এই সময়: কলকাতা পুরসভার হিন্দি মিডিয়াম স্কুলে বিশ্বকর্মা পুজোর ছুটি বাতিলের নির্দেশকে ঘিরে সরগরম রাজ্য–রাজনীতি। বিষয়টি নজরে আসা মাত্রই পুর কর্তৃপক্ষ তড়িঘড়ি সেই নির্দেশ বাতিল করার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট অফিসারকে সাসপেন্ড করলেও বিতর্ক কিছুতেই থামছে না।
এই ইস্যুতে তৃণমূলকে কাঠগড়ায় তুলে রোজ আক্রমণ শানাচ্ছেন বিজেপি নেতারা। বিরোধীদের সেই সমালোচনার জবাব দিতে এ বার মুখ খুললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে তৃণমূলের কর্মিসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে গোটা ঘটনার জন্য তিনি পুর আধিকারিককেই দায়ী করেছেন।
মুখ্যমন্ত্রী সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, বিশ্বকর্মা পুজোয় কোনও ছুটি বাতিল করা হয়নি। এই অভিযোগ পুরোপুরি মিথ্যা। তাঁর কথায়, ‘বিশ্বকর্মা পুজোর দিন হাফ ছুটি হয় সরকারি ক্যালেন্ডারে। কিন্তু স্কুলগুলি ছুটি থাকে। কোনও একজন অফিসার কাল একটা বদমাইশি করেছিল। সে সাসপেন্ড হয়ে গিয়েছে কর্পোরেশন থেকে।’
পুরসভা সূত্রের খবর, বুধবার কলকাতা পুরসভার যে আধিকারিক পুরসভার স্কুলে বিশ্বকর্মার পুজোর ছুটি বাতিলের নোটিস ইস্যু করেছিলে, তাঁকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। তার আগে শোকজ় করা হয়। তিন দিনের মধ্যে জবাব দিতেও বলা হয়। কিন্তু ঘটনার গুরুত্ব উপলব্ধি করে শোকজ়ের জবাব আসার আগেই তাঁকে সাসপেন্ড করার সিদ্ধান্ত নেন পুর কর্তৃপক্ষ।
এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে আর না হয় তার জন্য এদিন পুর কমিশনার ধবল জৈন সমস্ত বিভাগীয় প্রধানদের সতর্ক করে দিয়েছেন। এই মর্মে একটি নির্দেশিকাও জারি করেছেন তিনি। তাতে বলা হয়েছে, নীতিগত সিদ্ধান্ত বা রাজ্য সরকারের বিষয় জড়িত থাকলে, শীর্ষ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া পুরসভার কোনও আধিকারিক নিজে থেকে আর কোনও নোটিস ইস্যু করতে পারবেন না।
বুধবার নন্দীগ্রামে শিবরাত্রির অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়ে বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী মন্তব্য করেছিলেন, ‘ইসলামিক দেশেও সবে বরাতে ১ দিন ছুটি দেয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেখানে ২ দিন ছুটি দেন কেন? ইদে ২ দিন কেন, ৪ দিন ছুটি দিন না। বিশ্বকর্মার ছুটিটাকে বন্ধ করে কেন? হিন্দুদের ওপর আঘাত করে কেন? এতে কী মজা পান আপনারা?’ সেই অভিযোগ খারিজ করে দিয়ে মমতা এদিন বলেন, ‘বিজেপি নেতারা মিথ্যা কথা বলছেন।’
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, কলকাতা পুরসভার শিক্ষা বিভাগের চিফ ম্যানেজার সিদ্ধার্থশঙ্কর ধাঁড়া একটি নোটিস ইস্যু করেন। যেখানে বলা হয়, কলকাতা পুরসভার হিন্দি মাধ্যম স্কুলগুলিতে ইদে ২ দিন (৩১ শে মার্চ ও পয়লা এপ্রিল) ছুটি থাকবে। সে কারণে বিশ্বকর্মা পুজোর ছুটি বাতিল হবে। সেই ছুটি কেটে ইদের ছুটি আরও একদিন বাড়ানো হয়েছে বলেও নোটিসে জানানো হয়। এই নির্দেশিকাকে ঘিরে তোলপাড় হয়ে ওঠে রাজ্য–রাজনীতি।
মেয়র ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছেন, ওই নোটিসের বিষয়ে তিনি কিছুই জানতেন না। পুরসভার কোনও আধিকারিক তাঁকে এ বিষয়ে কিছুই জানাননি। বিষয়টি জানার পরে ওই অফিসারের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নিতে বলেছেন। এর পিছনে বিরোধীদের চক্রান্ত থাকতে পারে বলেও ইঙ্গিত দিয়েছেন মেয়র।