• ফ্ল্যাটের টাকা না পেয়েই কি পিসিশাশুড়িকে খুন! ১৪ দিনের জেল মা-মেয়ের
    এই সময় | ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • এই সময়: হাতে টাকা–পয়সা না থাকলেও বিলাসিতা কম ছিল না পিসিশাশুড়িকে খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত ৩৪ বছরের ফাল্গুনী ঘোষের। সোনার গয়নার শখ তো ছিল, পাশাপাশি তিনি পরিকল্পনা করেছিলেন, ভাড়ার বাড়ি ছেড়ে নিজের একটি ফ্ল্যাট কেনারও। এ সব ইচ্ছেপূরণ করতেই কি সুমিতা ঘোষকে খুন করা হয়েছিল?

    আপাতত ঘটনার তদন্তের গতিপ্রকৃতি যে দিকে বাঁক নিচ্ছে, তাতে তেমনই ইঙ্গিত পাচ্ছে পুলিশ। এ বিষয়ে আরও নিশ্চিত হতে অভিযুক্তদের পাশাপাশি সুমিতার আত্মীয়দের সঙ্গেও কথা বলছেন তদন্তকারীরা।

    গত মঙ্গলবার সকাল সওয়া সাতটা নাগাদ ট্রলিব্যাগে সুমিতার গোড়ালি কাটা দেহ ভরে কুমোরটুলি ঘাটে গঙ্গায় ফেলতে এসেছিলেন ফাল্গুনী এবং তাঁর মা আরতি ঘোষ। ট্যাক্সি থেকে নামার পড়ে ধরা পড়ে যান তাঁরা। খুন এবং তথ্যপ্রমাণ লোপাটের অভিযোগে তদন্ত শুরু করে কলকাতা পুলিশের নর্থ পোর্ট থানা। এ বার সেই মামলা চলে গিয়েছে মধ্যমগ্রাম থানার হাতে। কারণ, মধ্যমগ্রামের বীরেশপল্লিতে ভাড়া বাড়িতেই খুন করা হয়েছিল বছর পঞ্চাশের সুমিতাকে। বৃহস্পতিবার অভিযুক্ত দু’জনকে বারাসত আদালতে পেশ করা হলে ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক।

    তদন্তে উঠে এসেছে, ২২ মাস আগে মধ্যমগ্রামের ভাড়া বাড়িতে ওঠেন ফাল্গুনী এবং তাঁর মা। সেখানে যাতায়াত ছিল পিসিশাশুড়িরও। ফোনেও কথা হতো দু’জনের। সুমিতা সম্পত্তির পরিমাণ কত, কোন ব্যাঙ্কের লকারে কত টাকার গয়না রয়েছে, তা জানতেন ফাল্গুনী। এ সব জানার পরেই ফ্ল্যাট কেনার জন্য পিসিশাশুড়ির কাছে তিনি আর্থিক সাহায্য চেয়েছিলেন বলে পারিবারিক সূত্রে জানতে পেরেছে পুলিশ। সেই টাকা না পেয়ে সুমিতাকে খুন করা হয়েছে বলে প্রাথমিক ইঙ্গিত মেলার পরে জিজ্ঞাসাবাদ জারি রেখেছেন তদন্তকারীরা।

    কলকাতা পুলিশের তদন্তে জানা গিয়েছিল, সোনার গয়না বানানোর পরিকল্পনা ছিল ফাল্গুনীর। সেই টাকা জোগাড়ের জন্য সুমিতাকে খুন করার আগে মারধর করে তাঁর এটিএম কার্ডের পাসওয়ার্ড জেনে নেওয়া হয়। রবিবার খুনের পরে ঘরে দেহ রেখে ওই এটিএম কার্ড ব্যবহার করে ২৫ হাজার টাকা তুলে নেন তাঁরা। এর পর, বউবাজারে একটি সোনার দোকানে গয়না তৈরির জন্য অগ্রিমও দেন। পুলিশ জেরায় জানতে পেয়েছে, সুমিতার ব্যাঙ্কে প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ টাকা ছিল। সেই টাকা এবং সুমিতার গয়না বিক্রি করে ফ্ল্যাট কেনারও পরিকল্পনা করেন মা–মেয়ে।

