• পুরুলিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে তৈরি হচ্ছে কৃত্রিম শ্বেতপলাশের চারা
    এই সময় | ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • সঞ্চিতা মুখোপাধ্যায়, পুরুলিয়া

    ‘পিন্দারে পলাশের বন, পালাব পালাব মন’— গানটা শুনলেই মনের চোখে ভেসে ওঠে পুরুলিয়া এবং তার গাছে–গাছে আগুনরাঙা হয়ে ফুটে থাকা লাল পলাশ। কিন্তু শুধুই লাল নয়, সাদা পলাশের উল্লেখও মেলে উদ্ভিদবিজ্ঞানে। অনেকের মতে, দেবাদিদেব মহাদেবের প্রিয় ফুল এই শ্বেতপলাশ। তন্ত্রসাধনাতেও কাজে লাগে এই ফুল।

    তান্ত্রিকরা যেমন এই গাছের নীচে সাধনা করেন, তেমনই এই গাছ চোখে দেখলেই পূণ্য হয় বলে মনে করেন ভক্তরা। গত বছরেই জানা গিয়েছিল, পুরুলিয়ার বাঘমুন্ডি, পুঞ্চা, রাকাবের জঙ্গলে এমন মোট ১৫টি গাছ রয়েছে। তখনই এই গাছ কৃত্রিম ভাবে তৈরি করার উদ্যোগ নেওয়ার কথা ছিল বন দপ্তরের।

    সেই পরিকল্পনা মতোই পুরুলিয়ার সিধো কানহো বিরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিভাগ কৃত্রিম ভাবে তৈরি করছে শ্বেতপলাশের চারা। গবেষণাগারে তৈরি এই চারাগুলি বন দপ্তরের সহযোগিতায় জেলার বিভিন্ন জায়গায় লাগানো হবে।

    বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিভাগের প্রধান সুব্রত রাহা জানান, পুরুলিয়ায় যে শ্বেতপলাশ গাছগুলি পাওয়া গিয়েছে, সেগুলি ক্রমে রুগ্ন হয়ে পড়ছে। তাই টিস্যু কালচার বা অঙ্গজ জননের মাধ্যমে শ্বেত পলাশ তৈরি হচ্ছে। বলেন, ‘একটা ছোট ডাল থেকে একশোটা চারা তৈরি করা সম্ভব। আশা করি ছ’মাসের মধ্যে এর চারা তৈরি করে ফেলব।’

    পুঞ্চার রাজনওয়াগড় এলাকায় প্রত্যন্ত একটি জায়গায় এমনই একটি গাছে এ বারও কুঁড়ি এসেছে বলে জানান ওই এলাকার বাসিন্দা লক্ষ্মীকান্ত মাহাতো। জানান, গাছটিকে পাহারা দিয়ে রেখেছেন তাঁরা। অনেকেই এর শিকড় চাইলেও তা দেওয়া হচ্ছে না। গাছের ক্ষতি যাতে না হয়, সে জন্য সচেষ্ট রয়েছেন এলাকার মানুষ।

    পরিবেশপ্রেমী তথা পুরুলিয়া সৈনিক স্কুলের প্রাক্তন বিজ্ঞান শিক্ষক বীরভানু গিরি বলেন, ‘ইন্টারনেটের যুগে শ্বেতপলাশ গাছ কোথায় রয়েছে, তা বেশি দিন গোপন রাখা সম্ভব নয়। তাই এই ধরনের পলাশের চারা তৈরি করে গাছের বংশবৃদ্ধি করাই গাছগুলি রক্ষার উপযুক্ত উপায় হতে পারে।’ পুরুলিয়ার ডিএফও অঞ্জন গুহ জানান, জেলার ১৫টি শ্বেতপলাশের গাছের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রেখেছেন বনকর্মীরা। গাছগুলি রক্ষা করার জন্য স্থানীয় স্তরেও প্রচার চালানো হচ্ছে। বন দপ্তর ছাড়াও পরিবেশপ্রেমীরাও শ্বেতপলাশ রক্ষার বার্তা দিয়ে চলেছেন।

    শ্বেতপলাশের ওষধি গুণ মারাত্মক— এমন ধারণা প্রচলিত থাকায় কার্যত অতি–উৎসাহী মানুষের ‘আক্রমণের’ মুখে পড়ছে গাছগুলি। সাদা পলাশের গাছ দেখতে পেলেই তার ডাল ভেঙে নিয়ে যেতেও কসুর করেন না অনেকেই। অনেকের ধারণা, এই গাছের আঠা নাকি বন্ধ্যত্ব দূর করতে পারে। গ্রামীণ এলাকার গুনিনদের মধ্যেও এই গাছের চাহিদা রয়েছে।

    অধ্যাপক সুব্রত রাহার মতে, শ্বেতপলাশের অস্তিত্ব সঙ্কটের কারণ মানুষের মধ্যে এর বিপুল চাহিদা। তাই এই গাছকে সাধারণ মানুষের হাতের নাগালের বাইরেই রাখতে চান তাঁরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিভাগেরই গবেষক সৌরভ গড়াই বলেন, ‘শ্বেতপলাশ নিয়ে গবেষণায় দেখা গেছে, এই ধরনের পলাশে ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধ ক্ষমতা খুব বেশি বলে একে ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।’ বন্ধ্যত্ব দূর করার প্রসঙ্গে সুব্রত জানান, এর কো‍নও বৈজ্ঞানিক ভিত্তি পাওয়া যায়নি। প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সঙ্গে যৌথ ভাবে এ নিয়ে ইঁদুরের উপরে পরীক্ষা চালানো হচ্ছে।

  • Link to this news (এই সময়)