• ‘মানুষের পাশে থাকতে চাই’, সেবাই ধর্ম বাঁকুড়ার ‘এক টাকার ডাক্তার’-এর
    এই সময় | ০১ মার্চ ২০২৫
  • বোলপুরের হরগৌরীতলার সুশোভন বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘এক টাকার চিকিৎসক’ বলে চিনতেন সকলে। ২০২১ সালে পদ্মশ্রী পুরস্কার পেয়েছিলেন। প্রয়াত হন বছর দুয়েক আগে। সেরকমই অর্থ উপার্জনের বাসনাকে গৌণ করে মানুষের সেবায় জীবনকে উৎসর্গ করার আরও একটি উদাহরণের খোঁজ মিলল বাঁকুড়ায়।

    বাঁকুড়ার বেলিয়াতোড়ের বাসিন্দা চিকিৎসক প্রিয়তোষ ধল্ল। দীর্ঘদিন বাঁকুড়া জেলা পরিষদের মেডিক্যাল অফিসার পদে কর্মরত থাকার পর অবসর নিয়েছেন। এখন বেলিয়াতোড়ের বাড়িতেই মানুষকে চিকিৎসা পরিষেবা দেন। দক্ষিণা নেন মাত্র এক টাকা। এলাকায় ইতিমধ্যেই তিনি ‘এক টাকার ডাক্তার’ নামে জনপ্রিয়তা লাভ করতে শুরু করেছেন।

    ডাক্তার পি ধল্ল বলেন, ‘আমার এমবিবিএস ফাইনাল পরীক্ষার আগেই বাবাকে হারাই। বাবার দেখানো পথেই মানুষের জন্য কাজ করে যেতে চাই। তবে মানুষের চিকিৎসা করার আগে তাঁর মন বোঝাটা ভীষণ প্রয়োজন। সেই কারণেই সাইকোলোজি নিয়ে পড়াশোনা করেছি। তবে দুঃস্থ, খেটে-খাওয়া মানুষের পাশে থাকতেই আমি এক টাকা ফি নিয়ে থাকি।’ 

    তাঁর চেম্বারের রোজই উপচে পড়ে রোগীদের ভিড়। তাঁর চিকিৎসার তারিফ তো করছেন সকলেই। একইসঙ্গে ‘ডাক্তারবাবুর’ অমায়িক ব্যবহারও মুগ্ধ করে সকলকে। দুর্গাপুর থেকে আসা নীপা হালদার বলেন, ‘বর্তমান সময়ে অধিকাংশ চিকিৎসকই ব্যবসায়িক মনোবৃত্তি নিয়ে চলেন। সেই জায়গায় ব্যতিক্রমী ভূমিকা পালন করেন এই চিকিৎসক। সাধারণ মানুষের কথা ভেবে অন্যান্য চিকিৎসকরাও এই পথে হাঁটলে অনেকেরই উপকার হয়।’ বাবাকে নিয়ে ডাক্তারবাবুর কাছে এসেছেন মৌসুমী রাজগুরু। তিনি বলেন, ‘বাবা ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। হাসপাতালে ভর্তি করার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। এখানে এসে ডাক্তারবাবুকে দেখানোর পর অনেকটাই সুস্থ আছেন। উনি যথেষ্ট মানবিক।’

    রোজগার করা লক্ষ্য নয়। মানুষের কষ্ট লাঘব করা, মানুষকে সুস্থ রাখাটাই লক্ষ্য বলে জানালেন ডাক্তারবাবু। যতদিন বাঁচবেন, শরীরে সামর্থ্য থাকবে, ততদিন এই পরিষেবা দিয়ে যাবেন। বাঁকুড়া জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ অর্চিতা বিদ বলেন, ‘ওঁকে দেখার সুযোগ না হলেও ওঁর কথা শুনেছি। মানুষের কাছে বাড়তি পাওনা। অবসর সময়টা মানুষের সেবায় কাটাবেন, সেটাই করে চলেছেন।’

  • Link to this news (এই সময়)