    ২০১৮ সালে বিয়ে হয়েছিল ফাল্গুনীর। স্বামীর সঙ্গে অসমের জোড়হাটে চলে গিয়েছিলেন তিনি। সেই সম্পর্ক অবশ্য বেশি দিন টেকেনি। অন্যদিকে, সুমিতাও অসমের জোড়হাটেই স্বামীর সঙ্গে থাকতেন। তিনিও বিয়ের সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসেন বেশ কয়েকবছর আগে। স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগ না থাকলেও, তিন বোনের বাড়িতে প্রায়ই যেতেন সুমিতা। ফাল্গুনী মধ্যমগ্রামে ঘর ভাড়া নেওয়ার পরে সেখানেও যাতায়াত শুরু করেন তিনি।

    সূত্রের খবর, ওই ভাড়া বাড়িতে নানা রকমের অভিযোগ ওঠায় প্রায় প্রতিদিন প্রতিবেশীরা চাপ দিচ্ছিলেন। এমনকী, এক মাসের মধ্যে বাড়িওয়ালা ঘর ছেড়ে দেওয়ার কথাও বলেছিলেন। সেই চাপের মুখে ফ্ল্যাট কেনার জন্য তৎপর হয়ে ওঠেন ফাল্গুনী। সে জন্যই পিসিশাশুড়ির কাছে আর্থিক সাহায্য চেয়েছিলেন। তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, এই ঘটনার কথা জানতেন সুমিতার বোনেরা। তাঁদের মধ্যেই একজন পুলিশের কাছে জানিয়েছেন, ফ্ল্যাট কেনা নিয়ে ঝামেলা চলছিল দু’পক্ষের।

    পুলিশ সূত্রে খবর, নিহত সুমিতার গলার হার, হাতের বালা মিসিং রয়েছে। খুনের পরে এটিএম কার্ডের সঙ্গে সম্ভবত সেগুলি হাতিয়ে নেওয়া হয়। ফাল্গুনী এবং তাঁর মা সেই গয়নাগুলি কোথায় লুকিয়ে রেখেছেন, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

    বৃহস্পতিবার কোর্ট লকআপ থেকে ফাল্গুনী এবং আরতিকে পুলিশি নিরাপত্তায় নিয়ে আসা হয় বারাসত আদালতের অ্যাডিশনাল চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কিংশুক সাধুখাঁর এজলাসে। ফাল্গুনীর পরনে ছিল কালো–হলুদ প্রিন্টের চুড়িদার। আরতির পরে ছিলেন কমলা রঙের চুড়িদার। কোর্ট লকআপে আচমকা মাথা ঘুরে পড়ে যান আরতি। দেখা যায়, মায়ের মাথায়, মুখে জল দিচ্ছেন ফাল্গুনী। অভিযুক্তদের আইনজীবী সুশোভন মিত্র বলেন, ‘যে ট্রলি ব্যাগে দেহ উদ্ধার হয়েছে, সেটা আমার মক্কেলদের নয়। ট্রলির চাবিও মক্কেলদের কাছে ছিল না। ফাল্গুনীর শ্বশুরবাড়ির সঙ্গে অশান্তি ছিল। সে কারণে চক্রান্তের শিকার হয়েছেন ওরা।’

    এদিন মা এবং মেয়ের জামিনের জন্য সাত জন আইনজীবী সওয়াল করেন। জামিনের বিরোধিতা করেন সরকারি আইনজীবী মেহেতাব আলম। তিনি বলেন, ‘দুই অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ভারতীয় ন্যায় সংহিতা আইনে খুন সহ তথ্য প্রমাণ লোপাটের ধারায় মামলা হয়েছে। ফলে জামিন যেন না দেওয়া হয়।’

  • Link to this news (এই সময়)