• রসকদম্বকেও দেওয়া হোক জিআই ট্যাগ, দাবি মালদায়
    এই সময় | ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • কৌশিক দে, মালদা

    মালদার সুস্বাদু আম হিমসাগর, ফজলি এবং লক্ষ্মণভোগ আগেই জিআই ট্যাগ পেয়ে গিয়েছে। এ বার জেলার প্রসিদ্ধ দু’রকমের মিষ্টি রসকদম্ব এবং কানসার্টের জিআই ট্যাগের দাবি তুললেন মিষ্টান্ন ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ী সমিতির দাবি, ব্রিটিশ আমল থেকে মালদায় এই দু’ধরনের মিষ্টির কদর রয়েছে।

    দেশ-বিদেশ থেকে যখন কোনও পর্যটকরা ঘুরতে আসেন, তাঁদের পছন্দের তালিকায় থাকে রসকদম্ব এবং কানসার্ট। শুধু তাই নয়, ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় থেকে শুরু করে প্রাক্তন রেলমন্ত্রী গণিখান চৌধুরীরও অত্যন্ত পছন্দের ছিল রসকদম্ব। কেন্দ্রের ইউপিএ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং যখন গনিখানের বাড়িতে এসেছিলেন সে সময়ে খাবারের মেনুতে রাখা হয়েছিল রসকদম্ব এবং কানসার্ট। দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে থেকে এই দুটি মিষ্টি মালদায় তৈরি হয়ে আসছে। তাই জিআই ট্যাগ পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

    মালদা মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী সমিতির সদস্যরা জানিয়েছেন, সম্পূর্ণ ক্ষীর এবং পোস্তর দানা দিয়ে গোলাকৃতি রসকদম্ব তৈরি হয়। অনেকটা কদমফুলের মতো দেখতে। পাশাপাশি স্বাধীনতারও আগে ছানা ও ক্ষীর দিয়ে এক ধরনের চ্যাপ্টা মিষ্টি তৈরি হতো। তখন থেকে এর নামকরণ হয় কানসার্ট।

    ইংরেজবাজারের প্রবীণ মিষ্টি বিক্রেতারা জানিয়েছেন, ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার পরে অধিকাংশ মিষ্টি ব্যবসায়ী ও পার বাংলা থেকে চলে আসেন মালদায়। পরবর্তীতে তাঁদের বংশধরেরা মালদায় কানসার্ট মিষ্টির প্রসার ঘটান। ব্রিটিশ আমল থেকে তৈরি হওয়া এই দু’ধরনের সুস্বাদু মিষ্টি নিয়ে এখনও গর্ববোধ করেন মালদার মিষ্টান্ন ব্যবসায়ীরা। যে পদ্ধতিতে জেলায় রসকদম্ব এবং কানসার্ট তৈরি হয়, তা ভিন জেলা ও রাজ্যের বাইরে কেউ তৈরি করতে পারেন না বলেও দাবি সদস্যদের। তাই প্রাচীন আমলের তৈরি দুটি মিষ্টিকে জিআই ট্যাগের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।

    প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, জিআই কথার অর্থ হলো জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশন। অর্থাৎ কোনও পণ্যের উৎপত্তিস্থলের সঙ্গে সম্পর্কিত-এর অনন্য বৈশিষ্ট্য বা গুণাবলী তুলে ধরাই জিআই ট্যাগ পেয়ে যাওয়া।

    মালদা রতন সুইটসের কর্ণধার বিজয় দাস বলেন, ‘দক্ষ কারিগর ছাড়া সুস্বাদু এই মিষ্টি তৈরি করা সম্ভব নয়। বর্তমানে এই মিষ্টিগুলির সাইজ অনুপাতে বিভিন্ন রকম দাম রয়েছে। দশ টাকা থেকে শুরু করে কুড়ি টাকা পর্যন্ত রসকদম্ব এবং কানসার্ট বিক্রি হয় বিভিন্ন দোকানে।’

    ইংরেজবাজার শহরের আরও এক মিষ্টি বিক্রেতা নারায়ণ সাহা বলেন, ‘আমার বয়স এখন ৬৫ বছর। ভারত স্বাধীন হওয়ার আগে থেকে বাবা-ঠাকুরদাদার হাত ধরেই মিষ্টির দোকান শুরু। প্রথম থেকে রসকদম্ব এবং কানসার্টের চাহিদা রয়েছে। মালদা থেকে কোনও পরিবার বাইরে আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে গেলে প্রথম পছন্দের তালিকায় থাকে এই দুই মিষ্টি। এছাড়াও বাইরে থেকে আসা পর্যটকেরা এই মিষ্টি কেনার জন্য আগ্রহ দেখান।’

    মালদা মার্চেন্ট চেম্বার অফ কমার্সের সম্পাদক উত্তম বসাক জানিয়েছেন, দেশ-বিদেশের ব্যবসায়ীদের নিয়ে বাণিজ্যিকভাবে কোনও বৈঠক, সেমিনার, কর্মশালা হলেই রসকদম্ব এবং কানসার্ট খাওয়ার আগ্রহ দেখান অনেকে। মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী সমিতির পক্ষ থেকেও এই দু’ধরনের মিষ্টির জিআই ট্যাগের দাবি জানানো হয়েছে। আমরাও পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছি।’

    প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, জিআই ট্যাগ পাওয়ার ক্ষেত্রে সরকারি নথিভুক্ত একটি এজেন্সির কাছে আবেদন করতে হয়। পরবর্তীতে বিভিন্ন বিষয় খতিয়ে দেখে সেই খাদ্য সামগ্রীর মান যাচাই করে তবেই স্বীকৃতি দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।

  • Link to this news (এই সময়)