• টার্গেট ২১৫ পার, রোডম্যাপ তৈরি মমতা-অভিষেকের, গড়লেন কমিটি
    এই সময় | ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • এই সময়: বিধানসভা ভোটের দামামা বেজে উঠল। ফের ‘খেলা হবে’ স্লোগানও উঠল। এরইমধ্যে ২০২৬ সালে ২১৫ পার করার টার্গেট ঘোষণা করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। আগামী বিধানসভা নির্বাচনে ২১৫–র বেশি আসন পাওয়ার জন্য তৃণমূলের নেতা–কর্মীদের কী করতে হবে, সেই রোডম্যাপ বৃহস্পতিবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে তৈরি করে দিয়েছেন তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব।

    দল যাতে দুই তৃতীয়াংশের বেশি আসন পেয়ে চতুর্থবার ক্ষমতায় আসতে পারে সেই রোডম্যাপ ঠিক করে দেওয়ার পাশাপাশি জোড়াফুলের নেতা–কর্মীদের কোন কোন কাজ করা যাবে না, তা–ও নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন মমতা–অভিষেক।

    কিছু দিন আগে বিধানসভায় তৃণমূলের পরিষদীয় দলের বৈঠকে মমতা বলেছিলেন, ২০২৬ সালে জোড়াফুল দুই তৃতীয়াংশের বেশি আসন পাবে। নেতাজি ইন্ডোরে বৃহস্পতিবার অভিষেক তাঁর ভাষণে নির্দিষ্ট ভাবে ২১৫ আসন টার্গেটের কথা ঘোষণা করেন। মমতাও এ দিন একই টার্গেটের কথা বলেছেন।

    কাগজেকলমে বিধানসভা নির্বাচনের এখনও এক বছরের বেশি সময় রয়েছে। তবে বর্ষাকাল, উৎসবের মরশুমের কারণে ভোটের প্রস্তুতির জন্য সময় মেরেকেটে চার–পাঁচ মাস পাওয়া যাবে বলে অভিষেক মনে করছেন।

    সেই কারণে এখন থেকেই তৃণমূলের সর্বস্তরের নেতা–কর্মীদের মাঠে নেমে যাওয়ার নির্দেশ দিয়ে এ দিন নেতাজি ইন্ডোরে তিনি বলেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গত মাসে বিধানসভায় বলেছেন দুই তৃতীয়াংশ আসন নিয়ে তৃণমূল ক্ষমতায় আসবে। দুই তৃতীয়াংশ মানে (২৯৪ আসনের মধ্যে) ১৯৫–১৯৬ টি আসন। আমরা ২০২১ সালে ২১৪ টি আসন পেয়েছিলাম। সেই লক্ষ্যে অবিচল থেকে ২১৫–র বেশি আসন নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যাতে চতুর্থবার বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হন সকলকে তা নিশ্চিত করতে হবে।’ কে কবে ফোন করে নির্দেশ দেবে সে জন্য অপেক্ষা না করার পরামর্শও দিয়েছেন অভিষেক।

    ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি ‘আবকি বার দুশো পার’ স্লোগান দিয়েও মুখ থুবড়ে পড়ে। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনেও তৃণমূল ২৯ কেন্দ্রে জয়ী হয়েছে। তাই ২১৫ আসনের টার্গেট পূরণ করা অসম্ভব নয় বলে তৃণমূল নেতৃত্বের বক্তব্য।

    দলনেত্রী মমতার কথায়, ‘অভিষেক যে কথা বলেছে তা সঠিক। আমি ওটাই বোঝাতে চেয়েছি। সবটা বলি না। ওরা যেটা বলতে পারে আমি সেটা বলি না। আমি বলেছি দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকবেই। তার বেশি আসন আপনাদের নিয়ে আসতে হবে। বিজেপির জামানত জব্দ করতে হবে...এখন আমাদের কাছে ২২০–২২১ জন বিধায়ক রয়েছেন। বিজেপির থেকেও অনেকে যোগ দিয়েছেন। আমরা ২১৫ পার করব তারপর কথা। তার থেকে বেশি হবে তো কম হবে না। এবারে বিজেপি যে সিট পেয়েছে সেটা (ওদের) পেতে দিলে চলবে না।’

    এই টার্গেট পূরণ করতে ভোটার তালিকা থেকে ভুয়ো ভোটার বাদ দেওয়া এবং তৃণমূলের নেতাদের মধ্যে যে ঝগড়াঝাটি রয়েছে তা দূরে সরিয়ে রেখে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন মমতা। রাজ্য সরকারের জনপ্রিয় প্রকল্প নিয়ে বাড়ি বাড়ি প্রচারের নির্দেশও দিয়েছেন তিনি। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে মমতার ‘খেলা হবে’ স্লোগান ঝড় তুলেছিল। আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে ২১৫ এর টার্গেট পূরণ করতে মমতা চার রকম খেলা হবে বলেও এ দিন মন্তব্য করেছেন।

    তৃণমূলনেত্রীর কথায়, ‘খেলা নাম্বার ওয়ান, ভোটার লিস্ট। খেলা নাম্বার টু, মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করে বাড়ি গিয়ে সংযোগ স্থাপন করা। খেলা নাম্বার তিন, সংগঠনকে শক্তিশালী করা। খেলা নাম্বার চার, বিজেপির হবে হার।’

    ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে যে বিধানসভা কেন্দ্রগুলিতে বিজেপি অল্প ভোটে পিছিয়ে ছিল সেই জায়গাগুলিতে আরও নজরদারি বাড়ানোর জন্য সংশ্লিষ্ট জেলার নেতাদের নির্দেশ দিয়েছেন দলনেত্রী। নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন বিজেপির অ্যাজেন্ডা হলো ওয়ান নেশন ওয়ান ভোট, তাই জোড়াফুলের সাংসদদেরও প্রস্তুত থাকার বার্তা দিয়েছেন মমতা। জোড়াফুলের সাংসদদের উদ্দেশে এ দিন তৃণমূলনেত্রী বলেন, ‘আমি বিজেপিকে বিশ্বাস করি না। জোর করে ওয়ান নেশন ওয়ান ইলেকশন করতে পারে। বিধানসভা নির্বাচন ও লোকসভা নির্বাচন একসঙ্গে করতে পারে। আপনাদেরও সতর্ক থাকতে হবে।’

    ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বাম–কংগ্রেস বিজেপির সঙ্গে হাত মেলাতে পারে বলেও তৃণমূলের নেতা–কর্মীদের সতর্ক করেছেন নেত্রী। এই তিন বিরোধী দলকে ফের জগাই–মাধাই–গদাই বলেও কটাক্ষ করেছেন তিনি।

  • Link to this news (এই সময়)