• মাছ আর চিংড়িতে অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহার রুখতে তৈরি বিশেষ নজরদারি কমিটি
    বর্তমান | ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, দক্ষিণ ২৪ পরগনা: মৎস্যজীবীদের বড় অংশই চটজলদি মুনাফার আশায় দ্রুত মাছের বাড়ে নজর দিয়েছেন। তাড়াতাড়ি ওজন বাড়লে বাজারজাত করে তাঁরা টাকা তুলতে পারবেন ঘরে। এই ঝোঁকই বিপদ ডেকে আনছে। মাছ ও চিংড়িকে নানা ধরনের ওষুধ, বিশেষ করে অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করে তাদের বাড়কে দ্বিগুণ করতে চাইছেন তাঁরা। অর্থাৎ কম সময়ে আকারে বাড়বে মাছ। চারামাছের ওজন তিন মাসে যত হওয়ার কথা, তাই হচ্ছে দেড় মাসে। সবই অ্যান্টিবায়োটিকের খেল! আর এই মাছ খেয়ে অজান্তেই নিজের বিপদ ডেকে আনতে চলেছে মাছপ্রিয় বাঙালি। 


    সেকারণেই অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের উপর নজরদারি চালাতে চাইছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার মৎস্য বিভাগ। শুধু জেলাস্তরে নয়, প্রতি ব্লকেও এ কারণে তৈরি হয়েছে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্ট কমিটি। জেলা প্রশাসন এই বিষয়কে প্রচারে এনে মৎস্যজীবী ও মাছ চাষিদের সচেতন করতে শুরু করেছে। অতিরিক্ত বা নিষিদ্ধ অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করলে কী হতে পারে, তাও বুঝিয়ে বলা হচ্ছে তাঁদের।


    কেন্দ্রীয় সরকার ২০ ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। তাসত্ত্বেও অনেকে মাছের উৎপাদন বাড়াতে বা তাদের হৃষ্টপুষ্ট করতে মৎস্যজীবীরা যথেচ্ছ অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করছেন। মাছ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাছবিচার না করে মাছ ও চিংড়ির শরীরে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হলে, অদূর ভবিষ্যতে তাদের ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট তৈরি হবে। ফলে মাথাচাড়া দেবে রোগ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া। তখন অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করলেও কোনও লাভ হবে না। পরবর্তীকালে সেই ব্যাকটেরিয়া যুক্ত মাছ বা চিংড়ি খেলে মানুষের শরীরেও বাসা বাঁধবে নানা রোগ। সে কথা মাথায় রেখেই অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ কায়েম করতে মরিয়া জেলার মৎস্যবিভাগ। এই প্রবণতা অন্যান্য জেলাতেও রয়েছে বলে খবর। সেখানেও এমন প্রচার শুরু হয়েছে। এখন প্রশ্ন হল, মাছের রোগ হলে তখন কী করবেন মৎস্যজীবীরা? আধিকারিকদের বক্তব্য, সেক্ষেত্রে জেলা বা ব্লকের মৎস্য অফিসারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে, তাঁর পরামর্শ মেনেই ওষুধ দিতে হবে। এর বাইরে কিছু করা যাবে না।


    ব্লকস্তরে এই কমিটির চেয়ারম্যান করা হয়েছে বিডিওদের। এছাড়াও থাকবেন সংশ্লিষ্ট থানার আইসি বা ওসি, ব্লকের মৎস্য অফিসার, কেন্দ্রীয় রপ্তানি সংস্থার রাজ্য শাখার একজন প্রতিনিধি। জেলাশাসকের নির্দেশেই এভাবে নজরদারি চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে জেলার মৎস্যবিভাগের সহ অধিকর্তা সব্যসাচী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, মাত্রাতিরিক্ত অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করলে, মাছ ও মানব শরীরে অনেক নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তাছাড়া এই ধরনের মাছ রপ্তানির ক্ষেত্রে সমস্যা হবে। সংশ্লিষ্ট দেশের প্রতিনিধিরা মাছ পরীক্ষা করে বেশি মাত্রায় অ্যান্টিবায়োটিক পেলে গোটা কনসাইনমেন্টই বাতিল করে দেবেন। তাই সবাইকে এই বিষয়ে সচেতন করা হচ্ছে। তার সঙ্গে চলবে নজরদারিও।-ফাইল চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)