৫০০ ওষুধের চোরাগোপ্তা দাম বৃদ্ধি, কেন্দ্রের কাছে একাধিক বড় নির্মাতার বিরুদ্ধে অভিযোগ
বর্তমান | ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
বিশ্বজিৎ দাস, কলকাতা: ন্যাশনাল লিস্ট অব এসেনশিয়াল মেডিসিনস (এনএলইএম) বা জাতীয় অপরিহার্য ওষুধের তালিকায় থাকা মেডিসিনগুলিকে ‘শিডিউল ড্রাগ’ বলা হয়। আর তার বাইরে থাকা ওষুধগুলিকে বলা হয় ‘নন শিডিউল ড্রাগ’। বাজারে এই দুই ধরনের ওষুধের অনুপাত মোটামুটি ২০: ৮০। নন শিডিউল ড্রাগগুলির দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সংস্থা ন্যাশনাল ফার্মাসিউটিক্যাল প্রাইজিং অথরিটির (এনপিপিএ) নিয়ম হল, এইসব ওষুধের নির্মাতারা বছরে একবার, ১০ শতাংশ দাম বাড়াতে পারবেন, যদি না কিছু ক্ষেত্রে বিশেষ অনুমোদন এনপিপিএ দ্বারা গ্রাহ্য হয়। অভিযোগ, নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে চোরাগোপ্তা দাম বাড়াচ্ছে কয়েকটি বড় ওষুধ নির্মাতা। মার্কেট শেয়ারে দেশের প্রথম ২০টি ওষুধ নির্মাতার তালিকায় থাকা একাধিক কোম্পানির বিরুদ্ধে উঠেছে এমন মারাত্মক অভিযোগ। এর জেরে ভুগছে সাধারণ ক্রেতারা। নির্ধারিত দামের বেশি দামে কিনতে হচ্ছে নামজাদা ব্র্যান্ডের কয়েকশো সুগার, প্রেশার, পেটের অসুখ সহ নানা সমস্যার দরকারি ওষুধ। প্রতারিত হচ্ছে সরকারও। এই কাজকর্ম নজরে আসার পর লিখিত অভিযোগ দাখিল হয়েছে। এর জেরে প্রায় ৫০০ দরকারি ওষুধের অবাঞ্ছিত দাম বেড়েছে সময়ের আগেই।
বিষয়টি কেন্দ্রীয় রসায়ন মন্ত্রকের আওতাধীন ওষুধ দপ্তরের আওতায় থাকা ওষুধের দামের নিয়ন্ত্রক সংস্থা এনপিপিএকে জানিয়েছে ওষুধের দোকানদারদের একটি সংগঠন। অল ইন্ডিয়া কেমিস্টস অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউটর্স ফেডারেশনের (এআইসিডিএফ) সেক্রেটারি জয়দীপ সরকার বলেন, ‘অধিকাংশ মানুষই বুঝতে পারে না, কীভাবে ওষুধের দাম নিয়ে তারা নিত্য প্রতারিত হয়েই যাচ্ছে। অথচ এনপিপিএ’র নাকের ডগায় এইসব কাজকর্ম হচ্ছে।’
কীভাবে চোরাগোপ্তা দাম বৃদ্ধি চলছে?
এআইসিডিএফ কর্তাদের বক্তব্য, ‘অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে চলছে এই প্রতারণা। প্রতি বছর নন শিডিউল ড্রাগের দাম ১০ শতাংশ বাড়ানোর কথা। এতদিন এপ্রিলে তা বাড়ানো হতো। কিন্তু এমনও ঘটনা ঘটেছে, ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে এপ্রিলে দাম বাড়ানোর পরও ফের নভেম্বরে কয়েকটি সংস্থা দাম বাড়িয়ে বাজারে ছেড়ে দিয়েছে। ফার্মা সহি দাম’-এ ওষুধের দাম আপলোড হয় ফি বছর এপ্রিলে। এই কায়দায় নভেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ৫-৬ মাস তারা বর্ধিত দামে ওষুধ বেচছে। তারপর এপ্রিলে এসে কেন্দ্র জানতে পারছে, এটাই নতুন আর্থিক বছরের জন্য তাদের ওষুধের বর্ধিত দাম। কেন্দ্র সেই দামটাই সেই আর্থিক বছরের নতুন বর্ধিত দাম বুঝে ফার্মা সহি দামে আপলোড করে দেয়। কিন্তু, ওষুধ শিল্পের সঙ্গে দীর্ঘদিন জড়িত পোড়খাওয়া কর্মী-আধিকারিকরা ভালোই বুঝতে পারছেন, নভেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ৫ মাস চোরাগোপ্তা বর্ধিত দামে বেচে কয়েকশো কোটি টাকার মুনাফা কামিয়ে নিয়েছে ওষুধ নির্মাতা! অতি সম্প্রতি বছরে একবার যে কোনও সময় দাম বাড়ানোর সরকারি অধিকার অর্জন করেছে কোম্পানিগুলি। তা নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। এক একটি নির্মাতা সংস্থা এক এক সময় দাম বাড়ালে মনিটরিং করাই হয়ে উঠতে পারে দুঃসাধ্য কাজ।
ইনহেলার, শ্বাসকষ্টের ওষুধ-ইনহেলার সহ কয়েকশো জনপ্রিয় ওষুধের নিমার্তা একটি নামজাদা কোম্পানির বিরুদ্ধে অভিযোগ, ২০২৪ সালের এপ্রিলের পরিবর্তে তারা ওষুধপত্রের দাম বাড়িয়ে দিয়েছিল ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে! সেভাবে প্রায় ৪ মাস বর্ধিত দামের মুনাফা ঘরে তোলে। আবার বছরে একবার ১০ শতাংশের বদলে যা
ইচ্ছে তাই দাম বাড়ানোর অভিযোগও রয়েছে। যেমন একটি নামজাদা সংস্থা ২০২৫ সালের এপ্রিলের পরিবর্তে ২৪ সালের নভেম্বরে তাদেরই একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় অ্যান্টি বায়োটিকের দাম ১০ শতাংশের বদলে ৫০ শতাংশ বাড়িয়ে দিয়ে ৫০ টাকার জায়গায় ৭৫ টাকা করে দিয়েছে প্রায় নিঃসাড়ে। এছাড়া কোনও প্রস্তুতকারক কোম্পানি ডিপিসিও’র ২৪ ও ২৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী দোকানদারদের ফর্ম ফাইভ প্রদান করেন না, যা একান্ত বাধ্যতামূলক।