এই সময়, শিলিগুড়ি: কেঁচো খুঁড়তে কেউটে! জোর করে দুই মোটর বাইক আরোহীর কাছে টাকা নিয়েছিলেন শিলিগুড়ি ট্র্যাফিক গার্ডের তিন কর্মী। দুই সিভিক ভলান্টিয়ার ও এক এএসআইয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়ে তদন্তে নামেন এডিসিপি (অ্যাডিশনাল ডেপুটি কমিশনার অফ পুলিশ)। তখনই ঝুলি থেকে বেড়াল বের হয়। অভিযুক্ত তিন পুলিশকর্মী লিখিত ভাবে জানান, ‘চাপে’ পড়ে তাঁরা টাকা নিতে বাধ্য হয়েছেন।
কিসের চাপ? জানা গিয়েছে, পুলিশ লাইনে ক্লোজ়ের ভয় দেখিয়ে নীচুতলার পুলিশকর্মীদের থেকে প্রতিদিন টাকা দাবি করেন শিলিগুড়ির পানিট্যাঙ্কি ট্র্যাফিক গার্ডের ওসি। সেই ‘খাই’ মেটাতে তাঁরা টাকা তুলতে বাধ্য হন বলে অভিযোগ। লিখিত ভাবে পানিট্যাঙ্কি ট্র্যাফিক গার্ডের ওসি মহেশ সিংয়ের বিরুদ্ধে এডিসিপি ট্র্যাফিক অভিষেক মজুমদারকে জানিয়েছেন ওই ট্র্যাফিক গার্ডে কর্মরত এক সহকারি সাব ইনস্পেক্টর এবং দুই সিভিক ভলান্টিয়ার।
জানা গিয়েছে, ১৩ ফেব্রুয়ারি তদন্তের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে সিভিক ও এএসআইদের কাছ থেকে প্রতি দিন কত টাকা নেন সেই তালিকাও দিয়েছেন তাঁরা। তবে অভিযোগ হলেও এখনও ট্র্যাফিক গার্ডের ওসির বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি বলে অভিযোগ। জানা গিয়েছে, ঘটনার পরে সমস্ত বিটের সিভিক এবং এএসআইদের ডেকে মহেশ সিং শাসাচ্ছেন বলে অভিযোগ।
কেউ মুখ খুললে পরিণাম ভালো হবে না বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। মহেশ বলেন, ‘এ রকম কোনও ঘটনার কথা আমার জানা নেই।’ তাঁর সংযোজন, ‘৩১ জানুয়ারি দুই মোটরবাইট চালক যে অভিযোগ করেছিলেন, সেটার আমি নিজে তদন্ত করে সাহেবকে ( এডিসিপি) রিপোর্ট দিয়েছি। আর কোনও অভিযোগের বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। তা ছাড়া, আমার বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ হয়েছে বলে আমি শুনিনি।’ এডিসিপি ট্র্যাফিকের বক্তব্য, ‘অনেকেই এ ব্যাপারে জানতে চাইছেন। কিন্তু এটা আমাদের বিভাগীয় বিষয়, গোপন বিষয়। কেন জানতে চাইছেন বুঝতে পারছি না।’
গত ৩১ জানুয়ারি চোপড়ার বাসিন্দা রাকেশ কর শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটে পুলিশের বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগ, শিলিগুড়ির হোটেল ডলি ইন-এর সামনে ট্র্যাফিক পোস্টে কর্তব্যরত এক পুলিশকর্মী এবং সিভিক ভলান্টিয়ার তাঁর কাছে টাকা দাবি করেন। এরপর গত ৯ ফেব্রুয়ারি ফের একই অভিযোগ জমা পড়ে শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারের কাছে।ইউপিআই–এর মাধ্যমে এক ব্যক্তির কাছ থেকে ট্র্যাফিক পুলিশের কর্মীরা ৭০০ টাকা ঘুষ নেন বলে অভিযোগ। ওই ব্যক্তি অভিযোগ করার পরেই ঘটনার বিভাগীয় তদন্তে নির্দেশ দেন পুলিশ কমিশনার। সেই নির্দেশের ভিত্তিতে ঘটনা তদন্ত শুরু করেন এডিসিপি ট্র্যাফিক।
১৩ ফেব্রুয়ারি অভিযুক্ত দুই সিভিক ভলান্টিয়ারকে পুটআপের জন্য ডাকা হয়। ওই সময়ে তাঁরা দু’জন এডিসিপিকে পুরো বিষয়টি লিখিত আকারে জানিয়ে দেন। সূত্রের খবর, লিখিত অভিযোগ ওই সিভিক ভলান্টিয়াররা জানিয়েছেন, প্রতিদিন পানিট্যাঙ্কি ট্র্যাফিক গার্ডের অন্তর্গত সমস্ত বিটের অফিসার এবং সিভিক ভলান্টিয়ারদের কাছে মোটা টাকা দাবি করেন মহেশ সিং। কাউকে দেড় হাজার, কাউকে দু’হাজার টাকা দিতে হয়। সিভিক থেকে এএসআই, সবার জন্যে পৃথক পৃথক রেট।
দিতে না–পারলে তাঁকে দূরে পোস্টিং দেওয়া দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। কেউ টাকা দিতে অস্বীকার করলে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে লাইন ওআর ( পুলিশ লাইনে ক্লোজ) করে দেওয়ার ভয় দেখানো হয় বলে অভিযোগ। প্রতিদিনের টাকার জুলুম থেকে বাঁচতে বাধ্য হয়ে তাঁরা সাধারণ মানুষকে হেনস্থা করতে বাধ্য হন বলে দাবি করেছেন তাঁরা। পরে দিন ১৪ ফেব্রুয়ারি অভিযুক্ত এএসআইকে পুটআপে ডাকা হলে তিনিও একই অভিযোগ করেন। এরপরেই গোটা কমিশনারেট জুড়ে হইচই শুরু হয়েছে।
পানিট্যাঙ্কি ট্র্যাফিক গার্ডের অধীনে ১৪টি ট্রাপিক পয়েন্ট রয়েছে। প্রতিদিন সেখানে ট্র্যাফির়ক সামলান অন্তত ৫৫ জন সিভিক ভলান্টিয়ার ও এএসআই। এর আগেও এই ধরনের অভিযোগে একাধিক থানা এবং ফাঁড়ি থেকে ক্লোজ় হয়েছিলেন মহেশ। এ বারও একই অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে।