‘নাস্তিক’ সিপিএম-এর রাজ্য সম্মেলনে রামকৃষ্ণ পরমহংস, জবাবে কী বলছেন দলের যুবনেতারা? ...
আজকাল | ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: ‘নাস্তিক’ সিপিএম কি এখন ঝুঁকছে ধর্মের দিকে? কারণ কি সেই জনসংযোগ, ভোটে জয় লাভ? সাম্প্রতিককালে মাঝে মাঝেই উঠে আসছে এই প্রশ্ন। তাতে আবার অনেকেই যে উত্তর দিচ্ছেন, তাতে একাংশ প্রশ্ন তুলছে, দলের গঠনতন্ত্র থেকে কি বিস্মৃত হচ্ছে তারা?
ধর্ম, রাজনীতি এবং বামপন্থা, এই তিন বিষয় নিয়ে বঙ্গ রাজনীতিতে চর্চা চিরদিনের। কেউ বলেন নাস্তিকতায় বিশ্বাস নাকি বামপন্থীদের একচেটিয়া অধিকার। কেউ বলেন ধর্মের সঙ্গে তাদের কোনও বিরোধ নেই। আর একথা বললেই প্রশ্ন ওঠে, রাজনীতির ময়দানে টিকে থাকতে তাহলে কি ধর্মকে পুরোপুরি এড়িয়ে যেতে পারছে না বামেরা?
অতি সাম্প্রতিক ঘটনার বিবরণের আগে, বলা যাক দুটি অন্য ঘটনা। যে দুটি ঘটনা উসকে দিয়েছিল একই বিতর্ক। ২০২৪-এর লোকসভা ভোটের আগে, নববর্ষ এবং ইদের শুভেচ্ছা জানাতে দক্ষিণ কলকাতার বাম প্রার্থী যে শুভেচ্ছা পত্র দিয়েছিলেন, তাতে দেখা গিয়েছিল, কৃষ্ণ সেজেছে এক খুদে। ফেজ টুপি পরা আর এক খুদে পাশে দাঁড়িয়ে কৃষ্ণের হাত ধরেছে। তখনও চর্চা হয় ব্যাপক। কটাক্ষ ভেসে এসেছিল, ‘ভোট বড় বালাই’।
২০২৪-এর জুলাই। জ্যোতি বসুর জন্মবার্ষিকী পালনের অনুষ্ঠানে সিপিএম-এর রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেন, জ্যোতিবাবু ধর্ম না মানলেও, প্রসাদ খেতেন। একই সঙ্গে মনে করান, জ্যোতিবাবুর বাবা-মা ছিলেন ধার্মিক, তাঁর বাবা লোকনাথের ভক্ত ছিলেন। সেলিম বলেন, ‘জ্যোতি বসুর জীবন থেকে এই শিক্ষাই নিতে হবে, নির্লিপ্ততা থাকবে, একই সঙ্গে সম্পৃক্ততাও থাকবে।' সেলিম-মন্তব্যেও জোর চর্চা হয়েছিল সেবার।
এবার আলোচনায় সিপিএমের ২৭তম রাজ্য সম্মেলন। ওই সম্মেলনে দেখা মিলেছে রামকৃষ্ণ পরমহংসের। লাল পতাকার রাজ্য সম্মেলনে শোভা পাচ্ছে রামকৃষ্ণের ছবি! ব্যাস। একই প্রশ্ন উঠে আসে আবার, তাহলে কি পরিস্থিতি বুঝে ফের জোট-ভোটের তত্ব থেকে সরে গিয়ে সেই ধর্মের পথেই হাঁটছে ‘নাস্তিক’ সিপিএম?
কী বলছেন দলের তরুণ তুর্কিরা। প্রতীক উর রহমান বলছেন, 'ধর্মের সঙ্গে বিবাদ তো নেই আমাদের। দলের গঠন্তন্ত্রে কোথাও কি লেখা রয়েছে এই ধরনের কথা?' উলটে তাঁর বক্তব্য, যে জেলায় এবারের রাজ্য সম্মেলন হয়েছে, সেই জেলার ঐতিহ্যের ‘এসেন্স’ নিতেই নাকি- পরমহংস, ব্যান্ডেল চার্চের ছবি শোভা পেয়েছে।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক অপর এক যুবনেতা আবার একধাপ এগিয়ে বলছেন, ‘যত মত তত পথ, সর্ব ধর্ম সমন্বয়ের কথা বলেছেন ঠাকুর এবং তাঁর শিষ্য বিবেকানন্দ। বিজেপি স্বামীজীর গেরুয়া পরিধানকে ব্যাবহার করছে মানুষকে বিভ্রান্ত করতে। কিন্তু রামকৃষ্ণকে নিয়ে কিছু করতে পারছে না। কারণ, তাঁর হিন্দুত্ব এবং বিজেপির হিন্দুত্বে আকাশ পাতাল ফারাক। এমনকি চৈতন্যও। তাঁর হিন্দুত্বের ধারণাকে সমগ্র নদিয়া জেলা জুড়ে ধ্বংস করছে ইস্কন এবং বিজেপি। আমরা ধর্ম বা আধ্যাত্মিকতার বিরুদ্ধে নই। বরং এগুলোকে ব্যবহার করে বিকৃত করে বিদ্বেষ তৈরি করার বিরুদ্ধে।‘