সুজয় মুখোপাধ্যায়
বিজ্ঞানীদের দাবি, প্রায় ১০০ বিলিয়ন ছায়াপথ (Galaxy) রয়েছে, যার মধ্যে মিল্কি ওয়ে বা আকাশগঙ্গা ছায়াপথেই রয়েছে ৫০০ বিলিয়ন নক্ষত্র। সেই নক্ষত্রগুলিকে কেন্দ্র করে ঘুরছে অসংখ্য গ্রহ। পৃথিবী ছাড়া সেই সব গ্রহে কি প্রাণ আছে?
বহুকাল ধরে এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে চলেছেন বিজ্ঞানীরা। আজও সঠিক উত্তর অমিল। বিষয়টি নিয়ে ‘এই সময় অনলাইন’-এ নিজের বক্তব্য জানালেন নাসায় কর্মরত বঙ্গসন্তান বিজ্ঞানী গৌতম চট্টোপাধ্যায়।
মহাকাশ বিজ্ঞানীদের সামনে পেলেই যে কোনও বিজ্ঞানমনস্ক মানুষের মুখ ফস্কে বেরিয়ে আসবে এই প্রশ্নটি: ‘ভিন গ্রহে প্রাণের সন্ধান মিলল?’ ‘চন্দ্রযান’ থেকে ‘মঙ্গলযান’, যে কোনও মিশনে মহাকাশের হাজারো রহস্যের জট খোলার চেষ্টা হলেও ‘টপ প্রায়োরিটি’ থাকে সেই একটি বিষয়। গৌতম চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘সবার মনেই প্রশ্ন থাকে, আমরা এই মহাবিশ্বে একা কি না? আমরা সবাই তো অনুসন্ধানকারী। সবাই জানতে চাই, আমাদের মতো আর কেউ আছে? আমার মনে হয়, অন্য গ্রহে প্রাণ থাকার সম্ভাবনা যথেষ্ট। তবে এখনও আমরা প্রাণের সন্ধান পাইনি।’
এই বিজ্ঞানীর মতে, এত নক্ষত্রকে ঘিরে কতগুলি গ্রহ রয়েছে, সেখানে পৃথিবীর মতো পরিবেশ থাকতেই পারে। তারই সন্ধান চালাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। উল্লেখ্য, প্রাণের সন্ধানের পাশাপাশি নতুন গ্যালাক্সি কী ভাবে তৈরি হয়, নতুন গ্রহ কী ভাবে জন্ম নেয়, সেই সব বিষয় নিয়েও নাসায় গবেষণা চালাচ্ছেন গৌতম।
হুগলির কোন্নগর নবগ্রামের বাসিন্দা গৌতমের পড়াশোনা নবগ্রাম বিদ্যাপীঠ থেকে। পরে শিবপুর বিই কলেজ থেকে ইলেকট্রনিক্স নিয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি। এর পর আমেরিকায় পাড়ি দেন ডক্টরেট করতে। শেষ ১৪ বছর নাসা-য় কর্মরত। তবে আত্মার যোগ বাংলার মাটির সঙ্গে। ছুটি পেলেই ছুটে আসেন হুগলির গ্রামের বাড়িতে। আড্ডা জমান পাড়ায়। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বাড়িতে সময় কাটানোই বেশি পছন্দ তাঁর। ২০২৩-এ তরুণ বিজ্ঞানী হিসেবে ‘পিপল্স লিডারশিপ’ পুরস্কারে তাঁকে সম্মানিত করে নাসা।
মহাকাশ সম্পর্কিত নানা গবেষণামূলক কাজের পাশাপাশি অন্যান্য বৈজ্ঞানিক কাজের সঙ্গে যুক্ত। ইতিমধ্যে তিনি একটি বিশেষ যন্ত্র বানিয়েছেন যা অন্য কোনও গ্রহে জল আছে কি না, সেই বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে সাহায্য করবে। যন্ত্রটির নাম- ‘ওয়াটার হান্টিং অ্যাডভান্সড টেরাহার্টজ স্পেক্ট্রোমিটার অন আল্ট্রা স্মল প্ল্যাটফর্ম’ (WHATSUP)।
গ্রামের এক দুঃস্থ পরিবার থেকে লড়াই করে আজ সাফল্যের শীর্ষে গৌতম। বাংলার নানা প্রান্তে এখনও প্রচুর প্রতিভা রয়েছে বলে মনে করেন তিনি। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের উদ্দেশে গৌতমের বক্তব্য, ‘তোমরাও জীবনে সফল হতে পারবে, যদি ঠিক মতো পড়াশোনা করো এবং অধ্যবসায় থাকে।’