একটি বড় নির্মাণ গোষ্ঠীর নির্মাণস্থলে কাজ করার সময়ে মাটি ধসে মৃত্যু হল এক শ্রমিকের। রাজারহাটের লাঙলপোতা এলাকায় বৃহস্পতিবার দুপুরের ওই দুর্ঘটনায় আহত হন আরও এক শ্রমিক। নির্মাণস্থলে গর্ত খোঁড়ার কাজ চলাকালীন আচমকা এক জায়গায় মাটি ধসে যায়। তাতে চাপা পড়েন দু’জন। ঘণ্টা দুয়েকের চেষ্টায় তাঁদের উদ্ধার করা গেলেও মৃত্যু হয় এক শ্রমিকের। বিধাননগর কমিশনারেট জানিয়েছে, মৃতের নাম অভিজিৎ মণ্ডল (৪২)।
আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি শ্যাম মণ্ডল (৩৬) নামে আর এক শ্রমিক। অভিজিৎ এবং শ্যাম, দু’জনেই ভাঙড়ের বাসিন্দা। পুলিশ দাবি করেছে, দুর্ঘটনাগ্রস্তদের পরিবারের তরফে কোনও লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। তাই একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করা হয়েছে। অভিজিৎ এবং শ্যাম ঠিকা শ্রমিক হিসাবে কুয়োর বেড় লাগানোর কাজ করতেন। অভিজিতের আত্মীয়েরা জানান, বিভিন্ন ঠিকাদারের অধীনে তাঁরা কাজ করতেন। এখানে আগেও এক বার কাজ করেছিলেন অভিজিৎ। দরিদ্র পরিবারের একমাত্র রোজগেরে সদস্য ছিলেন তিনি। আত্মীয় গৌতম সর্দার বলেন, ‘‘ওই সব জায়গায় বালি-মাটি ফেলে নিচু জমিকে উঁচু করে নির্মাণ হয়। এ দিন অভিজিতেরা কুয়োয় বেড় লাগাচ্ছিলেন। আচমকাই মাটি ধসে দু’জন চাপা পড়ে যান।’’
স্থানীয়দের দাবি, ওই তল্লাটে বিভিন্ন নির্মাণ চলছে জলাজমির উপরে। ফলে রাস্তা থেকে ওই সব নির্মাণস্থলের জমি অনেকটাই নিচু। মাটি-বালি ফেলে জমি উঁচু করে নির্মাণ চলছে। তাই ওই জায়গায় মাটি দুর্বল বলেই অভিযোগ স্থানীয়দের।
প্রায় ঘণ্টা দেড়েকের চেষ্টায় জেসিবি দিয়ে মাটি খুঁড়ে দু’জনকে মাটির নীচ থেকে উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকাজের জন্যে দমকলের কর্মীরাও পৌঁছন। দুই শ্রমিককে উদ্ধার করে স্থানীয় রেকজোয়ানি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে শ্যামকে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হলেও অভিজিৎকে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
রাজারহাট মেন রোডের পাশে লাঙলপোতায় ওই আবাসন সংস্থাটি দীর্ঘদিন ধরে বহুতল নির্মাণ করছে। কয়েক হাজার শ্রমিক ওখানে কাজ করছেন। তাঁদের জন্য অস্থায়ী বাসস্থানের পাশেই একটি শৌচাগার নির্মাণ চলছিল। এ কাজের জন্য মাটি খুঁড়ে পাতকুয়ো তৈরি হচ্ছিল। এ দিন সকাল থেকেই চার জন শ্রমিক সেই কাজ করছিলেন। একটি পাতকুয়ো নির্মাণে ব্যস্ত ছিলেন অভিজিৎ এবং শ্যাম। অভিজিৎ প্রায় ৩০ ফুট নীচে মাটি কাটছিলেন আর শ্যাম উপরে দাঁড়িয়ে বালতি করে সেই মাটি তুলছিলেন। কাজ চলাকালীন হঠাৎ ধস নামে। মাটি ধসে পাতকুয়োয় পড়লে অভিজিৎ চাপা পড়েন। শ্যামও ওই মাটির টানে কুয়োয় গিয়ে পড়েন। শ্যাম উপরের দিকে থাকায় অন্য শ্রমিকেরা তাঁকে দ্রুত উদ্ধার করেন। তবে অভিজিৎকে উদ্ধার করতে গিয়ে বেশ বেগ পেতে হয়।
নির্মাণ সংস্থাটির দাবি, অতীতে তাদের কোনও নির্মাণস্থলে এমন ঘটেনি। মাটিতে কেন ধস নামল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সংস্থার এক আধিকারিক জানান, পুলিশ ও দমকলকে খবর দিলে দ্রুত তারা উদ্ধারকাজে নামে। জেসিবি দিয়ে মাটি খোঁড়ানো শুরু হয়। দু’জনকে উদ্ধার করে অক্সিজেন দিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। মৃতের পরিবারকে কী ভাবে ক্ষতিপূরণ দেওয়া যায়, তা নিয়ে তারা আলোচনা করছে বলেও জানিয়েছে ওই নির্মাণ সংস্থা।