• মড়ার ভান করে প্রাণরক্ষা, ট্যাংরা কাণ্ডে বয়ান নাবালকের
    এই সময় | ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • এই সময়: ‘শ্বাস আটকে মড়ার মতো নিস্তেজ পড়ে থেকে নিজেকে বাঁচিয়েছি’–– রাজ্য শিশু সুরক্ষা কমিশনের সামনে এমনই বিস্ফোরক বয়ান দিল ট্যাংরার খুনের ঘটনার অন্যতম প্রত্যক্ষদর্শী, নাবালক প্রতীপ দে। বৃহস্পতিবার হাসপাতালে তার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন কমিশনের প্রতিনিধিরা।

    কমিশনের চেয়ারপার্সন অনন্যা চক্রবর্তী সংবাদমাধ্যমের কাছে বলেন, ‘প্রতীপ তাঁদের জানিয়েছে, যোগা এবং জিম করার ফলে পায়েসে মেশানো ঘুমের ওষুধ খেয়ে কিছুই হয়নি তার। কাকা(প্রসূন দে) বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে খুন করার চেষ্টা করলেও সে বেশ কিছুক্ষণ নিজের শ্বাস আটকে রাখে। এরপর প্রসূন এবং প্রণয় ছাদে আত্মহত্যা করতে চলে যান। আর প্রতীপ দোতলায় উঠে দেখতে পায় মা, কাকিমা এবং বোন মৃত অবস্থায় পড়ে রয়েছে।’

    লালবাজার সূত্রের খবর, ঘটনার পরে প্রতীপ বাবার কাছে জানতে চেয়েছিল, ‘কেন এমন করছো?’ বাবা প্রণয় সে সময়ে তিনতলার ঘরে গিয়ে ছেলেকে ধারদেনার পুরো বিষয়টি বোঝান। এরপর দিনভর সে চুপচাপ বসেই ছিল বলেও জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা।

    ট্যাংরার অটল সুর রোডের বাড়ি থেকে একটি জিমের জিনিসপত্র রাখার ব্যাগ মিলেছে বলে দাবি করেছে পুলিশ। প্রাথমিক ভাবে পুলিশের মনে হয়েছিল সেই ব্যাগ দু’ভাইয়ের মধ্যে কারও হবে। তবে প্রতীপের বয়ানের পরে পুলিশের সেই ধারণা বদলে যায়।

    হাসপাতালে ভর্তি প্রতীপ ইতিমধ্যেই পুলিশকে জানিয়েছে, কাকা প্রসূন তাকে বোন প্রিয়ম্বদার রুমে নিয়ে গিয়ে হাত কাটার চেষ্টা করে। কিন্তু সেই প্ল্যান ঠিকভাবে কাজ করেনি। এরপর সেখানেই প্রতীপকে বালিশ চাপা দিয়ে খুন করার চেষ্টা করেন তিনি। কিন্তু যোগা করার কারণে শ্বাস আটকে বেঁচে যায় সে।

    তদন্তে উঠে এসেছে, বড় ভাই প্রণয় বিষ খাইয়ে সকলের আত্মঘাতী হওয়ার প্ল্যান করেছিলেন। কিন্তু সেই প্ল্যান ফ্লপ হওয়ায় তাঁকে নিজের হাত কাটার কথা বলেন প্রসূন। কিন্তু সাহস না হওয়ায় প্রণয় তা করতে পারেননি। এরপর সকলকে খুন করার দায়িত্ব নিয়ে নেন ছোট ভাই।

    যদিও প্রসূন আবার পুলিশকে পাল্টা জানিয়েছেন, তিনি নিজের হাত কাটলেও তাঁর স্ত্রী এবং বৌদির গলা এবং হাত কে কাটলো সে বিষয়ে কিছুই জানেন না। লালবাজার সূত্রের খবর, এসব ধোঁয়াশা কাটাতে দু’এক দিনের মধ্যে হাসপাতাল থেকে প্রণয় এবং প্রসূনকে ছাড়া হলে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হতে পারে।

    অনন্যা এদিন বলেন, ‘প্রতীপ তাঁদের জানিয়েছে, তার বাবা(প্রণয়) ঘটনার দু’দিন আগে বলেছিল, এ বার পাওনাদাররা ধাওয়া করবে। ফলে মৃত্যু ছাড়া আর কোনও উপায় নেই। তাকে সেদিন আলোচনার সময়ে ঘর থেকে বের করে দেওয়া হয়। তবে সে ঘরে থাকলে অন্য কোনও রোজগারের উপায় নিয়ে পরামর্শ দিতে পারত।’

    যদিও পুলিশের দাবি,‘প্রতীপের কথাতেও বেশ কিছু অসঙ্গতি রয়েছে। ফলে পুরো বিষয়টি জানতে সুস্থ হওয়ার পরে তার সঙ্গেও কথা বলা হবে।’

    বৃহস্পতিবার শিশু সুরক্ষা কমিশনের প্রতিনিধিরা এনআরএসে গিয়ে নাবালক প্রতীপকে দেখার পরে চেয়ারপার্সন বলেন, ‘আমরা ওকে হোমে পাঠাতে চাইনা। কোনও একজন আত্মীয়ের কাছে রাখতে চাই।’ সূত্রের খবর, প্রণয়ের কোনও আত্মীয় প্রতীপকে রাখতে রাজি নয়। সে কারণে তাকে প্রসূনের শ্বশুর–শাশুড়ির কাছে রাখা হতে পারে। তবে তাঁরা রাজি হলে সরকারি স্কিম অনুযায়ী প্রতীপ সাবালক হওয়া পর্যন্ত মাসে মাসে তাঁদের আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে। কেউ যদি শেষ পর্যন্ত রাজি না হন,সেক্ষেত্রে হুগলির একটি পরিবারের কাছে প্রতীপকে রাখা হবে।

  • Link to this news (এই সময়)