পানাগড় কাণ্ডে নয়া মোড়। সুতন্দ্রা চট্টোপাধ্যায়ের গাড়ি চালকের দাবি, ইভটিজিংয়ের কোনও ঘটনা ঘটেনি। শুধু তাই নয়, চালক রাজদেও শর্মার দাবি, সুতন্দ্রাই বলেছিলেন গাড়ির স্পিড বাড়াতে। রবিবার রাতে বর্ধমানের পানাগড়ে গাড়ি উল্টে মৃত্যু হয় নৃত্যশিল্পী সুতন্দ্রা চট্টোপাধ্যায়ের। ঘটনায় দুই গাড়ির রেষারেষির সঙ্গে সঙ্গে উঠেছিল ইভটিজিংয়ের অভিযোগও।
রবিবার রাতে ১৯ নম্বর জাতীয় সড়কে ঠিক কী হয়েছিল?
ঘটনার পাঁচ দিন পর চাঞ্চল্যকর বয়ান চালক রাজদেও শর্মার। তাঁর দাবি, কোনও ইভটিজিং হতে তিনি দেখেননি। রাজদেও শর্মার কথায়, ‘ইভটিজিংয়ের অভিযোগ ড্রাইভারের নয়। আমি সেদিনও বলিনি, আজও বলছি না। পিছনে যাঁরা ছিলেন, তাঁরা হয়তো ওই অভিযোগ করেছিলেন। ওঁদের নজরে হয়তো কিছু পড়েছিল। কিন্তু আমি কিছু দেখিনি। ওদের ড্রাইভার বার বার আমাদের দিকে তাকাচ্ছিল। তবে আমাদের গাড়ির কাচ তোলা ছিল। ওদেরও গাড়ির কাচ তোলা ছিল। কোনও গালাগাল শোনা যায়নি। যেটা আমি শুনিনি তা কেন বলব!’ চালকের এই বয়ানে ঘটনায় এল চাঞ্চল্যকর মোড়। যদিও পুলিশ প্রথমদিনই জানিয়েছিল, কটূক্তি বা ইভটিজিংয়ের কোনও অভিযোগ তাঁরা পায়নি।
এখানেই শেষ নয়, তিয়োগোর চালক রাজদেও শর্মার দাবি, মৃতা সুতন্দ্রার কথাতেই তিনি গাড়ির গতিবেগ বাড়িয়েছিলেন এবং বাবলু যাদবের গাড়িকে ধাওয়া করেছিলেন। রাজদেও শর্মার কথায়, ‘সে দিন পেট্রোল পাম্প থেকে বেরোবার পরই সাদা এসইউভি সমানে আমাদের গাড়ির সামনে আগু-পিছু করছিল। এক সময় মেন রোডের উপর তিয়োগো গাড়িটাকে ডানদিকে চেপে দেয় সাদা এসসিউভি গাড়ি। তাতে গাড়িটির ডান দিকে ডিভাইডারে ঘষে যায়। এর পরই সুতন্দ্রা সাদা গাড়িটাকে থামানোর কথা বলেন। ওরা না থামলে গাড়িটাকে ধাওয়া করতে বলেন সুতন্দ্রা ম্যাডাম।’ পুলিশের দেওয়া সিসিটিভি ফুটেজেও দেখা গিয়েছিল রাইস মিলের কাছে সাদা এসইউভিকে ধাওয়া করছিল সুতন্দ্রাদের তিয়াগো।
চালকের দাবি, মৃতার কথাতেই তিনি গাড়ির গতিবেগ বাড়িয়েছিলেন। কিন্তু কেন আচমকা গাড়ির গতিবেগ বাড়াতে বলেছিলেন সুতন্দ্রা? প্রশ্ন করতেই রাজদেও বলেন, ‘আসলে হাইওয়েতে কেন অকারণে ওই গাড়িটি ধাক্কা দিচ্ছিল তা দেখতেই এসইউভিকে ধাওয়া করতে বলেছিলেন ম্যাডাম। ওঁর কথা শুনেই আমি ধাওয়া করেছিলাম। মোট দু’বার এসইউভি আমাদের ধাক্কা দেয়। থামাতে গেলে বেরিয়ে যায়। গাড়ির গতি ৯০ থেকে ১০০ ছিল। এত জোরে গাড়ি চালাতে পিছন থেকে মিন্টু মণ্ডল বারণ করেছিল। ও বলাতে আমি গাড়ির গতি আস্তে আস্তে কমাই। কারণ, অত জোরে চলা গাড়ি আচমকা স্পিড কমালে ওখানেই উল্টে যেত।’
গাড়ি উল্টে যাওয়ার কারণ হিসেবে চালকের যুক্তি, সবাইকে বাঁচাতে ডানদিকের রাস্তায় ঢোকাতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে যায়। ওই পদক্ষেপ না নিলে গাড়ির পাঁচ জনেই মারা যেতেন বলে দাবি চালকের।
রবিবার পানাগড়ের ১৯ নম্বর জাতীয় সড়কে গাড়ি উল্টে মৃত্যু হয় চন্দননগরের তরুণী সুতন্দ্রা চট্টোপাধ্যায়ের। দুর্ঘটনার পর অভিযোগ ওঠে অপর গাড়িটি থেকে কটূক্তি ও ইভটিজিং করা হচ্ছিল। অভিযোগ ওঠে, সুতন্দ্রাদের গাড়িকে তাড়া করেছিল বাবলুর গাড়ি। ওই গাড়িতে বাবলুর কয়েকজন সঙ্গীও ছিল বলে দাবি করা হয়। সুতন্দ্রাদের চালকের অভিযোগ, রেষারেষি ও ধাক্কার কারণেই তাঁদের গাড়ি উল্টে যায়। মাথায় বেকায়দায় আঘাত লেগে মারা যান সুতন্দ্রা।