নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: অবশেষে পুলিসি জেরার মুখে ভেঙে পড়ল প্রসূন দে। অবশেষে বয়ান মিলতে শুরু করল দাদা প্রণয়ের সঙ্গে। আর তাই, অবশেষে ট্যাংরা হত্যাকাণ্ডে জোড়া লাগতে শুরু করল একের পর এক সূত্র। কারণ, শুক্রবার দে পরিবারের ছোটভাই প্রসূনেরই স্বীকারোক্তি, তিনটি খুনই করেছে সে।
বারবার বয়ান বদল। অসঙ্গতি। গত ১০ দিনে এটাই ছিল ট্যাংরা কাণ্ডের রোজনামচা। প্রণয় বারবার বলেছে, সে নরম প্রকৃতির। খুন করেছে ভাই প্রসূনই। কিন্তু ছোটভাই কখনও দাবি করেছে, দুই বউ নিজেরাই হাতের শিরা কেটেছে। কখনও বলেছে, কীভাবে হয়েছে জানি না। এই প্রথম সরাসরি সে ভেঙে পড়ল জেরায়। জানাল, প্রথমে স্ত্রী রোমির হাতের শিরা কেটেছে সে। তারপর সুদেষ্ণার। তবে এখানেও কিন্তু আগের সুর সামান্য বজায় রেখেছে প্রসূন। বলেছে, রোমি ও সুদেষ্ণা প্রথমে নিজেরা চেষ্টা করেছিল। পারেনি বলেই সে হাত লাগায়। প্রশ্ন অবশ্য থেকেই যাচ্ছে। রোমির ঠোঁট, ডানদিকের কাঁধ এবং তলপেটে আঘাতের চিহ্ন ছিল। প্রসূনের দাবি, আওয়াজ যাতে না করে, তাই মুখে বালিশ চাপা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু প্রতিরোধ না করলে ঠোঁটে-কাঁধে কালশিটে পড়ত না! অর্থাৎ একটা বিষয় পরিষ্কার, প্রাণে বাঁচতে রোমি বাধা দিয়েছিলেন। আত্মহত্যায় রাজি থাকলে তিনি কেন বাধা দিলেন?
প্রসূন এদিন জানিয়েছে, ‘দাদাই বলেছিল, আমি পারব না। তুই রোমি ও সুদেষ্ণাকে মুক্তি দিয়ে দে। আমি সেটাই করেছি। দাদা সেই দৃশ্য দেখতে পারবে না বলে উপরে চলে যায়। আমি প্রথমে রোমির হাতের শিরা কেটে ফেলি। তারপর বউদির। তারপর ভাইপোর। উপরে দাদার ঘরে গিয়ে বলি, কাজ শেষ। তখন দাদা বলে, এবার চল আমাদের পালা। তখনও বুঝিনি ভাইপো বেঁচে আছে। হাতের শিরা কাটতে যাওয়ার সময় চিৎকার করছিল বলে বাধা দিয়েছিল দাদা। বলেছিল ছেড়ে দে। তখনই মুখে বালিশ চাপা দিয়ে শেষ চেষ্টা করেছিলাম। বুঝিনি, ও মরার ভান করে পড়ে আছে।’
প্রণয়ের নাবালক ছেলে উপরে চলে আসা মাত্রই বদলে যায় ঘটনাক্রম। বয়ান অনুযায়ী, তখন তারা ভাবতে শুরু করে, ওর কী হবে। নাবালক কিন্তু বলছে, কাকা হাতের শিরা কাটতে যাওয়ার সময় তেমন কোনও অনুভূতি হয়নি তার। তাহলে কি ওষুধ মেশানো পায়েস খাওয়ার কারণে আচ্ছন্ন ছিল সে? তাই বোঝেনি। নাবালকের বয়ান, ‘আমি, বাবা, আর মা একসঙ্গেই ঘুমোই। কাকিমা-কাকা একঘরে। দিদির ঘর আলাদা। তখন সবে ভোর হচ্ছে। বাবা তুলে দিল আমাকে। বলল, মায়ের শরীর খারাপ। উঠতে পারছে না। একটু একা শুতে দে। তুই দিদির ঘরে গিয়ে ঘুমিয়ে থাক। আমি উপরে যাচ্ছি। প্রথমে রাজি হইনি। কিন্তু বাবা জোর করে, বকেঝকে আমাকে পাঠিয়ে দেয়। আমিও দিদির ঘরে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ি। বুঝতেই পারিনি দিদি আর নেই।’ এরপরই প্রসূন ঘরে ঢোকে। আগে দেখে নেয় মেয়ের শরীরে প্রাণ আছে কি না। তারপর কাটতে যায় ভাইপোর হাতের শিরা। ঘুম ভেঙে চিৎকার করে ওঠে সে। বাধা দেয়। ধস্তাধস্তিও হয়। প্রণয়ের কথা মতো তখন ভাইপোর মুখে বালিশ চাপা দেয় প্রসূন। কিন্তু সেই চেষ্টাও সফল হয়নি। এমনকী সেই কিশোর হাসপাতালেও ভর্তি হতে চায়নি। তখন আর উপায় না দেখে তিনজন বেরিয়ে পড়ে। আত্মহত্যা করার উদ্দেশ্যে।