযোগ।
পশ্চিমবঙ্গ আদিবাসী কল্যাণ সমিতির অভিযোগ, ২০২৪ সালের জুলাই মাসের ৯ তারিখে বিসিডব্লিউ (ব্যাকওয়ার্ড ক্লাসেস ওয়েলফেয়ার) বিভাগের ওয়েবসাইটে দেখা যায়, পরমব্রত রায়ের এসটি শংসাপত্রটি বাতিল করা হয়েছে। তবুও তিনি মেডিক্যাল কলেজে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছেন। সমিতির দাবি, যেহেতু অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হয়েছে এবং তাঁর এসটি শংসাপত্র বাতিল করা হয়েছে, তাই তাঁর ভর্তি অবিলম্বে বাতিল করতে হবে। এবং জালিয়াতির অভিযোগে অভিযুক্ত ছাত্রের বিরুদ্ধে আইনত ব্যবস্থা নিতে হবে প্রশাসন এবং মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষকে।
সমিতির যুব শাখার সভাপতি দিব্যেন্দু সোরেন ও সংগঠনের মহিলা সদস্য অনুপমা মাইতি বলেন, ‘এক ব্যক্তি কী ভাবে একই সময়ে দু’টি ভিন্ন জাতিগত শংসাপত্র পেতে পারেন? রাজ্য সরকারের ৬ শতাংশ এসটি সংরক্ষণ নীতির অপব্যবহার যদি এ ভাবে চলতে থাকে, তাহলে প্রকৃত তফসিলি জনজাতির ছাত্রছাত্রীরা কোথায় যাবে? বসিরহাটের মহকুমা শাসক পুলিশের কাছে অভিযোগ জানানোয় কিছুটা হলেও আশ্বস্ত হয়েছি।’
অভিযুক্ত ডাক্তারি পড়ুয়া পরমব্রতর সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁকে ফোনে পাওয়া যায়নি। ডায়মন্ড হারবার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রিন্সিপাল উৎপল দাঁ বলেন, ‘ওই ছাত্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আমরা কেউ নই। বিষয়টি আমরা জানার পর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিলাম। এখনো পর্যন্ত কোনো নির্দেশ আসেনি। তবে ওই ছাত্রকে আমরা চিঠি পাঠিয়েছিলাম। সে পাল্টা আমাদের চিঠি পাঠিয়ে কিছুটা সময় চেয়েছিল। পরে আবার দ্বিতীয় চিঠি আমাদের পাঠিয়ে কোর্স ছেড়ে দিতে চেয়েছে। সেই চিঠি আমরা স্বাস্থ্য ভবনে পাঠিয়েছি।’