দেড় বছর ধরে গাড়ি চালানোর পর ব্রেক ফেল, ডিলারকে ‘ক্রিমিনাল’ তকমা! আদালত বলল…
হিন্দুস্তান টাইমস | ০১ মার্চ ২০২৫
নামী সংস্থার দামি গাড়ি কিনেছিল একটি সংস্থা। সেই গাড়ি কেনার প্রায় দেড় বছর পর এবং সেই গাড়ি প্রথমবারের জন্য সার্ভিসিংয়ে যাওয়ার প্রায় ছ'মাস পর বিগড়ে গিয়েছিল ব্রেকিং সিস্টেম। আর, তার জন্য সংশ্লিষ্ট কার ডিলারের বিরুদ্ধে 'ফৌজদারি ধারা'য় রুজু করা হয় মামলা! গত বুধবার সেই মামলা খারিজ করে দিল কলকাতা হাইকোর্ট।
'টাইমস অফ ইন্ডিয়া'-এ প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে - সংশ্লিষ্ট সংস্থার ওই গাড়িটির ব্রেক ফেল হওয়ার ঘটনাটি ঘটেছিল 'ওয়্য়ারেন্টি পিরিয়ড'-এর মধ্যেই। আর সেই কারণেই এই মামলা ঠুঁকে গাড়ির পুরো দাম ফেরত চেয়েছিল গাড়ির মালিক পক্ষ ওই সংস্থা।
তথ্য বলছে, যে গাড়ি নিয়ে এত ঘটনার ঘনঘটনা, সেটি ক্রয়মূল্য ছিল - ৫০ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা। মালিক পক্ষের বক্তব্য ছিল, যেহেতু ওয়্যারেন্টি পিরিয়ডের মধ্যে গাড়ির ব্রেক ফেল করেছে, তাই তাদেরকে গাড়ির পুরো দাম ফেরত দিতে হবে। এবং একইসঙ্গে, এই ঘটনাকে 'ক্রিমিনাল অফেন্স' হিসাবেও দাবি করেছিল তারা।
কিন্তু, আদালত এই যুক্তি মানেনি। কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অজয় কুমার গুপ্ত এই মামলার পর্যবেক্ষণে বলেন, এক্ষেত্রে যদি কোনও ত্রুটি ঘটেও থাকত, তাহলেও তা কখনই ফৌজদারি দণ্ড বিধির অধীনস্ত হতে পারে না। বরং, তাকে দেওয়ানি দণ্ড বিধির অধীনে আনা যায়। কিন্তু, এখানে তেমন কোনও ত্রুটি হয়নি বলেই মনে করেছে আদালত।
বিচারপতি জানান, ১৯৮৬ সালের ক্রেতা সুরক্ষা আইনের অধীনে ত্রুটিপূর্ণ পণ্য সরবরাহের মামলাগুলি রুজু করা যাতে পারে। এখানে ত্রুটি বা গলদ বলতে বিচারপতি নির্দিষ্টভাবে ত্রুটিপূর্ণ পণ্য সরবরাহ, তার জন্য খরচ করা অর্থ ফেরত এবং এই সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।
এই ঘটনায় মামলাকারী সংস্থা - অর্থাৎ - যারা ওই গাড়িটি কিনেছিল, তাদের বক্তব্য ছিল, গাড়ির ডিলার ঝাঁ-চকচকে বিজ্ঞাপন দেখিয়ে তাদের বিভ্রান্ত করেছিলেন। সেই বিজ্ঞাপনে দাবি করা হয়েছিল - এই গাড়ি জার্মান প্রযুক্তিতে তৈরি এবং এর নিরাপত্তা ও সুরক্ষা ব্যবস্থাপনা একেবারে বিশ্বমানের।
সংশ্লিষ্ট সংস্থার দাবি, এই বিজ্ঞাপন দেখেই তারা প্রাভাবিত হয়েছিল এবং ওই গাড়িটি কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। তাদের আরও যুক্তি ছিল, ত্রুটিপূর্ণ ব্রেক-সহ একটি ত্রুটিপূর্ণ গাড়ি তাদের বিক্রি করা হয়েছিল। এর ফলে কোনও প্রাণঘাতী দুর্ঘটনাও ঘটতে পারত।
কিন্তু, এখানেই হাইকোর্ট ক্রেতা সংস্থার সঙ্গে সহমত হয়নি। আদালতের পর্যবেক্ষণ হল, ওই গাড়িটি কেনার পর থেকে টানা প্রায় ১ বছর ৩ মাস ধরে লাগাতার সেটি ব্যবহার করা হয়েছে এবং কোথাও কোনও সমস্যা ধরা পড়েনি। যে কোনও যন্ত্র এত দিন নির্বিঘ্নে ব্যবহার করার পর যদি সেটিতে কোনও সমস্যা ধরা পড়ে, তাহলে তাকে ত্রুটিপূর্ণ পণ্য সরবরাহ হিসাবে গণ্য করা যায় না। আর, এই ঘটনা তো কোনও মতেই ফৌজদারি ধারার অধীনে আসতে পারে না।